Search Results
91 results found with an empty search
- Manuscript Submission | Manikarnika Prakashani
পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়ার নিয়মাবলী মণিকর্ণিকা, আশাবরী, ও পক্ষীরাজ তিনটি আলাদা আলাদা প্রকাশনী কেন?" মণিকর্ণিকা : সম্পূর্ণ প্রকাশনার খরচে বই প্রকাশিত হয়। আশাবরী : লেখক নিজখরচে (self-funded) বই প্রকাশ করতে পারেন। তবে পাণ্ডুলিপিটি একটি নির্দিষ্ট মানের বা তার উর্ধ্বে হতে হবে। পাণ্ডুলিপির মান নির্ধারণ করে প্রকাশনী। (এই মান নির্ধারণের পদ্ধতিটি লেখকের অনুরোধে সম্পূর্ণ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।) পক্ষীরাজ : শুধুমাত্র ছোটোদের বই প্রকাশিত হয়। প্রকাশনা-প্রযোজিত ও লেখক-প্রযোজিত দুধরনের বইই প্রকাশিত হয়। কী ধরনের পাণ্ডুলিপি পাঠাবেন? যে কোনো মৌলিক বিষয়ে অর্থপূর্ণ ও গুণমানসম্পন্ন বই প্রকাশে আমরা আগ্রহী। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, ব্যক্তিগত গদ্য, ভ্রমণকাহিনি, চিত্রনাট্য গবেষণাধর্মী পাণ্ডুলিপি সিনেমা, নাটক, সংগীত, চিত্রকলা, লোকশিল্প ইত্যাদি বিষয়ক পাণ্ডুলিপি অবাঙালি সাহিত্যের উৎকৃষ্ট অনুবাদ (বাংলায়) এবং অ-ইংরাজি ভাষার উৎকৃষ্ট অনুবাদ (ইংরাজিতে) উপরোক্ত যে কোনো বিষয়ে এক বা একাধিক পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি - বাংলার কিংবা ইংরাজি ভাষায় - প্রস্তুত করে আমাদের পাঠাতে পারেন ইমেলের মাধ্যমে। কীভাবে পাণ্ডুলিপি পাঠাবেন? শুধুমাত্র ইমেলে। ডাক মারফত নয়। কারোর হাতে নয়। পাণ্ডুলিপি পাঠানোর ইমেল: manikarnika.pub@gmail.com পাণ্ডুলিপি কেমন হবে? অনুগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি পাঠাবেন। কয়েকটি লেখা পাঠিয়ে নিছক পড়ে দেখবার অনুরোধ করবেন না। পাণ্ডুলিপি অবশ্যই হতে হবে ইউনিকোড (অভ্র বাংলা)-য় টাইপ করা, মাইক্রোসফট ওয়র্ডে। হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি পাঠাবেন না। বাংলা ওয়র্ডে টাইপ করা পাণ্ডুলিপি পাঠাবেন না। পাণ্ডুলিপির ওয়র্ড ফাইল ও পিডিএফ দুটিই পাঠাতে হবে ইমেলে। যে কোনো একটি পাঠালে তা গৃহীত হবে না। পাণ্ডুলিপির পাতায় এমন কোনো ওয়াটারমার্ক দেবেন না যা লেখাটি পড়তে অসুবিধা সৃষ্টি করে। পাণ্ডুলিপি পাঠানোর আগে পরে কোনো হোয়াটসএ্যাপ মেসেজ বা ফোন করবার প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রকাশনী থেকে বই প্রকাশের জন্য কেবলমাত্র লেখার গুণমানই যথেষ্ট। অন্য কোনো ধরনের যোগাযোগ বা সুপারিশের প্রয়োজন নেই। সেসবের বিন্দুমাত্র গুরুত্বও নেই। মনোনয়ন সংবাদ কীভাবে পাবেন? ইমেলে। আপনি ইমেল পাঠানোর অনধিক চার সপ্তাহের মধ্যে। এর মধ্যে আপনার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। মনোনীত হওয়ার শর্ত? আমরা দুটি নিরিখে আপনার পাণ্ডুলিপি বিচার করব: ১। গুণমান (Quality) ২। প্রচারযোগ্যতা (Marketability)। এই বিচার হবে অনুপুঙ্খ ও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। আপনার পাণ্ডুলিপির মান প্রকাশনী নির্মিত স্কেলে ৮ বা তার অধিক হলে (১০-এর মধ্যে) মণিকর্ণিকা প্রকাশনী বা পক্ষীরাজ প্রকাশনী থেকে আপনার বইটি প্রকাশিত হবে সম্পূর্ণ প্রকাশনীর খরচে (কনটেন্ট এডিটিং ছাড়া)। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাণ্ডুলিপিটির নিবিড় সম্পাদনা প্রয়োজন পড়ে। অর্থাৎ, প্রকাশনী মনে করে পাণ্ডুলিপিটিকে যথাযথ সম্পাদনা করলে তবে তার মান প্রকাশযোগ্য হবে। লেখাটির কেমন সম্পাদনা হতে পারে তার বিশদ নমুনা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। যদি লেখক রাজি থাকেন, তাহলে শুধুমাত্র সম্পাদনার খরচটি দিয়ে নিজের পছন্দের কোনো সম্পাদককে দিয়ে পাণ্ডুলিপিটি সম্পাদনা করিয়ে নিতে পারেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশনীও সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারে। এই পুঙ্খানুপুঙ্খ কনটেন্ট এডিটিংয়ের আর্থিক দায়ভার প্রকাশনী বহন করতে অক্ষম। কোনো বই মনোনীত হলে, ইমেল মারফত এই বিষয়ে আরও বিশদে সবটা জানিয়ে দেওয়া হয়। আপনার পাণ্ডুলিপির মান ৬ বা ৭ হলে (১০-এর মধ্যে) বইটি মণিকর্ণিকা বা আশাবরী প্রকাশনী (বা ছোটোদের বই হলে