Search Results
91 results found with an empty search
- বুকফেরি | Manikarnika.Pub
Home Our Titles পড়ার পাড়া(Blogs) Manikarnika Book Shop Policies Terms & Conditions Privacy Policy Shipping Policy Refund Policy Contact us About Us BOOKFERRY YOUR BOOK STORE দ্বীপ প্রকাশন আশাবরী প্রকাশনী আনন্দ পাবলিশার্স বুক ফার্ম বৈভাষিক বইবন্ধু পাবলিকেশনস নির্বাচিত কিছু বই এখানে রাখা হয়েছে। আপনার পছন্দের অন্য বইয়ের খোঁজ নিতে যোগাযোগ করুন নীচে দেওয়া নাম্বারে। যোগাযোগ Call / WhatsApp : 810 0261617 your.bookferry@gmail.com
- এক পুঁচকে কালো মাছের গল্প । সৈকত | Manikarnika.Pub
এক পুঁচকে কালো মাছের গল্প মূল গল্প : সামাদ বেহরাঙ্গী অনুবাদ : সৈকত ভট্টাচার্য Our Store Amazon ‘এক পুঁচকে কালো মাছের গল্প’ – বইটি সামাদ বেহরাঙ্গির ‘দ্য লিটিল ব্ল্যাক ফিশ’-এর অনুবাদ। এই অনুবাদটি করেছেন লেখক সৈকত ভট্টাচার্য্য। মূল বইটি একটি রাজনৈতিক রূপক। বইটি দীর্ঘদিন ইরানে নিষিদ্ধ ছিল। একটি বৃদ্ধ মাছ, তার সমস্ত সন্তান, নাতি-নাতনিদের গল্প শোনাচ্ছে। স্থানীয় স্রোতের নিরাপত্তা ছেড়ে কিভাবে একটি কালো মাছ নিজের উদ্যমে বিশ্বের বিরাট স্রোতের মধ্যে এসে পৌঁছয়, তার গল্প। একটি জলপ্রপাতের নিচ থেকে নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর সমুদ্রের দিকে যাত্রা করে কালো মাছ। সেই পথে দেখা হয় টিকটিকি এবং ভয়ংকর পেলিকানসহ বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় চরিত্রের সঙ্গে। প্রখর বুদ্ধি এবং সাহস থাকলে যে অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করা যায়, সেই গল্পই শুনিয়েছেন বৃদ্ধ মাছ। কালো মাছটি নিজেই সমস্ত মাছেদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল। মূল্য : ₹ ২০০ শিপিং : ₹ 0 প্রচ্ছদ : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় মণিকর্ণিকা প্রকাশনী Call & WhatsApp : 8240333741 Our Store Amazon ❛ বিশাল সমুদ্রের একদম তলায় ছিল এক খুনখুনে বুড়ি মাছ। বারো হাজার ছানাপোনা, নাতি-নাতনিদের নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। শীতের বেজায় লম্বা রাতগুলোতে যখন অন্ধকারের কালো চাদর ঢেকে রাখত চারদিক, বুড়িকে ঘিরে সবাই মিলে বসত গল্প শুনতে। এমন এক রাতে বুড়ি গল্প বলছিল: অনেক অনেক দিন আগের কথা। একটা ছিল মস্ত বড়ো পাহাড়। আর সেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছিল একটা ছোট্ট পুকুর। পুকুরের জলে থাকত একটা পুঁচকে কালো মাছ আর তার মা। শ্যাওলাধরা একটা কালো বড়ো পাথরের তলায় ছিল মা-মেয়ের ঘর। পুঁচকে মাছটা ওই পাথরের তলায় শুয়ে অপেক্ষা করে থাকত কবে তাদের ঘরে এক চিলতে চাঁদের আলো এসে পড়বে। সকাল থেকে সন্ধে অবধি মায়ের পিছন পিছন এদিক ওদিক সাঁতার কেটে দিন কাটত তার। মাঝে মাঝে আশপাশের অন্য মাছের দলের সঙ্গ জুটে যেত। সবাই মিলে হইহই করে পাথরের ফাঁক ফোকর দিয়ে চলত সুড়ুৎ সুড়ুৎ সাঁতার। পুঁচকে কালো মাছটা ওর মায়ের একমাত্র মেয়ে। আরও প্রায় দশ হাজার ভাইবোনের সঙ্গে ডিম ফুটে জন্মেছিল সে। কিন্তু ও ছাড়া বাকি আর কেউ বাঁচেইনি। কিছুদিন ধরেই পুঁচকে মাছ বেশ চুপচাপ। গম্ভীর হয়ে মায়ের পিছনে আস্তে আস্তে ঘুর ঘুর করে বটে, কিন্তু অন্য বন্ধুবান্ধবদের বিশেষ পাত্তা-টাত্তা দেয় না। তাদের সঙ্গে খেলছেও না আজকাল। মা ভাবল মেয়ের বুঝি শরীরটা ভালো নেই। ঠিক হয়ে যাবে শিগগিরই। কিন্তু আসলে যে সমস্যাটা অন্য জায়গায় সেটা তার মা ভাবতেও পারেনি। একদিন সক্কালবেলা যখন সূয্যিমামারও ঘুম ভাঙেনি, ছোট্ট মাছ ঘুম থেকে উঠে মাকে ঠেলা দিয়ে ডেকে বলল, মা, শুনছ? তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। মায়ের তখনও পুরো ঘুম ভাঙেনি। ঘুম জড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করল, কী আবার কথা? এই সক্কাল সক্কাল? তার চেয়ে বরং চল আমরা এক পাক সাঁতার কেটে আসি। না, মা। আমি সাঁতার কাটতে যাব না। আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। চলে যাচ্ছিস? হ্যাঁ। আমায় যেতেই হবে। কোথায় যাবি তুই? এই সাত সকালে? এই পুকুর থেকে বেরিয়ে জলের ধারাটা বয়ে কোথায় যায় আমি দেখতে যাব। জানো মা, আমি ভাবার চেষ্টা করছিলাম যে এই এত জল সব যায় কোথায়? ভেবে ভেবে সারারাত ঘুমাইনি। কিন্তু কিছুই ভেবে পেলাম না। তাই আমি বেরিয়ে পড়ব ঠিক করেছি—এই পুকুরের জল বের হয়ে কোথায় যায়, সেটা দেখতে চাই। আরও অন্য অন্য জায়গা দেখতে ইচ্ছে করে, বাইরের দুনিয়ায় কী কী হয় সেইসবও জানতে ইচ্ছে করে আমার।... ❜
- ছায়ানট । অপ্রতিম চক্রবর্তী | Manikarnika.Pub
ছায়ানট । অপ্রতিম চক্রবর্তী বিষয় : প্রবন্ধ প্রচ্ছদ : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় মণিকর্ণিকা প্রকাশনী মূল্য : ₹ ২৮০ যোগাযোগ (Call or WhatsApp) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি অংশ এখানে দেওয়া হল। শরৎ হয়ে এলে ফিরে তবু এখনও ছায়ারা বড়ো হয় বিকেল হলে। এমনকি এই মধ্য-শরতেও। বেলেমাটি নয়, গন্ধকের গুঁড়োর ভিতর থেকে, শিকড়ে বীজসূ ভূগোলকের মুগ্ধতা নিয়ে, বহুপর্ণী অ্যাকেসিয়ারা বেড়ে ওঠে উৎসব মাখা এই ছায়াদ্বীপে। এ এক মায়ামৃগকাল যেন— সংকটের অবসান; চারিদিকে আশ্বিনের গোপন আলো ভেসে বেড়ায়— সম্ভ্রান্ত আকাশ যেন অপেক্ষমাণ থাকে। পুরোনো আলোর গন্ধমাখা সময়ের আবডালে লুকিয়ে থাকা অকালবোধনের শীত-ঋতু, ছন্দময় উপস্থিতি আজকের মানুষের কাছে এক ধরনের শ্রুতিবিশোধন। বিগত-শরতের আকাশ তখন শস্যাভ সুসময় হয়ে নেমে আসে আজকের এই নগণ্য নগরীদের বুকে। অনুযাপন-সম উজ্জ্বল তাদের বৈভব, এক-এককেকটি অন্তর্ধান বিন্দু। যা কিছু জীর্ণ, মলিন— যায়, শরৎ আসে। আসে পুজো। পুজো আসে বইয়ের পাতায়, নতুন গল্পের গন্ধ বয়ে। পুজো আসে রোদের রং বদলের খবর নিয়ে। সেই পুজোকেই খুঁজি আমরা যা এনে দেয় হাওয়াবদল। বিজ্ঞাপনের বাদ্যে নয়, সংবাদ মাধ্যমের বিপণনে নয়, এমনকি ক্যালেন্ডারের অঙ্গুলিনির্দেশেও নয়— পুজো আসে তার নিজের সময়ে— কোপাইয়ের তীরে বসে থাকা বাউলের নির্লিপ্ত সুরে কিংবা সোনাঝুরির খোয়াই বাতাসের প্রেমালাপে; হয়তো তখনও গাওয়া হয়নি বর্ষাবিদায়— হয়তো কখনও লক্ষ্মীপুজোর তিথিপার করে বেলাশেষে এসে হাজির হয় দীপাবলির ঠিক আগে। আসলে সাদা মেঘের দম্ভ মেখে আলসে বেড়ালের মতো পাঁচিলের উপর শুয়ে থাকে ওই যে কাঁচা হলুদ রোদ— সেই তো পুজোর বাহন— দোলা, ঘোটক— ওসব একেবারে বানানো গল্প। বরং সঙ্গে বাহন হিসেবে আসে পুজোর ছবি। অবশ্য ঠিক কাকে বলে ‘পুজোর ছবি’¾ তা নিয়ে প্রতর্ক চলতেই পারে। সেভাবে সংজ্ঞা-নির্ধারণ সত্যই কঠিন। উৎসবের শরীরে এক বহুমাত্রা ধরা থাকে সবসময়ই। আদিগন্ত জুড়ে বাঙালির স্মৃতির পর্দায় একের পর এক ছায়াছবি— কোথাও পুজোর প্রত্যক্ষ উদযাপন, কোথাও বা তার উপস্থিতি কাহিনির প্রেক্ষাপট রূপে। সত্যি বলতে পুজোর সঙ্গে পুজোর ছবির অনুষঙ্গ এতই নিবিড় যে বহু বাণিজ্যিক ছবি প্রতি বছর দুর্গোৎসবকেই করে তোলে বিপণনের কেন্দ্রবিন্দু। তবে সেসব ছবি আপাতত সরিয়ে রেখে আমরা ফিরে দেখব এমন কিছু চলচ্চিত্র— পুজো এলেই কোনো না কোনো ভাবে যারা চলতে থাকে মাথার ভিতরে। পুজো বলতে প্রথমেই মনে আসে নীল সাদা আকাশের নীচে সাদা কাশের হিল্লোল, আর চকিতে চোখে ভেসে ওঠে দুটি বালক-বালিকার ছুটে যাওয়া কাশ আর আকাশ মিশে যাওয়া এক সুদূর প্রান্তরে; দিকচক্রবালে অচিনপুরের খবর আনা প্রথম রেল। সেই মুহূর্তই কি হয়ে ওঠে না মহালয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ? ‘পথের পাঁচালি’র অন্য দৃশ্যেও দুর্গাপুজো আছে, তবে সেখানেও রেলগাড়ির মতোই দেবীপ্রতিমাকে আমরা দেখি প্রধানত অপরের চোখের আলোয়—ঢাকিদের বাজনায়, ছোটোদের উন্মুখ ছুটে যাওয়ায়, মা-র প্রশ্রয়মাখা হাসিতে, সবার সঙ্গে প্রসাদ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দে। প্রকৃতপক্ষে পঞ্চভূতই যেন হয়ে ওঠে এক বিপুল দর্পণ যেখানে একাধারে প্রতিবিম্বিত হয় আমাদের সকলের অমল শৈশব, পুজোমাখা শারদ আলোয়। এভাবেই সত্যজিতের অন্যান্য ছবিতেও পুজো আসে অন্য চরিত্রে ব্যাপ্ত হয়ে। ফলত ‘নেই পুজো’ও হয়ে ওঠে ‘আছে পুজো’র ছবি। সেই যখন ‘সোনার কেল্লা’য় হাওড়া ষ্টেশন থেকে ছেড়ে যাছে ট্রেন, ফেলুদা আর তোপসের উজ্জ্বল চোখের তারায় যাত্রা শুরুর খুশি, তখন, ঠিক তখনই বেজে ওঠা বিখ্যাত ফেলুদা থিম মনের মধ্যে হয়ে ওঠে না কি পুজো শুরুর ঢাক-বাদ্যি? কিংবা ‘আগন্তুক’ ছবিটির কথা যদি ভাবি— পুজোর কোনো দৃশ্য সেখানে নেই, কিন্তু উল্লেখ আছে। আর সেই পুজো-আবহে ‘অচেনা’ আগন্তুকের আসা ও তাঁর ‘চেনা’ অতিথি রূপে ফিরে যাওয়া— একেও কি এক সাবেকি অর্থে করে তোলে না পুজোর ছবি? রূপসাগরে ডুব দিয়ে অরূপরতনের খোঁজে ফেরা বোহেমিয়ান ‘সিনেফিল’ মন, ‘সভ্য’-ও-‘অসভ্য’-র দ্বন্দ্বের মাঝে, এক পরাবাস্তব বাইসনের তিতীর্ষু, পিঙ্গল