
বুদ্ধদেব । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নমো তস্স। কৌশিক সরকার


❛ ভারতবর্ষে বুদ্ধদেব মানবকে বড়ো করিয়াছিলেন। তিনি জাতি মানেন নাই, যাগযজ্ঞের অবলম্বন হইতে মানুষকে মুক্তি দিয়াছিলেন, দেবতাকে মানুষের লক্ষ হইতে অপসৃত করিয়াছিলেন। তিনি মানুষের আত্মশক্তি প্রচার করিয়াছিলেন। দয়া এবং কল্যাণ তিনি স্বর্গ হইতে প্রার্থনা করেন নাই, মানুষের অন্তর হইতে তাহা তিনি আহ্বান করিয়াছিলেন।
এমনি করিয়া শ্রদ্ধার দ্বারা, ভক্তির দ্বারা, মানুষের অন্তরের জ্ঞান শক্তি ও উদ্যমকে তিনি মহীয়ান করিয়া তুলিলেন। মানুষ যে দীন দৈবাধীন হীন পদার্থ নহে, তাহা তিনি ঘোষণা করিলেন।
এমন সময় হিন্দুর চিত্ত জাগ্রত হইয়া কহিল, ‘সে কথা যথার্থ— মানুষ দীন নহে, হীন নহে, কারণ মানুষের যে শক্তি— যে শক্তি মানুষের মুখে ভাষা দিয়াছে, মনে ধী দিয়াছে, বাহুতে নৈপুণ্য দিয়াছে, যাহা সমাজকে গঠিত করিতেছে, সংসারকে চালনা করিতেছে, তাহাই দৈবী শক্তি।’
সম্পূর্ণ বর্ষাকাল ভগবান ঋষিপত্তনের যে কুটিরে কাটিয়েছিলেন তাকে ‘মূলগন্ধকূটিবিহার’ বলা হয়। বোধিলাভের পর থেকে তিনি আজীবন যেখানে যে যে কুটিরে অবস্থান করেছিলেন সেই সব কুটিরকেই ‘গন্ধকূটিবিহার’ বলা হয়। সম্ভবত ভিক্ষুগণ ভগবানের কুটিরে পুষ্প প্রদান করতেন এবং সুগন্ধি দ্রব্য জ্বালতেন বলে এইরূপ নামকরণ হয়েছিল। আর ঋষিপত্তনের কুটিরে তিনি প্রথমবার অবস্থান করেছিলেন বলে হতে পারে তার নাম মূলগন্ধকূটিবিহার। এই কুটিরের ধ্বংসাবশেষ আজও বর্তমান সারনাথে বিদ্যমান।