পক্ষীরাজ প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত হবে। কোন প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পাবে তা নির্ধারণ করবে প্রকাশনী। এই ক্ষেত্রে লেখককে বইপ্রকাশের আংশিক আর্থিক দায় বহন করতে হবে। লেখক রাজি থাকলে প্রকাশনীর পক্ষ থেকে বিশদে আলোচনা করে নেওয়া হবে। আপনার পাণ্ডুলিপির মান ৫ বা তার নীচে হলে (১০-এর মধ্যে) আশাবরী প্রকাশনী থেকে আপনার বইটি প্রকাশিত হবে। সেক্ষেত্রে লেখককে বইপ্রকাশের সম্পূর্ণ আর্থিক দায় বহন করতে হবে। তবে বই-বিক্রয়লব্ধ অর্থের প্রায় পুরোটাই লেখককে ফিরিয়ে দেব আমরা। Self-funding-এর নানাবিধ প্যাকেজ রয়েছে আমাদের। লেখক রাজি থাকলে প্রকাশনীর পক্ষ থেকে বিশদে আলোচনা করে নেওয়া হবে। যে কোনো পাণ্ডুলিপিই কি Self-funding-এর মাধ্যমে প্রকাশ করে আশাবরী? না। ভালো বই ছাড়া আমরা প্রকাশ করি না। কিছু কিছু পাণ্ডুলিপি থাকে যেগুলি খুব ভালোমানের লেখা হলেও সবসময় প্রচারযোগ্য (Marketable) হয় না। সেইরকম কিছু কিছু ম্যানুস্ক্রিপ্ট self-funding-এর মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করে থাকি এবং বইটির যথাসম্ভব প্রচার করবার চেষ্টা করি। এছাড়া কিছু কিছু পাণ্ডুলিপি যথাযথ সম্পাদনা করলে প্রসাদগুণসম্পন্ন বই হয়ে ওঠে। সেইধরনের পাণ্ডুলিপি self-funding-এর মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করি। আমরা চাই লেখক এইভাবে বইপ্রকাশের বিষয়টিকে একপ্রকার বিনিয়োগ (Investment) হিসেবেই দেখবেন। অনুগ্রহ করে আমাদের ওয়েবসাইটের Self-funded Publication পেজটি পড়ে দেখবেন।
- Policies | Manikarnika.Pub
Terms & Conditions Privacy Policy Shipping Policy Refund Policy About us. Contact us.
- বুদ্ধদেব । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Manikarnika.Pub
বুদ্ধদেব । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিষয় : নন-ফিকশন্ (বুদ্ধ-বিষয়ক) প্রচ্ছদ : ঋভু চৌধুরী প্রকাশনা : মণিকর্ণিকা মূল্য : ₹২৫০ যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি অংশ এখানে দেওয়া হল। এক মহামানবকে নিয়ে নানাসময় বড়ো যত্ন-শ্রদ্ধা-আশা ভরে লিখেছিলেন আর-এক মহামানব। দুজনের মাঝখানে আড়াই হাজার বৎসরকাল উর্মিময় সমুদ্র হয়ে আছে। এই অকূল পাথার পার করে তথাগতের দিকে আয়ত চোখ মেলে চেয়েছেন কবি রবীন্দ্রনাথ। সেই দৃষ্টি মাখানো রয়েছে এই বইয়ের সর্বাঙ্গে।
- আকুলপুরের পথ । বাসুদেব মালাকর | Manikarnika.Pub
আকুলপুরের পথ । বাসুদেব মালাকর বিষয় : গল্প প্রচ্ছদ : ঈশ্বর কর্মকার মণিকর্ণিকা প্রকাশনী মূল্য : ₹ ২২০ যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি গল্প এখানে দেওয়া হল। উড়োজাহাজের মালিক আস্ত একটা উড়োজাহাজের মালিক হওয়া কি চাট্টিখানি ব্যাপার! যত ছোটোই হোক না কেন, সেই উড়োজাহাজের জ্বালানি, দেখভাল, মেরামতের খরচা জোগানো কি মুখের কথা! অগাধ টাকা না থাকলে উড়োজাহাজ পোষা যায় না। কিন্তু, শুনলে বিশ্বাস হবেনা, বোষ্টমদিঘির হালদারবাড়ির গোরাচাঁদদের বাগানে একখানা আস্ত উড়োজাহাজ দিব্যি ডানা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে! খেলনা কিংবা মিস্ত্রি দিয়ে বানানো কাঠের বা টিনের জিনিস নয়, সত্যি উড়োজাহাজ! গোরাচাঁদের বাবা রূপচাঁদ হালদার দুটো আমগাছ এবং দুটো নারকেলগাছের গায়ে পুরনো শ্যালো-টিউবওয়েলের মোটা পাইপ দিয়ে আড়া বেঁধে, নীচে বাঁশের ঠেকনা দিয়ে, লোকজন ডেকে কবে, কীভাবে যে তার উপরে প্লেনটাকে চাপিয়েছিলেন, গোরাচাঁদের সে কথা ভালো করে মনে পড়ে না। কিন্তু সে ছোটোবেলা থেকেই জানে, প্লেনটা তাদের। ওটার জন্য তল্লাটের সবাই তাদের চেনে। তাঁদের বাড়িটার নামই হয়ে গিয়েছে ‘প্লেন-বাড়ি’! গোরাচাঁদরা এমন কিছু বড়োলোক নয়। বাগানের লাগোয়া বিঘে পাঁচেক পতিত জমি, আর মাঠে আট বিঘে ধানের জমি, এই হল তাদের সম্পত্তি। জমির আয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যেত। তা বলে সত্যি উড়োজাহাজের মালিক হওয়াটা খুবই অবিশ্বাস্য ব্যাপার! অনেকদিন আগের কথা হলেও, এলাকার খুব বুড়োমানুষরা আজও সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাটার কথা মনে করতে পারেন। গোরাচাঁদের