ও প্রাগৈতিহাসিক চিত্রকল্পকে আবিষ্কার করে কলকাতা নামক এক উপদ্বীপের ম্যারাপ বাঁধা পুজো-প্রস্তুতির প্রথাগত প্রেক্ষাপটে— ঠিক তখনই নেপথ্যে বেজে ওঠে এক তমোঘ্ন বীণার সুর— ‘কাহার’—সে অনুভব অলৌকিক। সকলেরই আছে ব্যক্তিগত ঈশ্বরীর খোঁজ। ‘নায়ক’ ছবিতে প্রতিমা-বিসর্জনের দৃশ্য জীবনের নশ্বরতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় নায়ক অরিন্দমকে— একটি আকস্মিক মৃত্যুকে সাক্ষী করে, একই সঙ্গে পুরোনো অরিন্দমেরও কি মৃত্যু ঘটে না? ‘একটাই লাইফটাইম, একটাই চান্স’—এই উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গে শঙ্করদার চিতার আগুনে সে বিসর্জন দেয় সাবেকি মূল্যবোধ, পুরোনো গ্রন্থি ছিঁড়ে সে যাত্রা শুরু করে—মহা-নায়কোচিত উত্থানের সিঁড়ি বেয়ে। ঋত্বিক ঘটকের নানা ছবিতেও পুজোর উপস্থিতি স্বকীয়তায় ভরা। ‘মেঘে ঢাকা তারা’-য় নীতা যখন প্রথম টের পায় তার শরীরে মারণব্যধির থাবা, সেই ত্রস্ত অসহায় মুহূর্ত জুড়ে বেজে ওঠে মেনকার আকুল আহ্বান— ‘আয় গো উমা কোলে লই’— আগমনীর সঙ্গে বিজয়ার সুর এভাবে মিলেমিশে একাকার হতে আগে কখনও শুনেছি কি আমরা? ছবির শেষে হিমালয়ের কোলেই নীতার অন্তিম আশ্রয় যেন গিরিতনয়ার ঘরে ফেরার ঈঙ্গিত বয়ে আনে। আবার ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’য় দেবীর আবাহন ঘটে ছৌনাচের মধ্য দিয়ে। দেবী সেখানে ধূলিধূসরিত মানবীরই অন্য মুখ। পটুয়ার কাছে তিনি লৌকিক মা। সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতের দেবিস্তোত্র থামিয়ে দিয়ে সে বলে— ‘তোমার এই অং বং বন্ধ রাখো দেখি।’ তারপর দেবীর মুখোশের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে সদর্পে বলে, ‘আমার মা। ঘরের মা।’ জ্ঞানী যখন দেবীকে বলে ‘পঞ্চভূতে ব্যাপিকা শক্তি’, সে নিঃসংশয়ে বলে, ‘শক্তি-ফক্তি বুঝি নাই। মা।’ তার্কিক যখন পুরাণের তত্ত্বকথা শোনাতে চায় সে বলে, ‘পুরাণ-টুরাণ কী? নূতন। মা আবার পুরাণ হল কবে?’ এমন অপরূপ দেবীবন্দনা ঋত্বিক ঘটকের হাতেই সম্ভব। অনেক ছবিতে আবার পুজোই কাহিনির অন্যতম চরিত্র হয়ে উঠেছে। যেমন ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। প্রতিমা নির্মাণের স্তরে স্তরে এখানে দানা বেধে ওঠে রহস্য। বহুমূল্য গণেশমূর্তির অন্তর্ধান, মগনলালের হাতে লালমোহনবাবুর লাঞ্ছনা এবং সবশেষে বৃদ্ধ প্রতিমা শিল্পীর হত্যা ফেলুদার উপস্থিতির ঔজ্জ্বল্যকেও যেন সাময়িক রাহুগ্রস্ত করে রাখে। অবশেষে ফেলুদার হাতে মগনলালের পরাজয়ের মুহূর্তে যখন নির্ভুল লক্ষে ছুটে যাচ্ছে একটার পর একটা গুলি, পর্দা জুড়ে গমগম করছে— ‘যারা গুন্ডা দিয়ে নিরীহ লোককে খুন করায়, যারা টাকার লোভে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে তার টাকা দিয়ে রেহাই পাবে না...’ সেই কি নয় অসুরনিধনের মাহেন্দ্রক্ষণ? লক্ষণীয়, সেদিন বিজয়া দশমী। বিসর্জন অবশ্য ঘটে মগনলালের— তাই বিনির্মাণের এ এক অপূর্ব সন্দর্ভও বটে। অতএব, শিশুকাল থেকে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ হয়ে ওঠে পুজোর ছবির রাজা। মন্ত্রী বলতে মনে পড়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘হীরের আংটি’। ছবির শুরুতে রেডিওতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র বহুপরিচিত সুর এক নিমেষে সৃজন করে মহালয়ার ভোর। নির্মীয়মাণ প্রতিমার সামনে মৃৎশিল্পী ও হাবুলের আলাপচারিতায় সত্যজিতের স্পষ্ট প্রভাব। এই ছবিতেও দৃশ্যের পর দৃশ্য জুড়ে শরতের অপূর্ব প্রকৃতি আবিষ্ট করে রাখে। এখানেও আছে রহস্য, অপরাধ এবং প্রতারণার চক্রান্ত। আছে ষষ্ঠীর মতো মজাদার চোর, পাঁচুর মতো অনুগত ভৃত্য, হাবুল আর তিন্নির মতো দুটি অমল বালক-বালিকা, আর আছে রহস্যময় গন্ধর্বকুমার আর তার সাগরেদ শ্বেত ও লোহিত। কিন্তু শেষ অবধি ভালো মানুষদের জিতে যাওয়া এবং ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত পুজোর অঞ্জলিদানে এটি হয়ে ওঠে এক অপরূপ স্বপ্নপূরণের গল্প। গোটা ছবি জুড়ে আগমনীর সুর আর শেষে সম্মিলিত প্রসাদপ্রাপ্তির দৃশ্যে বৃত্তসম্পূরণ— পুজোর ছবি হিসেবে এটিকে বড়ো প্রিয় করে তোলে। সাম্প্রতিককালে আর-একটি ছবিতেও পুজোর উদযাপন চমৎকার লাগে, সেটি ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’। এখানেও কাহিনির পরতে পরতে দুর্গাপূজার উপস্থিতি। আগমনী থেকে বিজয়া জুড়ে গানে গানে ছড়িয়ে থাকে গুপ্তধনের সঙ্কেত আর দেবীর চালচিত্রে লুকিয়ে থাকে গোপন মানচিত্রটি। তিনটি ঝকঝকে তরুণ-তরুণীকে নিয়ে তৈরি এই দ্বিতীয় ছবিতে নয়নলোভন শরতের রূপ ছোটবেলায় পড়া পূজাবার্ষিকীর সুঘ্রাণ মনে আনে। বাংলাছবি না হলেও একটি ছবিতে পুজোর অনুষঙ্গ সুপ্রযুক্ত মনে হয়, সেটি ‘কাহানী’। সিনেমাটির নানা দৃশ্যে বারবার উঁকি দেয় পুজোমুখর কোলকাতা। তবে শুধু সেই কারণে একে পুজোর ছবি বলছি না। এই কাহিনির অন্তিমপর্বে দশমীর অপরাহ্ণে একা একটি মেয়ের প্রবল প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে অশুভশক্তির বিনাশ অসুরদলনী দেবীর কথাই মনে করায়। অন্য কোনো উৎসবের আবহে এই এফেক্ট তৈরি হতো না। এছাড়াও আছে এমন অনেক ছবি যেখানে পুজোকে ব্যবহার করা হয়েছে কাহিনির প্রেক্ষাপটে। মূল ঘটনা-পরম্পরার সঙ্গে তার সম্পর্ক আধার ও আধেয়ের। যেমন ধরা যাক অপর্ণা সেনের ‘পরমা’। এখানে দেবীবরণের মধ্যে দিয়ে পরমা চরিত্রটির উপস্থাপনা তার কল্যাণময়ী গৃহলক্ষ্মীরূপটির পরিচয় আনে। কিন্তু কাহিনির ক্রমোন্মচনের সঙ্গে সঙ্গে তার চরিত্রেও ঘটতে থাকে বিবর্তন। তার স্বাতন্ত্রকামী আত্মার নবজাগরণ ঘটে অপ্রত্যাশিত প্রেমের হাত ধরে। তার আত্মানুসন্ধান এ ছবিকে করে তোলে নারীবাদের দর্পণ। কোথাও কি দেবীর বহুধাবিভক্ত রূপরাশির বার্তাই বয়ে আনে না এই আত্মবিনাশে উদ্যত নারীর নিজের সঙ্গে বাঁচতে শেখার অন্তিম লড়াই? ঋতুপর্ণের ‘উৎসব’ জুড়েও পুজো মিশে থাকে কাহিনির অঙ্গে অঙ্গে। যদিও এটি মূলত পারিবারিক পুনর্মিলনের ছবি, তবু দুর্গোৎসবকে ঘিরেই তা আবর্তিত। প্রায় প্রতিটি চরিত্রের নিজস্ব সুখ-দুঃখ, মান-অভিমান, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নীরব শ্রোতা হয়ে জেগে থাকে একচালার সাবেকী প্রতিমা। তারপর, অনেক টুকরো টুকরো বলা ও না বলা কথার চূর্ণ ছড়িয়ে সকলেই যখন ফিরে যায় স্বভূমে, পড়ে থাকে শূন্য নাটমণ্ডপে সন্ধ্যাদীপের আলোআঁধারী। বিসর্জনের শোভাযাত্রার আলোর নরম কৌলীন্যে মিশে যায় দুটি শরীরের অরূপ-আবাহনের স্মরণীয় সংলাপ: ‘বেসিক এলিমেন্টটা তো এক। খড় আর বাঁশটা বাদ দিলে বাকি থাকে জল আর মাটি, সেই জল আর মাটি দিয়ে ঠাকুর গড়ে, আবার ভাসান দিলে জল আর মাটি হয়ে যায়। কন্সট্রাকশন, ডিকন্সট্রাকশন, কন্সট্রাকশন, ডিকন্সট্রাকশন...’ এভাবেই কিছু ছবিতে পুজো তৈরি করে ঘটনার প্রেক্ষিত। যেমন ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ কিংবা পরবর্তী কালে ‘জাতিস্মর’ ছবিতে পুজোর আবহেই জমে ওঠে কবির লড়াই এবং অবশেষে কাহিনির ট্র্যাজিক পরিসমাপ্তি। সত্যজিতের ‘দেবী’ চলচ্চিত্রটি আবার একদম অন্য এক পুজোর গল্প বলে যেখানে ভক্তই হয়ে ওঠে দেবীর নির্মাতা, আর এই আরোপিত দেবীনির্মাণের অভিঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় এক তরুণ দম্পতির সহজ মানবিক জীবনধারা। মন্দিরে দেবী-মানবীর দ্বৈত আলোকে শর্মিলা ঠাকুরের আত্মমগ্ন বসে থাকা, আর আবহে ঘুরে ঘুরে আসা শ্যামাসংগীতের সুর— ‘নূতন রূপে নূতন বেশে শ্যামা মায়ে দেখ এসে’— এ এক অন্যরকম দেবীবন্দনা। তবে শুরু থেকে শেষ অবধি অসংখ্যবার পুজো প্রসঙ্গ এলেও ঋতুপর্ণের ‘অন্তরমহল’কে পুজোর ছবি বলে ভাবতে পারি না। কারণ পুজো এখানে স্বমহিমাচ্যুত এবং দাম্ভিক জমিদারের রাজানুগ্রহ লাভের বিকৃত চেষ্টার উপলক্ষ মাত্র। যে ছবিটির উল্লেখ আলাদা করে এই লেখায় না করলেই নয়, সেটি সাম্প্রতিক— ‘উমা’। এই চলচ্চিত্রের কাহিনি অবশ্য বাস্তব-অনুপ্রাণিত। কানাডার অন্টারিওতে অবস্থিত সেন্ট জর্জ শহরে বসবাসরত ইভান লিভারসেজের জীবন এই ছবির নেপথ্য। সাত বছর বয়সি লিভারসেজ ৬ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সালে এই পৃথিবী থেকে চলে যায়। এর বেশ কিছু মাস আগে থেকেই দূরারোগ্য রোগে ভুগতে থাকা এই শিশুটির মা, তার জন্য শেষ-বড়োদিন আয়োজন করেছিলেন আগেভাগেই— অক্টোবর মাসে— শহরের সব বাসিন্দাদের সমর্থন ও সাহায্যে। ‘উমা’-র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় এই আশ্চর্য ঘটনা থেকেই ছবির অনুপ্রাণ সংগ্রহ করেন। ছবির বয়নে কিছু ত্রুটি সত্ত্বেও, এ এক অপরূপ অকালবোধনের ছবি। দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত বালিকার পুজো দেখার অন্তিম ইচ্ছাপূরণে এক পিতৃহৃদয়ের অতিলৌকিক লড়াই। ক্রমে ক্রমে এই অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রয়াসে সমবেত হয় আরও অনেক অনেক মুখ। এ যেন সকল দেবতার তেজ-রাশি সম্ভূতা মহাদেবী-সৃজনের