বাবা রূপচাঁদ, তাঁর বাবা অর্থাৎ ঠাকুরদা কালাচাঁদ হালদার খুব খাটিয়ে লোক ছিলেন। যেমন প্রকাণ্ড চেহারা, তেমনই ছিল তাঁর গায়ের জোর! সারাদিন জমিতে খাটাখাটনি করেও তিনি ক্লান্ত হতেন না। পাঁচটা মুনিষের কাজ একলাই করতে পারতেন। একটু বড়ো হতেই ছেলে রূপচাঁদকেও তিনি চাষের কাজে লাগিয়ে দিলেন। রূপচাঁদের তখন কতই বা বয়স! ফাইভ থেকে সবে সিক্সে উঠেছেন। রূপচাঁদের খুব ইচ্ছে ছিল, লেখাপড়া শিখে শহরে গিয়ে চাকরি করবেন। বাপের এক হুঙ্কারে সে ইচ্ছে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। মনের দুঃখ চেপে রেখে তিনি বাপের সঙ্গে চাষবাসের কাজই করতে লাগলেন। তারপর একদিন সেই আশ্চর্য কান্ডটা ঘটল। আষাঢ়মাসের শেষ অথবা শ্রাবণের প্রথম দিক। সারাদিন আকাশ কালো হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ঝমঝম করে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। তা বলে বাপ-ছেলে কালাচাঁদ-রূপচাঁদের ছুটি নেই। শুধু তাঁরা কেন, গাঁয়ের কারোরই ফুরসত নেই। জমিতে একহাঁটু জল জমে গিয়েছে। সেই জলের ভিতর লাঙল দিয়ে কাদা করতে হবে। নাহলে সময়মতো আমনধান রোয়া যাবে না। সময়টা বাংলা তেরশো উনপঞ্চাশ সাল-টাল হবে। আকাশ দিয়ে মাঝেমাঝেই কান-ফাটানো গর্জন করে সুঁইচোরা পাখির মতো ছোটো ছোটো উড়োজাহাজ সারি বেঁধে তীব্রগতিতে উড়ে যায়! সারা দুনিয়া জুড়ে যুদ্ধ বেধেছে! কোথায় নাকি জাপানিরা বোমা ফেলেছে! তার শোধ নিতে কারা আবার জাপানেও বোমা ফেলে এসেছে৷ যুদ্ধটা ঠিক কোথায় হচ্ছে, গাঁয়ের কারোরই তা ঠিক জানা নেই। কিন্তু নানারকম নতুন নতুন গুজব শোনা যাচ্ছে রোজ। সেই সময় একদিন দুপুরবেলায় সেই মর্মান্তিক কাণ্ডটা ঘটল! রূপচাঁদ সেদিন বাবার সঙ্গে মাঠে যায়নি। কালাচাঁদ একাই মাঠে ছিলেন। আশপাশের জমিতেও দু-চারজন ছিল। কালাচাঁদ গরুর কাঁধ থেকে জোয়াল নামিয়ে আলের উপর, একটা সোঁদালগাছের তলায় বসে একটু বিশ্রাম নেবেন বলে ভাবছিলেন, একপশলা জোর বৃষ্টিও নামল হঠাৎ, এমন সময় দূর থেকে মাঠের অন্য লোকগুলো চিৎকার করে উঠল, ‘কালাচাঁদ! মাথা নিচু করে মাটিতে শুয়ে পড়, শুয়ে পড়! তোর মাথার ওপর...’ কালাচাঁদ চমকে উঠে কিছু বুঝবার আগেই দেখতে পেলেন, বিরাট একটা রুপোলি রঙের চামচিকের মতো উড়োজাহাজ প্রায় তাঁর মাথা ছুঁয়ে, কান-ফাটানো শব্দ করে কাদার ভিতর পুঁতে গিয়ে থেমে গেল। দু-হাত ছড়িয়ে দেবার মতো করে ডানা দুটো কাদার উপর, আর লেজের দিকের খাড়া পাখনাটা আকাশের দিকে উঁচিয়ে! সামনের দিকটায় কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে খুব আগুন জ্বলছিল— জলকাদায় আগুনটা বেশি ছড়াল না বটে, ঝমঝম করে বৃষ্টিও হচ্ছিল তখন, কিন্তু লেজটা বিকট শব্দ করে ছিটকে আলাদা হয়ে গেল! সবাই হইহই করে ছুটে এল। কিন্তু সাহস করে কেউ কাছে গেল না! কেউ বলল, ওর পেটের ভিতর বোমা রাখা আছে! কেউ বা বলল, এখুনি আবার উড়ে যাবে— তখন চরকির ঘায়ে, যে কাছে যাবে, তার মুন্ডু উড়ে যাবে! কথাটা রটে যেতে আশপাশের দশ গ্রাম থেকে দলে দলে লোকজন ছুটে আসতে লাগল। একবেলার ভিতর কালাচাঁদের জমিটা লোকে লোকারণ্য হয়ে চাষের দফারফা করে দিল। একটু সাহস করে সবাই এবার কাছে এসে ঘুলঘুলির মতো জানালা দিয়ে দেখতে পেল, ভিতরে গরুর শিং-এর মতো দুটো হ্যান্ডেল ধরে একজন ধবধবে সাদা সাহেব বসে আছে। সারা গা-মাথা, পোশাকপত্তর আগুনে পোড়া! দেহে প্রাণ আছে বলে মনে হল না। উপস্থিত লোকজনের কেউই ওটার দরজা খোলার কায়দা জানে না। কয়েকজন একটু টানাটানি করেও কিছু করতে পারল না। সবাই দূরে দাঁড়িয়ে হায় হায় করতে লাগল। ঝমঝম বৃষ্টিতে তখন বিরাট একটা মরা পাখির মতো প্লেনটা ভিজছে। এর দুদিন পরে চার-পাঁচটা জিপগাড়িতে করে একদল গোরা সৈন্য এসে প্লেনের দরজা খুলে লোকটাকে নিয়ে চলে গেল। মৃতদেহ থেকে বেশ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তখন। মানুষটা চলে গেল। কোন দেশের মানুষ, কেন, কাদের হয়ে সে আর এক দেশের মানুষকে মারবার জন্য যুদ্ধ করতে এসেছিল, কেউ জানতে পারল না। শুধু তার প্লেনটা কালাচাঁদের জমিতে রয়ে গেল। কেউ এসে আর সেটার খোঁজ নিল না। মাসখানেক পরে কালাচাঁদ জমি পরিষ্কার করবার জন্য প্লেনটাকে সরাতে লোক লাগালেন। তাদের সরদার বলল, ‘হাতুড়ি-শাবল দিয়ে না ভাঙলে সারানো যাবে না, কত্তা!’ কিশোর রূপচাঁদ বাবার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন, বললেন, ‘না বাবা, তুমি বলে দাও, ওটা আস্ত রেখেই সরাতে হবে! দুই শেষ পর্যন্ত কালাচাঁদের বাগানের এক কোণে প্লেনটার ঠাঁই হল। কালচাঁদ ছুতোর-কামার-মিস্ত্রি ডেকে জোড়াতালি দিয়ে, রংটং করে প্লেনটার আগের চেহারা খানিকটা ফিরিয়ে আনল। রঙের মিস্ত্রি ওটার মাথার দু-পাশে দুটো কাজলকালো টানা টানা চোখ এঁকে দিল। কিন্তু একটা নতুন উপদ্রবও শুরু হল! দশ-বিশ মাইল দূর থেকেও লোকজন দলে দলে আসতে প্লেন দেখবার জন্য! মানুষের পায়ের চাপে কালাচাঁদের সাধের বাগানের দফারফা হতে লাগল। তাদের পিছনে পিছনে চানাচুর, ঝালমুড়ি, ঘটিগরমের দোকানিরাও হাজির হয়ে গেল! সারাদিন শুধু লোক আর লোক! বেশ একটা মেলার মতো হয়ে উঠল ব্যাপারটা। তখন একজন বয়স্ক লোক পরামর্শ দিলেন, ‘এক কাজ করো, কালাচাঁদ। ওটার চারদিক চট দিয়ে ঘিরে দাও। তারপর চারআনার টিকিট কেটে লোক ঢোকানোর ব্যবস্থা করো। লালে-লাল হয়ে যাবে! আরে, ওটার পেছনও তো তোমার কম খরচ হয়নি!’ কথাটা বৈষয়িক কালাচাঁদের মনে ধরল। সারাদিনের শেষে হিসাব করে দেখা গেল, প্রথমদিনেই খরচের দ্বিগুণ টাকা উঠে এসেছে! তারপর যা হয়, আস্তে আস্তে লোকের উৎসাহ কমে এলো। মাস-তিনেক পরে দেখা গেল, প্লেনটা নিঝুম অন্ধকারে বাগানের এককোণে একাকী দাঁড়িয়ে আকাশের স্বপ্ন দেখছে। তার গা বেয়ে তেলাকুচো, জার্মানিলতা এগিয়ে আসছে। পেটের ভিতরে একজোড়া ভাম বাসা বেধেছে। কিন্তু ওটার জন্য কালাচাঁদের বাড়িটার নামই হয়ে গেল ‘প্লেনবাড়ি।’ কালাচাঁদ বছরে একবার ঘষেমেজে রং করে রাখে ওটাকে। মাটিতে পড়ে জং ধরে নষ্ট হবে বলে অনেক লোক লাগিয়ে মাচার ওপর তুলে রেখেছে। সারা বছরে একটা দিন¾ সেই যেদিন প্লেনটা ভেঙে পড়েছিল— বারোই শ্রাবণ, বাগান ঘিরে একটা মেলা বসে এখনও। তার আগে প্লেনটাকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন গোরাচাঁদের মা অসীমা মইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে ওটাকে স্নান করিয়ে কপালে একটা বড়ো সিঁদুরের টিপ পরিয়ে পুজো করে। এভাবেই অনেকদিন কেটে গেল। গোরাচাঁদ তখন বেশ বড়ো হয়েছে। কালাচাঁদ মারা গিয়েছেন গতবার। রূপচাঁদও বাবার মতো ওটার যত্ন করেন। কালাচাঁদের মতো প্লেনটাও বুড়ো হচ্ছে, বোঝা যায়। মেরামত করতে গিয়ে রিভিট করবার জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না। গোরাচাঁদকে চাষের কাজে লাগাননি তাঁর বাবা। এ কবছরের ভিতর তাদের আর্থিক অবস্থাও অনেকটা ভালো হয়েছে, গোরাচাঁদের মাথাটাও খুব ধারালো বলে রূপচাঁদ তাকে আর চাষের কাজে জমিতে নামাননি। গোরাচাঁদ এখন ক্লাস এইটে পড়ে। একটু একটু করে তার চোখের সামনে পৃথিবী তার বইয়ের পাতাগুলো মেলে ধরছে। বাংলা-স্যর সেদিন রচনা লিখতে দিয়েছেন, ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য।’ গোরাচাঁদ অনেক ভেবেও ঠিক করতে পারেনি, কী লিখবে! সবাই লিখবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যারিস্টার, শিক্ষক হতে চায়। গোরাচাঁদ ওসবের কিছুই হতে চায় না, লিখতেও চায় না। সে অন্যরকম হতে চায়। দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে বাইরে যে বিশাল পৃথিবী রয়েছে, কত অজানা দেশ, পাহাড়, জঙ্গল, মরুভূমি, জলপ্রপাত, নদীমুখ, নীলনদ, পিরামিড, মাঝরাতে সূর্যোদয়, টেবল-মাউন্টেনের সমতল চূড়ায় দাঁড়িয়ে পায়ের নীচে কেপটাউন শহর, ভিসুভিয়াসের শক্ত কালো লাভার নদী— সব দেখতে চায় সে! এই বোষ্টমদিঘি ছাড়িয়ে আরও আরও দূরে যেতে হবে! কিন্তু তাহলে তো তাকে পাখি হতে হবে! ‘আমার জীবনের লক্ষ্য পাখি হওয়া’— খাতায় এরকম লিখলে স্যর কত মার্কস দেবেন, সে কি জানে না। গভীর রাত। বারান্দায় মাদুর পেতে রচনা খাতা খুলে বসে আছে গোরাচাঁদ। কিছুই মাথায় আসছে না। বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে, মা রান্নাঘরে কীসব করছে। চারদিক নিঝুম হয়ে গিয়েছে। শুক্লা একাদশীর জ্যোৎস্নায় চরাচর মাখামাখি। দূরে, বাগানের কোণায় আমগাছের তলায় প্লেনটার দিকে তার চোখ গেল। তার যদি সত্যিই ওরকম একটা প্লেন থাকত! একদৃষ্টে সে ওটার দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ গোরাচাঁদের চোখে পড়ল, প্লেনটার বসার সিটের ওপর কী যেন একটা নড়াচড়া করছে! বেশ বড়োসড়ো চেহারা! কোনো মানুষ কি? আজকাল ভাঙাচোরা বাতিল লোহালক্কড় কিনতে আসে লোকে। তাদেরই কেউ ওটা চুরি করতে আসেনি তো? গোরাচাঁদের গাঁতা শিরশির করে উঠল! ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারল, ওখানে একজন মানুষই রয়েছে, কিন্তু তার চেহারাটা খুবই অচেনা! খুব লম্বা, ধবধবে গায়ের রং, মাথায় জলপাই রঙের টুপি। কীসব খুটখাট করছে ভিতরে বসে! একবার লাফ দিয়ে নীচে নেমে ওটার পেটের কাছে হাত দিয়ে কী যেন দেখল! আবার লাফ দিয়ে উঠে ভিতরে গিয়ে বসল! গোরাচাঁদ সিঁটিয়ে গিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল সেদিকে। বাবাকে ডাকবে কিনা, ভাবছিল। এমন সময় দেখতে পেল, প্লেনের নাকের ডগার তোবড়ানো প্রপেলারটা বনবন করে ঘুরছে! কিন্তু কোনো শব্দ হচ্ছে না! এর আগে হাজার চেষ্টা করেও ওটাকে একচুল ঘোরানো যায়নি! অথচ আজ...! তবুও লোকটা যেন খুশি নয়! দমাদ্দম করে সে লাথি মারছে প্লেনটার গায়ে! গোরাচাঁদের মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল! প্রচণ্ড ভয় এবং বিস্ময় তাকে একেবারে পাথর বানিয়ে দিয়েছে যেন! একটু সম্বিত ফিরে পেতে সে ডেকে উঠল, ‘মা! ও মা, তুমি কোথায়?’ মা সাড়া দিল, ‘এই তো, রান্নাঘরে। কেন?’ তিন সারারাত ভালো ঘুম হল না গোরাচাঁদের। মাঝরাতে কী দেখেছিল সে? স্বপ্ন দেখেছিল?... বাংলা স্যরের দেওয়া ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য, রচনাটা লেখা হয়নি এখনও। কী লিখবে, বুঝতে পারছিল না! ভোররাতে নিঃশব্দে উঠে, টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে গোরা খাতাটা টেনে নিয়ে লিখতে লাগল: ‘সবাই মাটির উপরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মাথা তুলে বড় হওয়ার স্বপ্ন দ্যাখে। আমি সেই আকাশটাকেই ছুঁয়ে দেখতে চাই— আমি বৈমানিক হতে চাই! তা-ও যদি না-পারি তো ভূ-পর্যটক।’ সকালবেলা রূপচাঁদ বাগানে গিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন, ‘গোরা, দেখে যা, কী সর্বনাশ হয়েছে!’ গোরাচাঁদ একটুও বিস্মিত হল না। সে জানে, বাবা কী দেখাতে বাগানে ডাকছে! ধীরেসুস্থে সে কাছে গিয়ে দেখল, প্লেনটা মাচা থেকে মাটিতে পড়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কেউ যেন প্রবল আক্রোশে হাম্বুর-হাতুড়ি দিয়ে ওটাকে ভেঙে ফেলেছে! গোরা তো জানে, কে করেছে এসব! কাল রাতে ওর পাইলট এসে ওটাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, অনেক চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু পারেনি। সেই রাগে…
- নৃমুন্ডের মীমাংসা । রাজা সরকার | Manikarnika.Pub
নৃমুন্ডের মীমাংসা । রাজা সরকার বিষয় : উপন্যাস প্রচ্ছদ : কৌশিক দাস মূল্য : ₹ ৬৫০ মণিকর্ণিকা প্রকাশনী যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির কিছু অংশ এখানে দেওয়া হল। মুক্তিযুদ্ধের টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে যায় সম্পন্ন হিন্দু গৃহস্থ ধলা মজুমদার ও তার পরিবার। দেশভাগের পরেও বুক-ভরা আশা নিয়ে তারা রয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশে। অথচ দিনে দিনে চারধারে জেগে ওঠে অসহিষ্ণুতা, অচেনা হয়ে যায় জন্মাবধি চেনা মানুষজন। একে একে দেশত্যাগ করে অজস্র হিন্দু পরিবার; কেউ কেউ বদলে নেয় ভিটেমাটি। ধলা পারে না। কোনো ভয়ের বশে দেশত্যাগ করাকে সে মনে করে পরাজয়। মনে করে জীবনের পরম অসার্থকতা। এই ঘূর্ণির মাঝেই বিবাহযোগ্যা হয়ে ওঠে অতসী, ধলার মা সুমতির পালিতা কন্যা। জন্মসূত্রে সে মুসলমান। তাকে বিয়ে করতে চায় রতন চক্রবর্তী। সে মুক্তমনা মানুষ। এই নিয়ে ঘুলিয়ে ওঠে সমাজ। ভাইয়ের পরামর্শে জমি-বাড়ি বদলের খবর করে ধলা, কিন্তু তার মন সায় দেয় না। গভীর চিন্তাশীল মানুষ ধলা মজুমদার, একাকী সময়ে সে খুলে বসে নিভৃত নোটখাতা। সেখানে সে লিখে রাখে বিভেদের করুণ ইতিকথা, সন্ধান করে মানুষের অন্তরিন আলো-অন্ধকার। ধলা বাসন্তী সুমতি অতসী পিয়ারী রতন চক্রবর্তী ওমর বিনতা সকলকে নিয়ে প্রবাহিত হতে হতে রক্তাক্ত হয় কাল। খণ্ড খণ্ড হয় জন্মভূমি। কেবলই আরও আরও পৃথক হতে থাকে রাষ্ট্র ও দেশ।
- বর্গমাইলের পদাতিক । রাজা সরকার | Manikarnika.Pub