এক সমান্তরাল কাহিনি। চরিত্রদের নামকরণেও তারই স্পষ্ট ঈঙ্গিত। উমা এখানে অসুরদলনী নয়, অসুখদলনী। তার হাতে প্রসাদের আশ্বাস, দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতা, হাসিতে বরাভয়। আর সেই প্রসন্নহাসিনী বিমল বালিকার সামনে শেষ অবধি নতজানু হতে হয় আনন্দবিনাশী চিৎকৃত অহং-কারীকে। হোক বানানো পুজো, তবু এ পুজো জিতিয়ে দেয় বহু হেরে যাওয়া মানুষকে, ফিরিয়ে দেয় অনেক ছিঁড়ে যাওয়া গ্রন্থি। এ ছবির যাত্রা তাই অন্ধকার থেকে আলোর পথে, মৃত্যু থেকে অমৃতের পথে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘বিসর্জন’ একটি ভিন্নধারার ‘পুজোর ছবি’— যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা ছবির অন্যতম কাহিনি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন একটি বাংলাদেশি এলাকায় একজন চোরাকারবারি ভারতীয় মুসলমান নদীতে ভেসে আসে। নাম তার নাসির। তার প্রাণরক্ষা করে পদ্মা নামের এক হিন্দু বিধবা মহিলা। নিজের বাড়িতে নাসিরকে আশ্রয় দেয় পদ্মা। তাদের মধ্যে এক ‘ভিন্নধর্মী’ প্রেমের সম্পর্ক আর তার আপাত-পরিণতি, এই চলচ্চিত্রটির উপজীব্য। টানটান কাহিনি ও মুখ্য চরিত্রদের সাবলীল অভিনয় ছাড়াও, সামাজিক মূল্যবোধের চলমান দলিল হিসেবে এই ছবিটি তার যোগ্য স্বীকৃতি পায় ২০১৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়ে। দুবছর বাদে পরিচালক এর একটি সিক্যুয়েল বানিয়েছিলেন— ‘বিজয়া’ নামে। সেখানে এই ঘটনার ছবছর বাদের কাহিনির ছিন্ন সূত্রটি আবার তুলে নেন পরিচালক। পদ্মা আগের ছবির তৃতীয় মুখ্য চরিত্র গণেশ মণ্ডলের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এলে, নাসিরের সঙ্গে দেখা হয় তার। কাহিনি-বৃত্তটি শুধু সম্পূর্ণ হয় তা-ই নয়, মনে দাগ কেটে যায় এই দুটি ছবির মূল বক্তব্য— সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের অনেক ঊর্ধ্বে অবস্থিত মানুষের ভালোবাসার জয়গাথা। নামকরণের মুনশিয়ানায় পরিচালক সেই বার্তাটি যেন আরও অমোঘভাবে পৌঁছে দেন। ‘বিসর্জন’-এ উৎসবের শেষ নয়। কাহিনিরও নয়। ‘বিজয়া’-র সম্প্রীতিই উৎসবের অবলেশ। এভাবেই অনেক, অনেক ছবির মুহূর্ত, আর তার ক্যানভাসে আরও, আরও উৎসবের না-হয়ে ওঠা উদযাপন জুড়ে থাকে আমাদের দিনগত আলো-ছায়াময় কারুবাসনায়— প্রতিপ্রত্যেক শরৎ তাতে যোগ করে অমেয় কিছু আলো। নতুনের অপেক্ষা আর পুরোনোকে ফিরে দেখা— এই নিয়ে আবর্তিত আমাদের ‘পুজো রেট্রসপেকসন’। প্রতিমার বিসর্জনে নদী অঞ্জলিবদ্ধ হয়ে গ্রহণ করে তার অতীত পলি-জমা স্মৃতি। মণ্ডপে মণ্ডপে আকৈশোর বেজে চলা গানের সুরে সুরে তৈরি হতে থাকে আবহ। হাতের পাতায় নতুন গল্পের ভিতর থেকে উঁকি দিতে থাকে হারানো চরিত্রেরা। জানলার পাশে লাবনীলতায় জমতে থাকে কিছু বিচ্ছুরিত আয়ুষ্কাল। আশ্বিনের মাঝামাঝি, মনের মাঝে অমোঘ বাদ্যি বেজে ওঠে— রবি-ঠাকুরের মধু-বিধু তখন ছুট লাগায় সনৎ সিংহের পাঠশালা থেকে, ভূতের রাজার বরে হীরকের দরবারে সোনা ফলায় খুশির উৎসবে যোগ দিতে আসা দুই গায়ক-বাদক, রক্তকরবীর রাজা হাত লাগান চলচ্চিত্রের রাজ-মূর্তির গলায় পরানো রশিতে— ‘সব আমাদের জন্য’। সংকটকালে, শরৎ হয়ে ফিরে আসে শৈশবের বৈভব। আমরা জানি আমাদের আছে উদয়ন পণ্ডিত এক— তার কণ্ঠস্বর কেন জানি না অবিকল ফেলুদা-র মতো। আমরা জানি সমস্ত মারীকে পরাস্ত করে ‘পাঠশালা একদিন খুলবে’। আর যেদিন খুলবে— সেদিন-ই উৎসব। অমল ধবল পালে তখন তরণী বাওয়ার সুর— যে সুরের সঙ্গে কখন যেন মিশে যায় শৈশবের কাশের বনে ফেলে আসা দূরাগত রেলগাড়ির ঝংকার। তখন, হ্যাঁ— ঠিক তখন-ই পুজো।
- Buddhadeb : RNT / Namo Tassa : KS | Manikarnika.Pub
বুদ্ধদেব । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নমো তস্স। কৌশিক সরকার ❛ ভারতবর্ষে বুদ্ধদেব মানবকে বড়ো করিয়াছিলেন। তিনি জাতি মানেন নাই, যাগযজ্ঞের অবলম্বন হইতে মানুষকে মুক্তি দিয়াছিলেন, দেবতাকে মানুষের লক্ষ হইতে অপসৃত করিয়াছিলেন। তিনি মানুষের আত্মশক্তি প্রচার করিয়াছিলেন। দয়া এবং কল্যাণ তিনি স্বর্গ হইতে প্রার্থনা করেন নাই, মানুষের অন্তর হইতে তাহা তিনি আহ্বান করিয়াছিলেন। এমনি করিয়া শ্রদ্ধার দ্বারা, ভক্তির দ্বারা, মানুষের অন্তরের জ্ঞান শক্তি ও উদ্যমকে তিনি মহীয়ান করিয়া তুলিলেন। মানুষ যে দীন দৈবাধীন হীন পদার্থ নহে, তাহা তিনি ঘোষণা করিলেন। এমন সময় হিন্দুর চিত্ত জাগ্রত হইয়া কহিল, ‘সে কথা যথার্থ— মানুষ দীন নহে, হীন নহে, কারণ মানুষের যে শক্তি— যে শক্তি মানুষের মুখে ভাষা দিয়াছে, মনে ধী দিয়াছে, বাহুতে নৈপুণ্য দিয়াছে, যাহা সমাজকে গঠিত করিতেছে, সংসারকে চালনা করিতেছে, তাহাই দৈবী শক্তি।’ Out of Stock সম্পূর্ণ বর্ষাকাল ভগবান ঋষিপত্তনের যে কুটিরে কাটিয়েছিলেন তাকে ‘মূলগন্ধকূটিবিহার’ বলা হয়। বোধিলাভের পর থেকে তিনি আজীবন যেখানে যে যে কুটিরে অবস্থান করেছিলেন সেই সব কুটিরকেই ‘গন্ধকূটিবিহার’ বলা হয়। সম্ভবত ভিক্ষুগণ ভগবানের কুটিরে পুষ্প প্রদান করতেন এবং সুগন্ধি দ্রব্য জ্বালতেন বলে এইরূপ নামকরণ হয়েছিল। আর ঋষিপত্তনের কুটিরে তিনি প্রথমবার অবস্থান করেছিলেন বলে হতে পারে তার নাম মূলগন্ধকূটিবিহার। এই কুটিরের ধ্বংসাবশেষ আজও বর্তমান সারনাথে বিদ্যমান।
- এক জোড়া মোজার ভিন্নমত । ঋচীক | Manikarnika.Pub
এক জোড়া মোজার ভিন্নমত । ঋচীক বিষয় : কবিতা প্রচ্ছদ : শাশ্বত বন্দোপাধ্যায় আশাবরী প্রকাশনী মূল্য : ₹ ২০০ যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির দুটি কবিতা এখানে দেওয়া হল। এক জোড়া মোজার ভিন্নমত আজকাল দেখি একটা নতুন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়েছে, মোজা ছাড়া জুতো। এ কি দিনকাল এল! আমরা খাব কী এবার? একেতেই আমাদের তো আর জুতোর মতন সম্পত্তি নেই অথচ চিরকাল ধরেই আমরা জুতোর সঙ্গেই রইলাম তবে গৌণ হয়ে। আমাদের তো আর পাবলিক ডিসপ্লে নেই, জুতোর আছে। তাই জন্যেই আমাদের ক্যাপিটাল ভ্যালুও নেই। সাইডকিক আমরা থেকেই থাকব চিরকাল। এই গ্লোবাল speculative ক্যাপিটালের নকশাতে। তবে, আমাদের যে বাতিল করে চলেছে ultra-আধুনিকতা as if that is our defined social position, to wear or not to wear, চুপ করে বসে থাকলে ঘরবাড়ি বিক্রি হয়ে যাবে। পরের সপ্তাহে সকাল ০৯:১৩ থেকে ভিন্নমত চালু হবে আমাদের।
- মাংসাশী ও বিশল্যকরণী । বাসুদেব মালাকর | Manikarnika.Pub
মাংসাশী ও বিশল্যকরণী । বাসুদেব মালাকর বিষয় : গল্প প্রচ্ছদ : ইয়োকোডিজাইন মণিকর্ণিকা প্রকাশনী মূল্য : ₹৩০০ যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি গল্প এখানে দেওয়া হল। সাপলুডো বাসুদেব মালাকার হিরণের মোবাইলের রিংটোনটার ভিতর একটা প্রগাঢ় অভিমান আছে— ‘কেন ডাকো তুমি মোরে/ দিশাহীন আমি পথ খুঁজে খুঁজে হারিয়ে গিয়েছি অন্ধকারে…’ জনপ্রিয় এই গানটিকে পিয়ানোয় বাজিয়ে মোবাইল কোম্পানি রিংটোন করে বাজারে ছেড়েছিল, হিরণ সেটাকেই তাঁর মোবাইলে নিয়েছে। কেন নিয়েছে, সে নিজেই জানে না। তার মসৃণ জীবনযাত্রার ভিতর গভীর কোনও অভিমানের অবকাশ নেই, সে যে চাকরিটা করে, স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে বেঁচে থাকার পক্ষে সেটা অনেক বেশি। একটা ক্রমোন্নতিশীল সংস্থার দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখায় পৃথক চেম্বারে তার বসবার জায়গা, একজন একান্ত সচিব এবং স্টেনোও আছে। সংস্থা তাঁকে ফ্ল্যাট মঞ্জুর করেছিল, ফ্ল্যাটের জীবনযাত্রা তার বউয়ের পছন্দ নয় বলে সে সেটা ফিরিয়ে দিয়েছে। ফলে শহরের উপকণ্ঠে তার নিজস্ব দোতলা বাড়ি, বাড়িতে বউ, সাত বছরের ফুটফুটে মেয়ে নিয়ে তার তৃপ্ত সাবলীল জীবন। কমপক্ষে চারজন সিনিয়রকে টপকে তার আজকের এই উত্থানের জন্য সে ভিতরে একটু অহংকারী এবং অন্যের ঈর্ষার পাত্র। শুধু একটা কাঁটাই মাঝে মাঝে তাঁকে বিদ্ধ করে— তার একমাত্র বোন হেনার বিয়েটা সুখের হয়নি! জীবনের সব কটা দানই সে নির্ভুল চেলেছে, হেনার বেলায়ই চালটা নির্ভুল হল না! ভাল ঘ-বর দেখে হিরণ মনে করেছিল, হেনা ওখানে সুখেই থাকবে, কিন্তু হেনা বউ হয়ে গিয়ে বুঝেছিল, পার্থর মতো একটা মানুষের সঙ্গে জীবন কাটানো অসম্ভব। উদ্ধত হৃদয়হীন বিকৃতরুচি, সবচেয়ে বড় কথা, ভালোবাসাহীন পার্থর সঙ্গে নরম স্নিগ্ধ হেনার কোনও আত্মিক সংযোগ তৈরি হয়নি। বিয়ের আগে হেনা যে একজনকে ভালবাসত, এই তথ্যটুকু— যা তার উপর নির্যাতন হয়ে নেমে এসেছে— গোপন থাকেনি যেমন, হেনাও তেমনই আবিষ্কার করেছিল! পার্থর সঙ্গে তার এক সম্পর্কিত প্রায় সমবয়সী বউদির একটি অনুচিত সম্পর্ক আছে। প্রকৃতপক্ষে সেই মহিলাই সংসারের কর্ত্রী এবং পার্থর চালিকাশক্তি। পার্থর মা-বাবা ছেলের বিয়ে দিয়ে মতি ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন, পার্থর এক জামাইবাবু উদ্যোগী হয়ে হিরণের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন পরিচিতির সূত্র ধরে। হেনা এ বিয়েতে রাজি ছিল না, হিরণই খানিকটা জোর খাটিয়ে রাজি করিয়েছিল বোনকে। সেই বউদির সঙ্গে পার্থর সম্পর্কটা এখন খোলাখুলি। প্রায়ই তিনি আসেন। হেনা তখন বসার ঘরে টিভি চালিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। অপমান অবহেলা প্রথম থেকেই ছিল, এখন ছুতোনাতায় গায়ে হাত তোলাও শুরু হয়েছে। একটাই বাঁচোয়া, সাড়ে তিন বছরে এখনও হেনা মা হয়নি। পার্থ বলেছে, ‘বেডরুমটাকে বাচ্চার গু-মুতের গন্ধে ভরাতে না পারলে মজা হচ্ছে না, না?’ এই একমাত্র বার্থতার জন্যই হিরণ তার মোবাইলে অমন গভীর অভিমান পুষে রেখেছে কি না, সে নিজেই জানে না। দুপুরবেলা লাঞ্চ-রিসেসের একটু পরেই হিরণের মোবাইলে সেই অভিমান গুমরে উঠল। স্ক্রিনে তমালিকার নাম। তমালিকা এসময় ফোন করে না, মুনকে স্কুল থেকে স্নান করিয়ে খাইয়ে দিয়ে সে নিজেও একটু বিশ্রাম নেয়। হিরণ একই সঙ্গে বিস্মিত ও শঙ্কিত হয়ে কলটা রিসিভ করে বলল, ‘বলো, অসময়ে হঠাৎ?’ যা ভেবেছিল, ওদিকে তমালিকার স্বরে একটু কাঁপনের সঙ্গে অবয়বহীন অসহায়তা, ‘শোনো, তুমি সকালে বেরিয়ে যাওয়ার একটু পরেই দূর্বাদল এসেছে!’ হিরণ বিস্মিত হল, দূর্বা! কেন? কী বলল এসে? এখন কী করছে? একই সঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন করবার পর সে নিজেকেই বলল, ধীরে রজনী, মাথা ঠান্ডা করে বুঝতে হবে সবকিছু আগে। বারোশো স্কয়ার ফুটের মাঝারি বাড়ি, পাশাপাশি ঘর, তমালিকা প্রায় ফিসফিস করে বলল, ‘এসে বলল, স্নান করব, বউদি। খেতে ডাকলাম, খেল। এখন সামনের ঘরে সোফায় আধশোয়া হয়ে ম্যাগাজিন দেখছে।’ হিরণ একটু নিশ্চিন্ত হল, বলল, ‘শোনো, ঘাবড়াবার কিছু নেই। কথা-টথা বলো। তুমি তো আগেও দেখেছ ওঁকে, আমাদের বিয়ের সময় এসেছিল। সম্পর্কটাও জানো।’ তমালিকা বলল, ‘কী কথা বলব? আমার খুব ভয় করছে। চোখ দু’টো কেমন জ্বলজ্বল করছে। দু’চারটে কথা যা হয়েছে, চোখের দিক তাকেতে পারিনি।’ হিরণ হাসল, ‘তোমার না সবকিছুতেই ভয়। কেন, ও কি বাঘ না ভালুক? আরে, ওর চোখ দু’টো ছোটোবেলা থেকেই ওরকম— উজ্জ্বল, ঝকঝকে। বেসিক্যালি ও কিন্তু খারাপ ছিল না। ওর সম্পর্কে যা শুনেছ, সেজন্যই হয়তো ভয় পাচ্ছ...।’ তমালিকা বলল, ‘থাক্, নিজের আত্মীয়স্বজনের গুণ আর গাইতে হবে না! কম তো দেখলাম না— গুণের নিধি এক-একটা।’ হিরণ পরিস্থিতিটাকে একটু হালকা করবার জন্য বলল, ‘দুর, ও আমাদের আত্মীয় হল কবে? ছোটোবেলায় পাশাপাশি বড় হয়েছি, দুই ফ্যামিলির মধ্যে ভাব-ভালবাসা ছিল— এটুকুই। ওর চোখের কথা বললে না? তুমি তো লিটারেচারের— বাঙ্ময় বলে একটা শব্দ আছে না? ওর চোখ দু’টো বরাবরই সেরকম। মুখে যতটা বলে, চোখ দিয়ে বলে তার চেয়ে বেশি!’ তমালিকা কণ্ঠে বিষ মিশিয়ে বলল, ‘কী প্রেম! একটা ইয়ের চোখের দৃষ্টি নিয়ে উনি সেফ ডিসট্যান্সে বসে কাব্য করছেন?’ হিরণ ব্যঙ্গটা হজম করে বলল, ‘টেনশন নেওয়ার দরকার নেই, এক কাজ করো, মুন ঘুম থেকে উঠলে ওর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দাও— বাচ্চাদের সঙ্গে ও খুব তাড়াতাড়ি ভাব করতে পারে। তমালিকা বেশ আর্তনাদ করে উঠল, ‘কী বুদ্ধি! আমার ওই সাত বছরের মেয়েকে আমি ওর মতো একটা দাগি ক্রিমিনালের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ছেড়ে দিই! আর তোমার মেয়েও হয়েছে তেমনই, দুপুরে ঘুমোয়নি। তোমার পরমাত্মীয় একবার হাতছানি দিয়ে ডেকেছে, অমনি গিয়ে ভাব করা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। ছড়া বাঁধা ক্যুইজও হয়ে গেছে। বজ্জাত মেয়ে কোথাকার। একটু আগে জোর করে টেনে এনে শুইয়ে দিয়েছি। দয়া করে আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরলে বাধিত হব। ছাড়ছি। দুই মোবাইলটা অফ করবার পর হিরণের ভিতর একজন হিসেবি উচ্চপদাধিকারী জেগে উঠে তমালিকার আশঙ্কাটুকুর পোস্টমর্টেম করবার চেষ্টা করল। তমালিকার কথাগুলো উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। সে যতটা ভেবেছে, ততটা না হলেও, এই মুহূর্তে তার বাইরের ঘর একটা জেলখাটা খুনের আসামি বসে আছে, ভেবেই হিরণ অসহায় বোধ করতে শুরু করল। তার একটা নিজস্ব পরিচিতি আছে, সমাজ আছে, প্রতিবেশী আত্মীয় সুহৃদ এবং কিছু শত্রুও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার চাকরির নিরাপত্তা। যদি একবার জানাজানি হয়ে যায় যে, হিরণ মল্লিকের বাড়িতে একটা খুনের আসামি এসে উঠেছে, কোথায় থাকবে তিল তিল করে গড়ে তোলা এই সম্মান প্রতিষ্ঠা? দেশবিদেশে সুনামের সঙ্গে ক্রমস্ফীত এক সংস্থা— যার শেয়ারের মূল্য কখনও নিম্নগামী হয়নি— তার পদস্থ আধিকারিকের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে একটা ক্রিমিনাল! হিরণ একটু টাল খেয়ে গেল। হঠাৎ এতদিন পরে দূর্বাদল কেন এল, ক্রিমিনালরা সাধারণত একলা হয় না, দূর্বা কি দুর্যোগের হিমবাহের চূড়া— যার অতলে আরও বড় অদৃশ্য কোনও দুর্গ্রহ তার শান্ত সুন্দর সংসারের দিকে শরসন্ধান করছে? ছোটোবেলার সেই সুসম্পর্কের দাবি এত দূরে পৌঁছাতে পারে? হিরণ যতই ভাবছিল, দুপুরটা ততই দীর্ঘ হচ্ছিল। টেবিলে অনেকগুলো ফাইল জমে গেছে, আগামী দু’দিনের মধ্যে ওগুলোকে ছাড়তে হবে। নাইজিরিয়া থেকে একটা রিকুইজিশন এসেছে— টপ প্রায়োরিটি— ওটার ব্যাপারে ডিরেকটরদের সঙ্গে বসতে হবে। কিন্তু কোনও কাজেই মন বসাতে পারছিল না হিরণ। এক সময় সে তার পি.এ-কে বলে বেরিয়ে পড়ল। গেট খুলে বাড়িতে ঢুকেই তার মনে হল, সবকিছু যেন অন্য দিনের থেকে একটু আলাদা! কয়েক পা এগোলেই বারান্দায় ওঠার তিন ধাপ সিঁড়ি, ডাইনে-বাঁয়ে তমালিকার শখের বাগান। মরসুমের গাঁদা দোপাটি, সারা বছরের নয়নতারা গোলাপ জবা নিয়ে তার এই শখের মালঞ্চ— ফ্ল্যাটবাড়িতে এই সৃজনটুকু এবং আরও আনেক কিছুরই অবকাশ নেই বলেই তমালিকা ফ্ল্যাটবাড়ি নাকচ করেছিল; আজ তার সেই সৃজনের গোড়ায় জল পড়েনি। তার মানে আজ বিকেলে সে নীচে নামেনি! কলিংবেল বাজাতে তমালিকাই দরজা খুলল। তার দু’চোখে রাগ অভিমান এবং শঙ্কা। তমালিকার পিছনে সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে হিরণ জিজ্ঞাসা করল, ‘কোথায়?’ তমালিকা ইশারায় বাইরের ঘরটা দেখাল। জামাপ্যান্ট ছেড়ে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে হিরণ যখন ঘরে দূর্বা তখন বিছানার উপর পদ্মাসনে বসে। পরনে স্টিল কালারের কারগো ট্রাউজার, শ্যাওলারঙা পাঞ্জাবি। হিরণকে দেখে হেসে বলল, ‘তুমি এসেছ, টের পেয়েছি, কেমন আছ, হিনুদা?’ দূর্বার মা প্রীতিমাসিমার চেহারা খুবই সুন্দর, দূর্বা সেই সৌন্দর্যের প্রায় সবটুকুই পেয়েছে। যৌবন তাকে আরও লাবণ্যময় করেছে। শ্যামলা দীর্ঘ বলিষ্ঠ চেহারা, চওড়া কপালের নীচে খাড়া নাক, তার দু-পাশে বড় বড় দুটো চোখ, একটা স্পষ্ট বিভাজিকা থুতনিটাকে নির্ভুলভাবে দ্বিধাবিভিক্ত করেছে। মাথায় লম্বা এলোমেলো উলুঝুলু চুল। হিরণ বলল, ‘এ কী রে! এত বড় বড় চুল রেখেছিস কেন?’ দূর্বা হেসে বিছানায় থাবা মেরে বলল, ‘বোসো। কতাদিন পরে তোমার সঙ্গে দেখা হল! বেশ মুটিয়েছ কিন্তু!’ দূর্বার পিছনে বসে মুন একটা ছবি আঁকছিল, বাবাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে হাসল। হিরণ বলল, ‘এ কী মুন, তুমি এখনও পড়তে বসোনি! এটা কি ড্রইংয়ের সময়’? দূর্বা বলল, ‘আমিই বলেছি আঁকতে— উইদ প্রায়র পারমিশন অফ্ বউদি!’ হিরণ বলল, ‘তুই জানিস না, ওদের ইস্কুলে হোমটাস্কের কী ট্রিমেন্ডাস প্রেশার! বল, বিল্বদা মাসিমা কেমন আছেন?’ দূর্বা ছোট্ট উত্তর দিল, ‘ভাল।’ মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন বুজকুড়ি তুলছিল, কিন্তু কীভাবে আসল জায়গাটায় পৌঁছনো যায়, হিরণ ভেবে পাচ্ছিল না। তমালিকা দরজার সামনে এসে বলল, ‘একটু বাজার যেতে হবে।’ ‘হ্যাঁ যাই’, বলে হিরণ উঠে দাঁড়াল। দূর্বা মুনের দিকে ঘুরে বসল। বাজারে বেরনোর আগে শোওয়ার ঘরে এসে হিরণ জিজ্ঞাসা করল, ‘ওকে বিকেলের চা-টা দিয়েছিলে তো?’ ‘আশ্চর্য, কেন দেব না! তোমার আত্মীয়স্বজনকে আমি যত্ন করি না, বলতে চাও?’ ‘ওভাবে বলছ কেন? এসেই যখন পড়েছে, আগে উদ্দেশ্যটা জানতে হবে তো নাকি?’ ‘উদ্দেশ্য যাই থাক, একটা কথা শুনে রাখো, পাড়ায় আমাদের একটা সুনাম আছে, আমার বাপের বাড়ির লোকজন আছে, বড় কথা, মুনের স্কুলের বন্ধুরা, তাদের পেরেন্টস্— ওর যা ইতিহাস শুনেছি… ‘আরে আমিও কি ব্যাপারটা ভাবিনি ভাবছ? একটু ধৈর্য ধর, প্লিজ!’ ‘শোনো, ও যদি কাল চলে যেতে চায়, তুমি যেন স্নেহ দেখিয়ে বলতে যেও না, আর দু’টো দিন থেকে গেলে পারতিস… আ্যাদ্দিন পরে এলি— তোমাকে চিনতে তো বাকি নেই। শুনেছ, কী বললাম?’ ‘আমার সঙ্গে সঙ্গে দূর্বা কিন্তু ওঘরে বসেও শুনতে পাচ্ছে!’ ‘শুনুক, কাজটা সহজ হয়ে যাবে তাহলে।’ তিন খাওয়ার টেবিলে হিরণ আর দূর্বা। তমালিকা সার্ভ করছে। মুনকে আগেই খাইয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। কাল শনিবার, মুনের ছুটি, তবু নিয়ম নিয়মই। হিরণ জিজ্ঞাসা করল, ‘তুই কিন্তু বললি না, হঠাৎ কী মনে করে এলি!’ মা বলত, দূর্বা হাসলে ঘাসের উপর শিউলি ঝরে! তখন খুব হিংসে হত। দূর্বা সেই রকম হেসে বলল, ‘এমনিই চলে এলাম। পাসপোর্টটা রিনিউ করতে দিয়েছিলাম ওরা ডেকে পাঠিয়েছিল, ভাবলাম, দেখেই যাই তোমাদের!’ হিরণ বলল, ‘কী করছিস এখন? একটা গ্রামীণ ব্যাঙ্কে জয়েন করেছিলি শুনেছিলাম। ওটা আছে না গেছে?’ দূর্বা সংক্ষেপে বলল, ‘গেছে।’ ‘ফেরত পাওয়া যায় না? তোর তো পানিশমেন্ট হয়নি শুনেছিলাম! ওনলি জেলকাস্টডি?’ ‘ইউনিয়ন লড়ে যাচ্ছে।’ হিরণ বুঝতে পারল, দূর্বা এখন একদম বেকার। তার মানে এখানে স্টে করতে ওর কোনও বাধা নেই। কিন্তু সেটা যে কোনওমতেই হতে দেওয়া যাবে না, এই কথাটা কী করে ওকে বুঝিয়ে দেওয়া যায়, হিরণ ভেবে পাচ্ছিল না। তমালিকা এরই মধ্যে দু’বার চোখের ইশারা করেছে, জেনে নাও, ক’দিনের জন্য এসে উঠেছে। হিরণ মরিয়া হয়েই বলল, ‘দ্যাখ দূর্বা, এতদিন পরে তোকে দেখে খুবই ভাল লাগল। কিন্তু একটা ব্যাপার কী জানিস! আমার তো একটা পজিশন আছে, যদি জানাজানি হয়ে যায় যে তুই একটা বিচ্ছিরি ব্যাপার ঘটিয়ে জেল খেটেছিস, সেটা কি আমার পক্ষে সম্মানের হবে? ডোন্ট মিসআান্ডারস্ট্যান্ড, তোর এখানে বেশি দিন থাকাটা বোধহয়... দূর্বা খাওয়া থামিয়ে হিরণকে দেখল। তারপর বলল, ‘এখন মনে হয় গাড়িঘোড়া কিছুই পাব না, তুমি ভেব না, ভোরবেলায়ই আমি চলে যাব। আমি এ ব্যাপারটা একদম ভাবিনি। ইউ আর রাইট...’ দূর্বা থালার উপর জল ঢেলে দিল। বলল, ‘আর কিছু বলবে হিনুদা?’ হিরণ বলল, ‘রাগ করলি? আমার কথাটা একটু তলিয়ে ভাবিস। আচ্ছা দূর্বা, বল তো, তুই এরকম একটা কাজ করতে গেলি কেন? মার্ডারটা করবার আগে তোর ফ্যামিলির কথা, মাসিমার কথা মনে পড়ল না?’ দূর্বার চোখে একটা নীলাভ বিষণ্ণতা— যা বেদনারই ছায়াসঙ্গী— ফুটে উঠল। তমালিকা একটা অজানা আশঙ্কায় তাকিয়ে রইল দূর্বার দিকে, এবার হয়তো একটা অভাবিত প্রতিক্রিয়া ছুটে আসবে তাদের দিকে। দূর্বার চোখের সামনে তখন তার শৈশব কৈশোর প্রথম যৌবনের খণ্ড খণ্ড দিনের ছবি দোল খাচ্ছ, ঝড়ের মুখে বাবুইপাখির বাসার মতো। মফসসলের একটা বর্ধিষ্ণু গ্রাম... দক্ষিণ দিকে একটা নদী কষ্টেসৃষ্টে বয়ে চলেছে... কাছাকাছি দু’টো বাড়ি... একটা বাড়িতে তারা দু’ভাই— বিল্বদল আর দূর্বাদল... অন্য বাড়িটায় হিরণ, হিরণের বোন হেনা... দু-বাড়ির মধ্যে গভীর সদ্ভাব... ভোরবেলায় বাবা রমাপতিবাবু ট্রেন ধরবার জন্য বেরিয়ে যাচ্ছেন— শ্যামবাজারে ওঁর একটা বড় ওষুধের দোকান... দূর্বা আর হেনা তখন রাস্তার ধারে শিউলি কুড়োচ্ছে… রমাপতিবাবু দূর্বার চুলগুলো ঘেঁটে দিয়ে বললেন, মাথায় মাফলার দাওনি কেন? নতুন ঠাণ্ডা পড়েছে। হেনা, বাড়ি গিয়ে পড়তে বোস্…।’ ফুলের ভাগ নিয়ে তুমুল আঁচড়াআঁচড়ি...। হেনা যখন ক্লাস টেন-এ উঠল, দূর্বা তখন ফার্স্ট ইয়ার-এ। হিরণদা বছর দুয়েক হল বি.এসসি পাস করে চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হেনার মা একদিন হেনাকে বললেন, ‘বড় হয়েছ, এখন ওই দূর্বার সাইকেলে বসে টইটই করে ঘোরাটা বন্ধ করো। যখন ছোটো ছিলে, কিছু বলিনি। পাড়াগাঁ… বিয়ে-থা দিতে হবে না!’ কথাটা শুনে হেনার মনের ভিতর একটা লাল টকটকে রাগের কুণ্ডলী আস্তে আস্তে ফিকে গোলাপি অভিমানে রূপান্তরিত হয়ে গেল। তারপর সেই গোলাপি অভিমানটুকু জমাট জেদের মতো তার বুকের ভিতর জাঁকিয়ে বসে বলল: তোর মরণ যদি দূর্বার হাতেই হয় তো হোক্! এরই মধ্যে একদিন কলকাতা থেকে ফিরবার পথে ট্রেনের মধ্যেই রমাপতিবাবু অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। ডাক্তার বললেন, ‘স্ট্রোকই, তবে মাইল্ড। ভয়ের কিছু নেই ভাপাতত। ভিড়ের ট্রেনের এই লং জার্নিটা অ্যাভয়েড করতে পারলে ভাল, নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে।’ তার পরের মাসেই হেনারা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সইয়ে শ্যামবাজারের ভাড়াবাড়িতে চলে গেল। প্রতিবেশী তারক ভট্টাচার্যর উপর রইল বাড়ি দেখাশোনার ভার। আগের মতো নিত্যদিন দেখা না হলেও দূর্বার সঙ্গে হেনার যোগাযোগটা ছিন্ন হয়নি অনেকদিন। দূর্বা অনেককিছু হেনাকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। তবে সেই বাঁচা-মরার সন্ধিক্ষণে শুধু হেনার মুখটাই তার মানে পড়েছিল বললেও কেউ আজ বিশ্বাস করবে? হিরণরা বহু দিন গ্রামছাড়া। সত্যিমিথ্যেয় রঞ্জিত হয়ে নানাভাবে ঘটনাটা তাদের কানে এসেছে। মনে করতে ভাল লাগে না, তবুও কিছুটা স্বীকারোক্তির মতো, খানিকটা সত্য প্রকাশের দায়বদ্ধতায় আরও একবার সেই সন্ধ্যাটাকে অনর্গল করে দিল দূর্বা। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল, সঙ্গে দমকা হাওয়াও ছিল। নিদিষ্ট সময়ের কিছু আগেই সন্ধ্যা নেমেছিল সেদিন। সেই সময় কাননদি এসে দূর্বার বাবা সনৎবাবুর পায়ের উপর আছড়ে পড়ে বলল, ‘মেসোমশাই, আমার টুনিকে ওরা ধরে নিয়ে গেল! আমি এখন কী করব?’ বলে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগল। সনৎবাবুর অনেক বয়স হয়েছে, আগের মতো প্রভাবপ্রতিপত্তিও নেই— তিনি বললেন, ‘বিল্ব-দূর্বা, যদি কিছু পারিস কর। মেয়েটাকে বাঁচা!’ কাননদি ওই ছোট্ট টুনিকে নিয়ে বিধবা হয়েছিল। এবাড়ি-ওবাড়ি রান্নার কাজ, সেলাই, কাগজের ঠোঙা বানিয়ে কোনওক্রমে বেঁচে ছিল মা ও মেয়ে। দূর্বার মায়ের অগাধ স্নেহ ছিল কাননের উপর। আপদে-বিপদে তিনিই ছিলেন কাননের বড় আশ্রয়। টুনির বয়স তখন চোদ্দ-পনেরো, কাজলা গার্লস ইস্কুলে ক্লাস এইটে পড়ছে। চার আবহমানকাল ধরেই পার্বতীপুর শান্ত ঝিমধরা আর পাঁচটা গ্রামের মতোই ছিল! হঠাৎ ক’বছরের মধ্যে সেই পার্বতীপুর যেন জেগে উঠল! পুরনো রাস্তার উপর থেকে যানবাহনের চাপ কমাবার জন্য পুরন্দরপুর থেকে একটা নতুন রাস্তা পার্বতীপুরকে দু’ভাগ করে বর্ডার ছুঁয়ে সোজা নর্থ বেঙ্গলের দিকে চলে যেতেই গা-ঝাড়া দিল পার্বতীপুর সহ গোটা এলাকাটা। নতুন নতুন বাড়িঘর ধাবা পেট্রল পাম্প গজিয়ে উঠে জায়গাটার চরিত্রটাই পালটে দিল! হু হু করে বাড়তে লাগল জমির দাম। সারাদিন নতুন রাস্তা দিয়ে অগুনতি লরি মাল নিয়ে যাওয়া-আসা করতে লাগল। নতুন নতুন লোকে অঞ্চলটা ভর গেল রাতারাতি। এরই পাশাপাশি অবধারিতভাবে ডিজেলকালু বলে একটি ছেলে তার দলবল নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল! দাঁড় করানো লরি থেকে ডিজেল চুরি করা দিয়েই তার উত্থান ঘটেছিল। আস্তে আস্তে খুন ডাকাতি ছিনতাই জুলুম করে টাকা আদায়ের পাশাপাশি মেয়ে-বউদের বিরক্ত করা তো ছিলই, এক সময় বেপরোয়া হয়ে গরিব ঘরের মেয়েদের উপর চরম অত্যাচারও শুরু করে দিল কালুর দলবল। এলাকায় যারা রাজনীতি করত, তদেরও দমিয়ে ফেলল ডিজেলকালু। সমর পাল দয়াল নন্দী মোহন মিত্তির— তিন দলের তিন নেতাই চুপসে গিয়ে মুখ বন্ধ করে রইল। এলাকার এমএলএ আবার তিন দলের বাইরে চতুর্থ দলের। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে একদা দল থেকে বিতাড়িত— নিজের ক্যারিশমায় জিতে গিয়েছেন। পার্বতীপুর সংলগ্ন এলাকায় তেমন ভোটভিত্তিও নেই, তিনি দূরে বসে ব্যাপারটা উপভোগ করতে লাগলেন। পাল নন্দী মিত্তির— তিন নেতাকেই কালু আলাদা করে বুঝিয়ে দিয়েছিল, ‘কোন শালা পুটকিবাজি করলে পেছনে চাকু ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে দেব।’ পার্বতীপুরের পাশের গ্রাম কাঁটাখালির একটা পোড়োবাড়িতে ডিজেলকালুর রাজধানী। রাত আটটা নাগাদ তিন-চারজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দূর্বা যখন কাঁটাখালি পৌঁছল, ডিজেলকালুর দলের তিন-চারজন তখন ঘরের মেঝেতে বস মদ খাচ্ছে। ঘরের বাইরে দুটো বাইক দাঁড় করানো। টুনি ঘরের এক কোণে দু’হাঁটুর উপর মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তখনও মহাসর্বনাশ হয়নি বোধহয়য়, দূর্বাকে দেখেই ‘মামা!’ বলে দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। ওরা কিছু বলল না, জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে দেখল দূর্বার চলে যাওয়া। বাজারের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছেছে, এমন সময় দু’টো বাইকে কালুর দল এসে দূর্বার পথ আটকাল। মুহুর্তের মধ্য ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে দূর্বা চিৎকার করল, টুনি, পল্টুমামার সঙ্গে দৌড়ো— দৌড়ে পালা! দূর্বাও উল্টোদিকে ছুট লাগাল, বাইক থেকে নেমে দু’জন দূর্বার পিছনে ছুটল। খানিকটা দৌড়নোর পরে, যখন ওরা দূর্বাকে প্রায় ধরে ফেলেছে, সামনে ইব্রাহিমচাচার মাংসের দোকান দেখতে পেয়ে তার ভিতর ঢুকে পড়ল দূর্বা। ছোটো দোকান, পেছনোর পথ নেই— কালুর হাতে উদ্যত ওয়ান শটার— মাংস কাটার উঁচু চাতালটার উপর দূর্বাকে চিত করে ঠেসে ধরেছে কালু— কালুর সঙ্গী বলছে, ‘কানের নীচে, কানের নীচে ঠেকিয়ে মার। শালা, কচি মালটাকে ভোগে লাগাতে দিল না। নিজে খাবে— জন্মের মতো খাওয়াবো আজ হারামিকে। নেতাগিরি মাড়ানো বের করে দে। ঘোড়া টান— চাতালের উপর দূর্বার ডান হাতটা বাঁচার মতো একটু খড়কুটো খুঁজছিল… মাংস কাটবার ভারী একটা চোপার হাতে ঠেকল… ঠান্ডা বহুস্নাত নির্মম চোপার… চোখের পলকে এক ঝটকায় একটু সোজা হয়ে দূর্বা সেই চপারটা একটু বেঁকিয়ে বসিয়ে দিল কালুর বাঁ কাঁধের উপর… একটা লাথি মারতেই কালু দোকানের বাইরে ধুপ করে ছিটকে পড়ল। তারপর আর ওঠেনি কালু। দূর্বার শরীরটা একটু কাঁপছে। তমালিকা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে দু’চোখ বুজিয়ে ফেলল। হিরণ বলল, ‘এটা এত সরাসরি না করে অন্যভাবেও করা যেত না? একটু বুদ্ধি খাটিয়ে, ডিপ্লোম্যাটিক ওয়েতে? এদেরকে খুব ট্যাকটফুলি ট্যাকল্ করতে হয়। সঙ্গে পাবলিক সাপোর্ট রাখতে হয়। মার্ডার কোনওদিন সলিউশন হতে পারে?’ দূর্বা বলল, ‘টুনিকে সেদিন বাঁচানোটা বা আমার বেঁচে থাকাটা ঠিক ডিপ্লোম্যাটিক ওয়েতে হয়নি, বলতে চাও?’ হিরণ একটু দমে গিয়ে বলল, ‘না, ঠিক তা বলছি না, পৃথিবীতে কত ক্রাইমই তো ঘটছে, আমরা কি তার সব কটার প্রতিকার করতে পারি? কাজেই… তোর উচিত ছিল, প্রথমেই পুলিশে খবর দেওয়া।’ দূর্বা অবাক হয়ে বলল, ‘ওই দুর্যোগের মধ্যে এগারো কিলোমিটার দূরের থানায় খবর দেওয়া… ধরে নিলাম, পুলিশ আসত, খবর পেয়েই আসত, টুনিকে অক্ষত পেতাম? কাননদিকে মুখ দেখাতে পারতাম? আমার যা হল, তার জন্য একটুও আফসোস নেই। কেন নেই, জানো হিনুদা? কারণ আমার বিরুদ্ধে পুলিশ একটা সাক্ষীও জোগাড় করতে পারেনি। ইব্রাহিমচাচাকে খুব চেষ্টা করেছিল ম্যানেজ করার, পারেনি। যেদিন খালাস পেলাম, শ’য়ে শ’য়ে মেয়েরা কোর্টে হাজির হয়েছিল। ওই দিনের পর কালুর দলটা রাতারাতি ভ্যানিশ হয়ে গেছিল।’ হিরণ হালকা ব্যঙ্গ করল, ‘তুই তো তাহলে ওখানে রীতিমতো হিরো কি বলিস?’ দূর্বা বলল, ‘হিরো কি না জানি না, তবে একটুও অনুতপ্ত নই।’ ঘর পুরো অন্ধকার, কিন্তু দূর্বার ঘুম আসছিল না। অনেকদিন পরে আবার সেই দুঃসহ যন্ত্রণা তার স্নায়ুপুঞ্জকে টানটান করে রাখছিল। বিয়ের আগে পর্যন্ত এই ঘরটা বোধহয় হেনারই ছিল। দেওয়ালে তার অল্পবয়সের একটা ফটো, বিকেলবেলায় দেখেছে, দেওয়াল আলমারির ভিতর কয়েকটা পল্-সায়েন্সের বই, একটা শুকিয়ে যাওয়া নেলপালিশের শিশি, মরচেধরা সেফটিপিন। হিরণের বিয়ে হয়েছিল ভাড়াবাড়িতে থাকতে, এ ঘরের দেওয়ালে তবু শুকনো বসুধারার বিবর্ণ মলিন চিহ্ন দূর্বাদলকে এক নির্ঘুম শেবরাত্রির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। জেলকাস্টডিতে থাকবার সমর সে হেনার একটা ছোটো চিঠি পেয়েছিল : ‘ভাবলেও লজ্জাঘৃণায় মনটা অবশ হয়ে আসে— একটা খুনির সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল! যার সঙ্গে সারা জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু যাকে দিয়েছিলাম সে মানুষ খুন করে জেল খাটছে! ছাড়া পাওয়ার পর কেউ যেন কোনও দাবি নিয়ে এসে আমার সামনে না দাঁড়ায়, এইটুকু দয়া করলে বাধিত হব।’ চিঠিটা আজও দূর্বার পার্সের ভিতরে আছে। বিছানায় শুয়ে হিরণ তমালিকাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি দূর্বার সব কথা বিশ্বাস করলে?’ তমালিকা বলল, ‘অবিশ্বাসের কী আছে? মানুষ বাঁচতে এবং কারওকে বাঁচাতে গেলে এরকমই করে। সবাই তো আর হিসাব কষে সব দান চালতে পারে না।’ হিরণের ডান হাত তমালিকার শরীর পরিক্রমা করছিল। সে চাইছিল, তমালিকা সাড়া দিক। তমালিকা সাড়া দিচ্ছিল না। খাওয়ার টেবিলে হিরণ তো আভাসে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে, এভাবে নিজের জীবনটা নষ্ট করা উচিত হয়নি দূর্বার। তমালিকার দু’চোখে মুনের মুখটা ভেসে উঠল, খাটের পাশেই আলাদা একটা বেবিকটে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে মুন। টুনির জায়গায় যদি সেদিন মুন থাকত? যদি মুনকে কেউ ওভাবে ধরে নিয়ে যেত, কেউ যদি তখন তাকে বাঁচাতে এসে নিজেও বিপন্ন হত, হিরণ দূর্বাকে যা বলল আজ, তমালিকাও কি তাই বলত? বিতৃষ্ণায় মুখের ভিতরটা শুকিয়ে আসছিল, হিরণের তৃষ্ণার্ত ঠোঁট দু’টোকে প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, ‘হাতটাকে বুকের উপর থেকে সরিয়ে নাও, ভালো লাগছে না!’ হিরণ কামার্তস্বরে বলল, ‘ও তো বলেছ কাল সকালেই চলে যাবে, তবুও তুমি সহজ হবে না?’ পাঁচ অন্য দিন বেশি রাতে হিরণ মোবাইল বন্ধ করে রাখে, আজ এইসব কথাবার্তায় সেটা বন্ধ করতে ভুলে গেছে। রাত প্রায় দুটো তখন, সেই সময় হিরণের মোবাইলে সেই অভিমানী সুরটা গুমরে উঠল! স্ক্রিনের নীলাভ পটভূমিতে হলুদ অক্ষরে হেনার নাম! রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই ওদিক থেকে হেনার আর্তস্বর ঝাঁপিয়ে পড়ল কানে, ‘দাদা, মুনকে সঙ্গে নিয়ে একটু আসবি? ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে ওকে, হয়তো আর কোনওদিন তোদের দেখতে পাব না। আমি আর পারছি না রে! যদি রাতটা কাটে দেখা হবে— তোদের জন্য অপেক্ষা করব, ছাড়ছি!’ হাহাকারের মতো শোনাল কথাগুলো। রাত্রির নৈঃশব্দের কল্যাণে তমালিকাও হেনার শুনতে পেল। বিছানায় উঠে বসে কতকটা আপন মনেই বলল, একটা মেয়ে তিলতিল করে মরার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা তাকে উপদেশ দিচ্ছি, সহ্য কর, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ যদি হেনা ওবাড়ি থেকে চলে আসে, সে আমাদের লায়াবিলিটি হয়ে উঠবে। আমাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য একটু কম হয়ে যাবে, সমাজে নানা কথা উঠবে, কত ভয় আমাদের, তাই না? ওঁর বুক পিঠে উরুতে পিছনে কত যে কালশিটের দাগ— আমি দেখেছি, তবুও ভেবেছি, সব ঠিক হয়ে যাবে!’ তমালিকার গলাটা ধরে এল। হিরণ তার মাথায় হাত রেখে বলল, ‘তমাল, ভেঙে পড়ো না, ভুল যখন করেই ফেলেছি, তার তো চারা নেই! এর জন্য দায়ী আমি আর ওই বাস্টার্ড কল্যাণ সেন!’ তমালিকা বলল, ‘ওঘর থেকে দূর্বাকে ডেকে তুলে দোখো না, অসীমের ট্যাক্সিটা পাও কি না! পনেরো মিনিটেই লেকটাউন পৌঁছে যাবে।’ হিরণ বলল, ‘এখন কি আর অসীম সোজা হয়ে স্টিয়ারিংয়ে বসতে পারবে? আর ঘণ্টাদেড়েক পরেই তো আলো ফুটবে…’ ভোরবেলায় হিরণ বেরিয়ে যাচ্ছে, তমালিকা বলল, ‘দূর্বাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে? সঙ্গে একজন থাকা ভাল।’ হিরণ বলল, ‘নাহ, একেই দিনরাত দূর্বাকে জড়িয়ে বোনটাকে হ্যাটা করছে— প্রবীরকে তুলে নেব বাড়ি থেকে। জানি না, কী দেখব গিয়ে…।’ তমালিকা বলল, ‘যা-ই দেখো, হেনাকে রেখে আসবে না ওখানে, সঙ্গে করে নিয়ে আসবে।’ একটু বেলায় ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে দূর্বা বলল, ‘বউদি আমি এবার যাব। ঘুম থেকে উঠতে খুব দেরি হয়ে গেল, স্যরি।’ তমালিকা বলল, ‘এখনই কী যাবে! তোমার দাদা লেকটাউন গেল— ফিরুক! ও না-ফেরা পর্যন্ত থেকে যাও, প্লিজ। মুনকেও বলে যাবে না?’ দূর্বা মাথা নাড়ল, ‘অনেকটা সময়ই তো থাকলাম, খুব ভাল লাগল, তোমাদের ভুলব না।’ দূর্বা সিঁড়ি দিয়ে নামছে, পিছনে তমালিকা। সিঁড়ির গোড়ায় পৌঁছে দূর্বা যখন নিচু হয়ে জুতোর ফিতে বাঁধছে তমালিকা বলল, ‘একটা রিকোয়েস্ট করব, রাখবে?’ তমালিকার চোখে এখন আর কালকের সেই বিরক্তি অপ্রসন্নতা নেই, তার মুখখানা এমনিতেই সুন্দর, কাঠিন্য থেকে কোমলতায় পৌঁছে সে আরও কমনীয় হয়ে উঠেছে। দূর্বা মুখ তুলে তাকাতে তমালিকা বলল, ‘আজ হোক, কাল হোক, হেনা এখানে চলে আসবে। তাকে বলব, নিষ্ঠুর অমানুষ বা স্বার্থপর কাপুরুষের চেয়ে জেন্যারাস্ মার্ডারার বেশি অনেস্ট! হেনা আমার কথা অবিশ্বাস করবে না— তুমি অভিমান পুষে রাখবে না, কথা দাও।’ বাইরের সিঁড়ির দিকে পা বাড়িয়ে দূর্বা বলল, ‘বউদি, তোমার ননদাই তো হিনুদার এক এম.ডি-র শালা, তাই না?’ তমালিকা মাথা নীচু করে বলল, ‘হ্যাঁ, কল্যাণ সেন, গত বছর রিটায়ার করেছেন।’ দূর্বা বলল, ‘উনিই তো ওঁর শালা পার্থর সঙ্গে হেনার বিয়ের প্রপোজালটা দিয়েছিলেন, হিনুদা সেটা অয়াকসেপ্ট করেছিল। তাই না?’ তমালিকা নীরব। দূর্বা যেন আপনমনেই বলল, ‘শ্যালকের শ্যালকের উপর ওঁর একটা কর্তব্যও ছিল, ভদ্রলোককে ভালই বলতে হবে। হিনুদাকে উনি ঠকাননি। বরাবরই দেখেছি লুডো খেলতে বসলে হেনার পাকা ঘুঁটি সবসময় সবচেয়ে বড়ো সাপটার মুখেই পড়ত! এ খেলাটাও তেমনই ছিল... হিনুদার ঘুঁটি পড়েছিল মইয়ের গোড়ায়, আর হেনার ঘুঁটি… তোমাদের আর দোষ কী...’ তমালিকা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে আঁচলের কোণ কামড়ে ধরে নিঃশব্দে পুড়ে যাচ্ছে…।
- দেশ কাল । অশোক চৌধুরী | Manikarnika.Pub
দেশ কাল । অশোক চৌধুরী বিষয় : উপন্যাস প্রচ্ছদ : গার্গী চৌধুরী সম্পাদনা: শুভাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়, শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশক : মণিকর্ণিকা প্রকাশনী মূল্য : ₹ ৮০০ যোগাযোগ (Call or WhatsApp) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি অংশ এখানে দেওয়া হল। কালখণ্ড: ১৮৩৫ - ১৮৬৬। ফুলুই গ্রাম থেকে ভাউল চড়ে নদীপথে কাশী যাত্রা করলেন শিবচরণ। তার পুত্র বিমলাচরণ সেখানে আয়ুর্বেদ শিক্ষারত। গঙ্গার স্রোত বেয়ে চললেন তিনি। আর সম্মুখযাত্রায় আগুয়ান হল কাল। কোলকাতায় স্থাপিত হল পাবলিক লাইব্রেরি। এক জৈষ্ঠ্যে কামারপুকুরে কালোমেঘের বুকে ধপধপে বকের উড়াল থেকে ভাবে অচৈতন্য হল বালক গদাধর। কালক্রমে ফুলুইয়ের বিমলাচরণ হয়ে উঠলেন প্রতিষ্ঠিত কবিরাজ। তার ছেলে পুরুষোত্তমও ভারি ধীমান বালক। পরিবার হেমাঙ্গিনী অল্পবিস্তর লেখাপড়া জানেন। ছেলেকে পড়ান তিনি। ষোলো আনির জমিদার নৃসিংহ নারায়ণের পুত্রকে কঠিন ব্যাধি থেকে উদ্ধার করেন বিমলা। তাঁর অনুপস্থিতিকালে ফুলুইয়ের চরিত্রহীন জমিদার পুড়িয়ে দেয় তাঁর ঘরবাড়ি, স্ত্রীকে। নিহত হয় সর্বক্ষণের সুখ-দুঃখ সাথী নাজাকৎ। পুরুষোত্তম যায় হারিয়ে। কোলকাতায় নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বড়ো হয় সে। তার সঙ্গে সঙ্গেই পরিণত হয় বঙ্গসমাজ। দেশের হিতকল্পে আত্মনিয়োগ করেন বিদ্যাসাগর, হরিশ মুখোপাধ্যায়, গিরিশ ঘোষ, দীনবন্ধু মিত্র। পাশ করা ডাক্তার হয় পুরু। ভেতরে ভেতরে সে নিরন্তর সন্ধান করে চলে কবিরাজ পিতার। হারিয়ে ফেলা শৈশবের। জন্মভিটা থেকে আকস্মিক উৎপাটনের রহস্য জানতে চায় সে। এহেন নানান চরিত্রের জিজ্ঞাসায়, উত্তর প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ভেতর দিয়ে উন্মোচিত হয় এক উজ্জ্বল কালপর্যায় – বাংলার উনবিংশ শতক। দুই খণ্ডে সমাপ্য এই ধ্রুপদী উপন্যাস বাংলাসাহিত্যে এক আশ্চর্য ও মেধাবী সংযোজন।
- Shipping Policy | Manikarnika.Pub
SHIPPING POLICY https://www.manikarnikaprakashani.com is committed to excellence, and the full satisfaction of our customers. https://www.manikarnikaprakashani.com proudly offers shipping services. Be assured we are doing everything in our power to get your order to you as soon as possible. Please consider any holidays that might impact delivery times. https://www.manikarnikaprakashani.com also offers same day dispatch. 2. SHIPPING All orders for our products are processed and shipped out in 4-10 business days. Orders are not shipped or delivered on weekends or holidays. If we are experiencing a high volume of orders, shipments may be delayed by a few days. Please allow additional days in transit for delivery. If there will be a significant delay in the shipment of your order, we will contact you via email. Delivery will be made within 2-5 day’s from the date of shipment. 3. WRONG ADDRESS DISCLAIMER It is the responsibility of the customers to make sure that the shipping address entered is correct. We do our best to speed up processing and shipping time, so there is always a small window to correct an incorrect shipping address. Please contact us immediately if you believe you have provided an incorrect shipping address. 4. UNDELIVERABLE ORDERS Orders that are returned to us as undeliverable because of incorrect shipping information are subject to a restocking fee to be determined by us. 5. LOST/STOLEN PACKAGES https://www.manikarnikaprakashani.com is not responsible for lost or stolen packages. If your tracking information states that your package was delivered to your address and you have not received it, please report to the local authorities. 6. RETURN REQUEST DAYS https://www.manikarnikaprakashani.com allows you to return its item (s) within a period of 7 days. Kindly be advised that the item (s) should be returned unopened and unused. 7. OUT OF STOCK ITEM PROCESS https://www.manikarnikaprakashani.com has the following options in the event there are items which are out of stock https://www.manikarnikaprakashani.com Wait for all items to be in stock before dispatching. 8. IMPORT DUTY AND TAXES When dealing with https://www.manikarnikaprakashani.com you have the following options when it comes to taxes as well as import duties:You will be required to settle the requisite fees when the items are arriving in the destination country. 9. ACCEPTANCE By accessing our site and placing an order you have willingly accepted the terms of this Shipping Policy. 9. CONTACT INFORMATION In the event you have any questions or comments please reach us via the following contacts: Email - manage.business.finances@gmail.com
- নোটিশের জীবন । শিবানী ভট্টাচার্য দে | Manikarnika.Pub
নোটিশের জীবন । শিবানী ভট্টাচার্য দে বিষয় : গল্প সংকলন প্রচ্ছদচিত্র : আহমেদ সফারুদ্দিন প্রচ্ছদ, সম্পাদনা ও গ্রন্থভাস্কর্য : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশনা : মণিকর্ণিকা প্রকাশনী মূল্য : ₹ ২৮০ যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির কিছু অংশ এখানে দেওয়া হল। রজনীগন্ধার মালা মা ছবি হয়ে গেছে অনেকদিন। মায়ের ছবিতে রজনীগন্ধার মালা ঝোলাই বচ্ছরকার দিনটিতে। জিয়ন্তে মা কখনও রজনীগন্ধা দ্যাখেনি। আমাদের বাড়ির চারধারের ছোটো বাগানে লঙ্কা, বেগুনের সঙ্গে ছিল টগর-বেলি-গন্ধরাজ-শিউলি-চাঁপা। রজনীগন্ধা ওই তল্লাটে পাওয়াই যেত না। তখন ফুলের দোকানও ছিল না। পুজোপার্বণে নিজেদের আর পড়শিদের বাগানের ফুল দিয়েই কাজ চলে যেত। মা-ই কিন্তু ছোটোবেলায় আমাদের রজনীগন্ধার নাম বলেছিল। প্রাইমারি স্কুলে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন হতো— পাঁচটা গন্ধযুক্ত ফুলের নাম করো, আর তার উত্তরে মা আমাদের শিখিয়েছিল বেলি-টগর-গন্ধরাজ-চাঁপা-রজনীগন্ধা। শিউলি বা জুঁই ফুলের নাম বললেও হতো, কিন্তু মা যেন চাইত আমরা রজনীগন্ধা নামটা অবশ্যই বলি। নামটা অবশ্য আমারও খুব ভালো লাগত। অন্যান্য ফুলের নামের তুলনায় বেশি মিষ্টি, বেশি অভিজাত। শিউলি, টগর, জুঁই পাশের বাড়ির মেয়ে, রজনীগন্ধা যেন দূরের রাজকন্যা। মা আমাদের বলেছিল যে রজনীগন্ধা আমাদের আশেপাশে কেন, গোটা জেলায় কোথাও হয় না। তখন আমি ভেবেছিলাম, আমাদের এই শেয়ালডাকা জলা-টিলা-জঙ্গলের দেশ, গরুছাগলচরা মাঠ, রাখাল-চাষাচলা মাটির রাস্তা, বাঁশ-মাটি-খড়ের ঘর— এর মধ্যে এত মিষ্টি নামের ফুলটা হতেই পারে না। ওই ফুল যেখানে হয়, সেটা নিশ্চয়ই অন্যরকম। ছবিতে সুন্দর দেশ যেমন দেখায়, তেমনি সুন্দর জায়গায়। মাও রজনীগন্ধা দ্যাখেনি। কিন্তু মার ফুলটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল, বুঝতাম। বিজ্ঞান বইতে ছবি ছিল, আমাদেরও দেখিয়েছিল। ছোটো কল্কে ধরনের ফুল। ছবি দেখে আমার তেমন মন ভরেনি, কিন্তু ভেবে নিয়েছিলাম, আসল ফুল ছবির চাইতে অনেক বেশি সুন্দর হবে। কিন্তু রজনীগন্ধার গাছ কেমন হয়, ফুল ঘন্টা বা গন্ধরাজের মতো এককভাবে, না অতসীর মতো মঞ্জরী হয়ে, না করবীর মতো থোকা থোকা ফোটে, তা মা বা আমরা কেউ জানতাম না। মা আমাদের সবসময়েই বলত, তোমরা বড়ো হও, লেখাপড়া শিখে মানুষ হও, কত কিছু নতুন দেখতে পাবে, কত নতুন জায়গায় যেতে পাবে, কত ভালো ভালো জিনিস খেতে পাবে। আমি কল্পনা করতাম, বড়ো হলে আরও অনেক কিছুর সঙ্গে রজনীগন্ধা কোথায় ফোটে সেখানে যাব, মাকেও সঙ্গে নিয়ে দেখাব। মা বলত, তখন বাগানে রজনীগন্ধার গাছ লাগাবে। মা-ই আমাদের ছোটো বাগানে ফুলগাছগুলোর যত্ন করত। দরকার মতো জল দিত, গাছের গোড়ায় দিত সার-মাটি, আগাছা হলে তুলে ফেলত। মায়ের যত্নে সতেজ সবুজ গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে উঠত। রোজ ভোরবেলা সেই ফুলবাগান থেকে পুজোর ফুল তোলা ছিল মার প্রথম কাজ। তারপর ঘরের বাসিকাজ সেরে চান করে রান্নাঘরে ঢুকত। চা করে বাবাকে দিয়ে একটুখানি নিজেও খেত। তারপর চান করতে তাড়া লাগাত আমাদের। ভাতে ডালের পুঁটুলি ফেলে দিয়ে আমাদের জন্য ভাত চড়াত মা, হয়ে গেলে পুঁটুলি খুলে সেদ্ধডালে তেল নুন কাঁচালঙ্কা মেখে সেই দিয়ে ভাত খেতে দিত। ডাল না হলে আলু ঝিঙে ঢ্যাড়স ভাতেও চলত। এই দিয়েই খেয়ে আমরা হুড়মুড়িয়ে স্কুলে যেতাম। মাকে সারাদিন বসতে দেখতাম না। সকাল থেকে কাজ, দুপুরে রান্নাখাবার পর বড়োজোর পনেরো মিনিট আধঘন্টার বিশ্রাম। তারপর কুয়ো থেকে জলতোলা, গাছের যত্ন, বিকেলের গোছগাছ, ছেঁড়াফাটা সেলাই, তারপর সন্ধে দিয়ে আমাদের পড়তে বসানো, তারপর রাতের রান্না। একসময় কাজ করতে করতে নিজেকে ক্ষইয়ে ক্ষইয়ে মায়ের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল। আমরা তখন নিজেদের জীবন জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত। মাকে আর রজনীগন্ধার গাছ দেখানো হল না, মায়ের বাগানে রজনীগন্ধার গাছ লাগানো হল না। মাও আর শেষের দিকে বলত না। তার আরও অনেক ইচ্ছের মতো এটাও অপূর্ণই থেকে গেল। তাই চিকিৎসার জন্য শহরে আনার পর যখন মা মারা গেল, তার সাধের কথা মনে রেখে রজনীগন্ধার মালা দিয়ে খাট সাজিয়ে দিয়েছিলাম। এবং তারপরেও বছর বছর মার মৃত্যুদিনে ছবিতে রজনীগন্ধার মালা ঝোলাই। কত বছর পরে ট্রেনে যেতে যেতে দেখলাম বড়ো বড়ো রজনীগন্ধার খেত ধানজমির মাঝখানে, রেললাইনের ধারে। খেতের ধারে ধারে লাইন করা গাঁদার গাছ, মাঝে মাঝে জবাগাছও। তবু কেমন যেন ছাড়াছাড়া, সব মিলিয়েও মায়ের সেই ছোটো বেল জুঁই চাঁপা শিউলির বাগানের মতো ভালো লাগল না, কীসের যেন অভাব। দেখলাম, ফুলের খেত ন্যাড়া করে ফুল, কুঁড়ি কেটে কেটে তোলা হচ্ছে। কুঁড়িতেই ফুলগুলো তোলা হচ্ছে, বোঝাই করা হচ্ছে গাড়ি, বাজারে যাবে। ভাগ্যিস মা ফুলের খেত দেখেনি। দেখলে তার মোটেই ভালো লাগত না। মা তো বাগান দেখতে চেয়েছিল।
- About Us | Manikarnika.Pub
About Us A bilingual (Bengali and English) book publication centered at Chandannagar in Hooghly district, West Bengal, India. Our titles are available from our online store ('Buy our titles'), Amazon.in and from several physical outlets at College Street, Kolkata. In addition, we promptly ship books ordered at our WhatsApp no: 8240333741. Inviting original manuscripts and translation works encompassing Novels, Short stories, Essays, Personal Proses, Poetry, Travel Stories, and any kind of thoughtful content. Email us your manuscript at : manikarnika.pub@gmail.com
- Privacy Policy | Manikarnika.Pub
Privacy Policy for Magic Seeds Books LLP At Manikarnika prakashani, accessible from https://www.manikarnikaprakashani.com , one of our main priorities is the privacy of our visitors. This Privacy Policy document contains types of information that is collected and recorded by Manikarnika prakashani and how we use it. If you have additional questions or require more information about our Privacy Policy, do not hesitate to contact us. Our Privacy Policy was created with the help of the Privacy Policy Generator . Log Files Manikarnika prakashani follows a standard procedure of using log files. These files log visitors when they visit websites. All hosting companies do this and a part of hosting services' analytics. The information collected by log files include internet protocol (IP) addresses, browser type, Internet Service Provider (ISP), date and time stamp, referring/exit pages, and possibly the number of clicks. These are not linked to any information that is personally identifiable. The purpose of the information is for analyzing trends, administering the site, tracking users' movement on the website, and gathering demographic information. Cookies and Web Beacons Like any other website, Manikarnika prakashani uses 'cookies'. These cookies are used to store information including visitors' preferences, and the pages on the website that the visitor accessed or visited. The information is used to optimize the users' experience by customizing our web page content based on visitors' browser type and/or other information. Google DoubleClick DART Cookie Google is one of a third-party vendor on our site. It also uses cookies, known as DART cookies, to serve ads to our site visitors based upon their visit to www.website.com and other sites on the internet. However, visitors may choose to decline the use of DART cookies by visiting the Google ad and content network Privacy Policy at the following URL – https://policies.google.com/technologies/ads Our Advertising Partners Some of advertisers on our site may use cookies and web beacons. Our advertising partners are listed below. Each of our advertising partners has their own Privacy Policy for their policies on user data. For easier access, we hyperlinked to their Privacy Policies below. Google https://policies.google.com/technologies/ads Privacy Policies You may consult this list to find the Privacy Policy for each of the advertising partners of Manikarnika prakashani. Third-party ad servers or ad networks uses technologies like cookies, JavaScript, or Web Beacons that are used in their respective advertisements and links that appear on Manikarnika prakashani, which are sent directly to users' browser. They automatically receive your IP address when this occurs. These technologies are used to measure the effectiveness of their advertising campaigns and/or to personalize the advertising content that you see on websites that you visit. Note that Manikarnika prakashani has no access to or control over these cookies that are used by third-party advertisers. Third Party Privacy Policies Manikarnika prakashani's Privacy Policy does not apply to other advertisers or websites. Thus, we are advising you to consult the respective Privacy Policies of these third-party ad servers for more detailed information. It may include their practices and instructions about how to opt-out of certain options. You can choose to disable cookies through your individual browser options. To know more detailed information about cookie management with specific web browsers, it can be found at the browsers' respective websites. What Are Cookies? Children's Information Another part of our priority is adding protection for children while using the internet. We encourage parents and guardians to observe, participate in, and/or monitor and guide their online activity. Manikarnika prakashani does not knowingly collect any Personal Identifiable Information from children under the age of 13. If you think that your child provided this kind of information on our website, we strongly encourage you to contact us immediately and we will do our best efforts to promptly remove such information from our records. Online Privacy Policy Only This Privacy Policy applies only to our online activities and is valid for visitors to our website with regards to the information that they shared and/or collect in Manikarnika prakashani. This policy is not applicable to any information collected offline or via channels other than this website. Consent By using our website, you hereby consent to our Privacy Policy and agree to its Terms and Conditions.
- নিঃশব্দ পাহাড় । শুভদীপ বড়ুয়া | Manikarnika.Pub
নিঃশব্দ পাহাড় । শুভদীপ বড়ুয়া বিষয় : আফগানিস্তানভিত্তিক উপন্যাস প্রচ্ছদ : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশক : মণিকর্ণিকা মূল্য : ₹ ৬৫০ যোগাযোগ (Call or WhatsApp) : 8240333741 তথ্যসুত্র আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি অংশ এখানে দেওয়া হল। শাওর বিপ্লবের ঘূর্ণিপাকে দ্রুত বদলে যাওয়া আফঘানিস্তানে পা রাখে দাবা সাংবাদিক স্যামুয়েল পিটার্স। রাশিয়ার সরাসরি হস্তক্ষেপে ইসলামী দেশটিতে তখন শুরু হচ্ছে কম্যুনিস্ট শাসন। স্যামের সঙ্গে আলাপ হল মাহিলের। মাহিল! সমস্ত ঘূর্ণির মধ্যেও একাকিত্ব ও অনন্ত বিষাদভারে স্থবির এক মোহময়ী। রাশিয়ায় ডাক্তারি পড়তে গিয়ে ফেরেনি তার মা। পিতা মহসিন খান অভিযোগহীন, স্ত্রীর জন্য অপেক্ষারত। এবং, তিনি অপেক্ষা করেন এক নিঃশব্দ মৃত্যুর; যে নৈঃশব্দ্য বিরাজ করে রুক্ষ আফঘানিস্তানকে ঘিরে থাকা পাহাড়ে পাহাড়ে। নতুন জামানায় তার গায়ে ফুটে ওঠে রক্তাভ ছোপ¾ আফঘানিস্তানের নতুন পতাকা! একবার আফঘানিস্তান ত্যাগ করেও আবার ফিরে আসে স্যাম। মাহিল তাকে ডাকছে। মার্কিনি চর সন্দেহে গ্রেপ্তার হয় স্যাম। বহু চেষ্টার পর সে পালায়। কিন্তু তারপর? তিন খণ্ডে সমাপ্য এই সুদীর্ঘ উপন্যাসের প্রতিটি খণ্ডই স্বতন্ত্র, আশ্চর্য, ও অদ্বিতীয়।