বর্গমাইলের পদাতিক । রাজা সরকার বিষয় : উপন্যাস প্রচ্ছদের আলোকচিত্র : অর্ণব বসু নামাঙ্কণ ও প্রচ্ছদ-ভাবনা : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় মূল্য : ₹ ৩০০ মণিকর্ণিকা প্রকাশনী যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির কিছু অংশ এখানে দেওয়া হল। ৩৭ এই ওঠো, সুবোধ, উঠে ঘরেই বসো বাইরে বসা ঠিক নয় - আব্বার নির্দেশ। চা আনছি।- বলে কুসুম ভেতরের ঘরে চলে গেল। না কুসুম, আমি কোনো সমাধান জানি না। আমি হাঁটতে জানি শুধু। আমাকে হাঁটতেই শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। এক পা, দু পা করে। হাঁটতে হাঁটতেই আমি ছড়িয়ে পড়ছি সংহত হওয়ার বদলে। এ ও এক ইচ্ছা নিরপেক্ষ ঘটনা। আমাদের অপেক্ষা করার নিদান নেই কুসুম, শুধু অতিক্রম করা ছাড়া। কী হল চা নাও- ও হ্যাঁ, এই দাও - কটা বাজে বলো তো - শামীম এল না যে - আসবে ঠিক সময়। তার আগে তুমি বলো তো তুমি এভাবে চলে গেলে কেন? বাধ্যত- কেন? কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে কি এখানে থাকা যেত না? থাকছিলামই তো, কিন্তু একসময় গা-ঢাকা দিতে দিতেই তো ঢুকে পড়ি ওপারে- যদি বলি ওপার সম্পর্কে তোমার একটা অবসেশন ছিলই। আজ আর অস্বীকার করে লাভ নেই - না, এভাবে বললে মানব না। আসলে এপার-ওপার সম্বন্ধে তথাকথিত ইতিহাসের বানানো গল্পটাতে আস্থা রাখতে পারিনি। ফলে ঘুরতে ঘুরতে একসময় সেই সব মানুষজনের মতো যারা ভোররাতের নক্ষত্র মাথায় নিয়ে একের পর এক আলপথ ডিঙ্গিয়ে চলে গিয়েছিল এক পার থেকে অন্য পারে, তাদের পায়ের ছাপে পা রাখার ভীষণ একটা চাপ তৈরি হয়েছিল মনে মনে। আর তুমি তো জানো আমার অন্তত বহুশ্রুত সেই তথাকথিত সুখ সন্ধান থাকার কথা নয় ওদিকে। এত গভীর করে ফেললে উত্তরটা প্রশ্নটা কিন্তু তা ছিল না। - এই চা ঠান্ডা হচ্ছে। হ্যাঁ - উপায়হীনতার চোখ সুবোধ দেখেছে। সাদা ও নির্মম। জেনেছে রাষ্ট্রশক্তির কাছে নির্দিষ্ট হয়ে যাওয়ার পরিণতি। তার সশস্ত্র ব্যাপকতার মুখে খড়-কুটোর মতো ভেসে যাওয়া। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত, নিষিদ্ধ করে দেওয়া সংগঠনের সংগঠক সুবোধ কক্ষচ্যুত এক গ্রহাণুর মতো আজ ঢুকে পড়েছে কুসুম-শামীমের বাসায়। তাই প্রতি-রাতেই গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের কথাবার্তা পরামর্শ। মূল কথক সুবোধ সহজে ছাড়া পায় না। তাকে সব কথাই বলতে হয়। তার এই অভিযাত্রার সঙ্গী না হয়েও কুসুম শামীম এই অভিযাত্রার স্পর্শ পেতে গিয়ে সুবোধকে প্রশ্নের ভেতর ডুবিয়ে রাখে। সুবোধ ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে একসময়। টের পায় ঠোঁটে করে মশারি গুজে দিচ্ছে কুসুম। আলো নিভিয়ে কপালে একটু হাত বুলিয়ে বলে যায় - ‘বাকিটা কালকে’। ৩৮ এবার এসে থাকতে থাকতেই সুবোধ ঢাকার আকাশের সেই গোপন দরজাগুলোর একটার সন্ধান পেল। সে জানে এই দরজাটি খুললেই মুনীরের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। অবশ্য সেই মুনীরের সঙ্গে নয়, যে ছিল দেবশিশুর মতো দেখতে, যার মুখ দেখলে মনে হতো সে তখনও কোনো স্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্র। অথচ সে তাদের এম-এ ক্লাসের একজন সেরা ছাত্র। ক্লাসের পড়া থেকে শুরু করে ছাত্রজীবনের চোখে দেখা পৃথিবীর যে কোনো বিষয়ে সেই-ই ছিল আমাদের কাছে জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। আমাদের চেনা রাষ্ট্র নামক সত্তাটি এই সকল মানব সন্তানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠবে এ আর বিচিত্র কী! এই মুনীরের বদলে অন্য এক মুনীরকে পাওয়া ছিল সেদিন আমাদের কাছ থেকে আসলে মুনীরের চিরতরে চলে যাওয়া। আমরা মুনীরের লাশ পেয়েছিলাম। শরীরটি তার শরীর ছিল না - অথচ মুখটি ছিল সেই বাৎসল্যজাত এক টুকরো লাবণ্য। যেন অনেকদিন পর সুবোধ তার ফেলে যাওয়া সেই সময়টা আবার ফিরে পেল। একা একা হালকা অন্ধকারের ভেতর আবার ছুঁতে চাইল সাদা চাদরে ঢাকা মুনীরকে। যেন একবার ডাকলেই উঠে পড়বে। বলবে - লও ভাই একটু ফুঁইকা আসি। মানে সিগারেট টানবে। নতুন নতুন টানা শিখেছে সবে। বলবে - খুব ভালা বস্তু একখান মাইরি! এভাবেই সেদিন সকালে কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনটা ঢোকার একটু আগে সে মুনীরকে ডেকে তুলেছিল ঘুম থেকে। জেগে উঠে টয়লেট থেকে মুখচোখ ধুয়ে আসতে আসতেই ট্রেনটা ঢুকে পড়ল স্টেশনে। তারপর ঢুকল সুবোধ নিজে এবং বের হওয়ার মুখেই চমকে উঠল গুলির শব্দে। গুলির শব্দ ততদিনে তাদের খুব চেনা। গুলির শব্দ আর পরক্ষণেই চিৎকার। প্রথমে তেমন কিছু না বুঝে সুবোধ লাফিয়ে নেমে দৌড়তে শুরু করল। আশা ছিল - তার মতো মুনীরও কোনোদিকে দৌড়চ্ছে। কিন্তু কোথায় মুনীর? এদিক ওদিক ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে গেল স্টেশন-চত্বর। ভিড়টা একটু তফাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এসে গেল পুলিশ। লাশ তুলে নিয়ে তারা চলে যাচ্ছিল - আরে, এ তো মুনীর! এত রক্ত! সুবোধ দেখল ভার্সিটির অনেক ছাত্রই যারা এই ট্রেনে করে হোস্টেলে ফিরছিল, তারাও পাশে। মুহূর্তের মধ্যেই তারা পুলিশের ব্যারিকেডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। চিৎকার আর ধস্তাধস্তিতে জায়গাটা প্রায় অগ্নিগর্ভ। উত্তরোত্তর ছাত্রদের ভিড় তখন বেড়েই চলেছে। ‘স্বাধীনতা’ আর ‘গণতন্ত্র’ নামের দুটি শব্দের আড়ালে যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্ররা সেদিন অভ্যুত্থানের ছক কষেছিল, তার উপর অনেক আঘাতই এসেছে, কিন্তু মুনীরের মৃত্যুর পর তারা পাগলের মতো ঢাকা শহরটাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। দুদিন পর সেই স্তব্ধতার মধ্যে এক মিছিলে কেমন ছবির মতো ঠান্ডা মর্গ থেকে বেরোনো মুনীর শুয়ে থাকল সাদা কাপড়ের নীচে। কথা বলল না। মিছিলের মধ্যেই হঠাৎ কানে কানে অচিনের গলা - সুবো, তোর নামেও ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে, এইমাত্র খবর পেলাম - মোট দশজন শুনেছি - শেল্টারে চলে যা শিগ্গির। সুবোধ এক ফাঁকে বেরিয়ে পড়ল মিছিল থেকে। না, আর মুনীরকে ওরা আর ধরতে পারছে না। মুনীর দৌড়োচ্ছে, পেছনে সুবোধ - সুবোধ টের পেল ভোর হচ্ছে। বিছানা থেকে নেমে স্নান ঘরে ঢুকে চোখে মুখে জল দিয়ে এল। অনেকটা জল খেল। টেবিল থেকে কাগজ কলম নিয়ে লিখলো একটাই শব্দ ‘চললাম’। সূর্য ওঠার আগেই সে পথে নামল। ঢাকা শহর তখনও ঘুমে। রাজশাহীগামী প্রথম বাসটাতেই সে চেপে বসল। কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর ছাড়িয়ে বাস হাইওয়ে ধরল। ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে এল তার টানটান স্নায়ু। কানে বেজে উঠল কুসুমের গলা। যেন হঠাৎ টের পেয়ে দৌড়ে দৌড়ে এসেছে - হাঁপাচ্ছে, বলছে - জাহানারা আর লালনকে নিয়ে যে ভাবেই পারো ফিরে এসো সুবোধ - আমরা আছি এখানে - কোনো অসুবিধা হবে না তোমার। কি, ফিরছ তো? বিগত কতগুলো ঘণ্টা মুহূর্ত শুধু জাহানারাকে নিয়ে কেটেছিল তাদের। ‘জাহানারা’ নামের বাস্তবতাটির স্পর্শ পেতে অনেক সময় লেগেছে তাদের। লাগারই কথা। আসলে তো সুবোধকেও চিনতে হচ্ছিল নতুন করে। কথার মাঝে শামীমই প্রথম প্রস্তাবটা তোলে। বলে - সব ঠিক আছে, ভুল কিছু হয়নি। ওদেরকে নিয়ে চলে আস এবার। আমরা আছি। যে কোনোরকম সাহায্যের জন্য আছি আমরা। ঠিকানা রইল। যোগাযোগ করতে দ্বিধা কোরো না।
- Our Catalogue | Manikarnika.Pub
পুস্তক তালিকা । মণিকর্ণিকা প্রকাশনী 2022 (June) নিঃশব্দ পাহাড় (২ য় খণ্ড) শুভদীপ বড়ুয়া নতুন জামানায় তার গায়ে ফুটে ওঠে রক্তাভ ছোপ- আফঘানিস্তানের নতুন পতাকা! একবার আফঘানিস্তান ত্যাগ করেও আবার ফিরে আসে স্যাম। মাহিল তাকে ডাকছে। মার্কিনি চর সন্দেহে গ্রেপ্তার হয় স্যাম। বহু চেষ্টার পর সে পালায়। কিন্তু তারপর? তিন খণ্ডে সমাপ্য এই সুদীর্ঘ উপন্যাসের প্রতিটি খণ্ডই স্বতন্ত্র, আশ্চর্য, ও অদ্বিতীয়। ₹ ১৮০ ভরতরাজার দুটুকরো দেশ পরিতোষ সরকার বারবার ভাগ হয় ভূখণ্ড। তার প্রাণ নেই। কিন্তু যারা পরিকল্পনা করে এই বাটোয়ারার তারা খেয়াল করে না একবার ভূভাগ হলেই সহস্র টুকরোয় ভেঙে যায় মানুষ। সেই কোন কাল থেকেই একথা বেমালুম ভুলে থাকছে বিভেদের কাণ্ডারিরা। এই বিস্মৃতির শিকার হচ্ছে ভরত সুবল গৌরী লক্ষ্মী মালতি। ₹ ২৫০ নৃমুণ্ডের মীমাংসা রাজা সরকার আজ অনেকদিন পর সেই অনুভূতিটা যেন ফিরে এসেছে। ভাটার টানে শীর্ণ আদিগঙ্গার জায়গায় কখন যেন ভেসে উঠেছে অল্পবয়সের দেখা মেঘনা। সেদিন কেন জানি তার মনে হচ্ছিল পৃথিবীর আদিকথাগুলো যেমন নদীমাতৃক, তেমন পৃথিবীর আদিকথার মানুষগুলোও নদীমাতৃক। একদিন নদীছাড়া মানুষের তেমন কিছুই ছিল না। আজ কি নদীছাড়া মানুষের তেমন কিছু হয়েছে! হলেও নদীমাতৃকার ওম থেকে বেরিয়ে সে আজও নিঃশ্বাস নিতে পারে না। ঘ্রাণে পুতিগন্ধের সঙ্গে রক্তগন্ধ, বারুদ্গন্ধ তাকে অধঃপতনেরই ইশারা দেয়। সকল সৌন্দর্য হারানো নিরুপায় কিছুক্ষণের জন্য মাত্র এই জীবন তার— নদীর কাছেই করুণা ভিক্ষে করে যেন বারবার।’ ₹ ৬৫০ তুমি থাকো সিন্ধুপারে অভিজিৎ চৌধুরী অবাক হয়ে কবিকে দেখছেন ওকাম্পো। কবি তাঁর পিতৃসম। বয়স তেষট্টি। ওকাম্পো ৪০ -৪১। সদ্য ডিভোর্স হয়েছে তাঁর। খানিকটা একা। কপালে বয়সের ভ্রূকুঞ্চন কবির। তবুও সুন্দর। দুজনের ভাষায় জড়তা। গান হতে পারে সংযোগের ভাষা। ইউরোপ জুড়ে বক্তৃতা দিতে দিতে ক্লান্ত রবীন্দ্রনাথ। গান নেই, কবিতাও নেই। একদিন ওকাম্পো এরকমটাও বললেন- ‘ইউর কম্পোজিশন ইজ টিডিয়াস।’ রাগ করলেন রবীন্দ্রনাথ! না। ফিরে এল চব্বিশ বছর বয়সের সেই সাহিত্য-সঙ্গী, নতুন বউঠান। রবি, তোমার গলাটা বড্ডো কর্কশ। কতো না প্রয়াস যুবক রবির- নতুন বউঠান তাঁকে কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। শেষ রাতে কবি দেখতে পেলেন, ওকাম্পো সারা রাত তাঁর ঘরের বাইরে জেগে কাটিয়েছেন, শুনেছেন গান। জয় কি হল বিজয়ার কাছে! নিজের আরেক পরিচয়ের দরজা খুলে দিলেন ওকাম্পো। চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ। নিছক লেখার সংশোধন আর কাটাকুটি থেকে জন্ম নিচ্ছে তাঁর ছবি। অসম বয়সের এ এক অনন্য প্রণয়-কাহিনি। যেখানে স্বপ্নের বপন আছে, শেষ নেই। সিন্ধুপারে রয়ে গেল প্রেমের সেই ভাস্বর মুহূর্তগুলি- একান্ত দুজনের কাছেই। ₹ ৩০০ বাঘমামার ভ্রমণ সুদেষ্ণা মৈত্র বাঘমামার ভ্রমণের ওপর একটি শিশুপাঠ্য উপন্যাস। ₹ ১৮০ (পক্ষীরাজ প্রকাশনী) চিঠি দিয়ো লাল তারা শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় দুচোখে সমুদ্র চষার স্বপ্ন নিয়ে চুপিচুপি বাড়ি ছেড়ে চলে যায় বিজন। বহু বছর পর এক বিশেষ কারণে ফিরে এসে দ্যাখে তার দাদার ছেলে রুকু বড়ো সুন্দর হয়েছে। বিজনকে বড্ড ভালোবেসে ফেলে রুকু। আর অমনি আশ্চর্য কত কিছু ঘটতে থাকে ওদের জীবনে। কোন জাদুবলে সমুদ্রের মতোই অপার হয়ে যায় রোজকার বেঁচে থাকবার আনন্দ। কিন্তু এত আনন্দ এত ভালোবাসা তো সহ্য করে না সংসার। ক্রমাগত ভাঙনেই তার আনন্দ। পরিবারে জন্ম নেয় তীব্র টানাপোড়েন। বিজু কি তাহলে চলে যাবে? আর রুকু, সে-ই বা কেমন করে থাকবে তার কাকুমণিকে ছাড়া? বড়ো হওয়ার পথে কোত্থেকে শক্তি পাবে সে? ₹ ২৫০ এক পুঁচকে কালো মাছের গল্প মূল কাহিনি : সামাদ বেহরাঙ্গী অনুবাদ : সৈকত ভট্টাচার্য সামাদ বেহরাঙ্গী ছিলেন ইরান দেশের ‘উদয়ন পণ্ডিত’। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এমন এক ‘হীরকরাজার দেশ’ বোধহয় জেগে উঠেছিল বাস্তবের মাটিতে। এবং ছবির পর্দার রাজার চেয়ে বাস্তবের রাজার ক্ষমতা সচরাচর অনেক বেশিই হয়। আর তাই উদয়ন পণ্ডিতদের মৃত্যু হয় বারবার। যদিও এই মৃত্যু অসংখ্য মানুষের মধ্যে একজনকে হলেও নাড়া দিয়ে যায়, আর সে-ই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে আগামীর উদয়ন পণ্ডিত। ₹ ২০০ গল্প ধনপতির কথাপালা মধুময় পাল কুড়িটি গল্পের এই সংকলনে পাঠক অবগাহন করবেন এক আত্মযাত্রাপ্রবাহে; যা তিনি দেখছেন চারধারে, যেসব সংঘর্ষ বাস্তবে পরিণত করে তুলছে তাকে, সেই সমস্তেরই অনুপুঙ্খ ছবি গড়ে উঠেছে গল্পে গল্পে এবং জড়িত চরিত্রদের ঘিরে কখনও স্পষ্ট কখনও বা আবছা কায়ায় চালচিত্র হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে কম্প্রমান এক কাল; তার স্পর্শ বিনা মানুষ বদলাতে পারে না। ₹ ৪০০ আয়নাতন্ত্র ঋতম চক্রবর্তী চুয়াল্লিশটি ছোটোগল্পের সংকলন। ₹ ৩০০ ঢাক বাদ্য, ঢাকই অস্ত্র পরিতোষ সরকার মানুষ বড়ো, নাকি ধর্ম? মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্ক বড়ো হবে, নাকি ভেদাভেদের সম্পর্ক? রাজনীতি মানুষের কল্যাণধর্মী হবে, নাকি অকল্যাণধর্মী হবে? দেশের কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করাই দেশ পরিচালকদের কর্তব্য হবে, নাকি দেশের ধনীদের আরো ধনী বানানোই একমাত্র কর্তব্য হবে? দেশ, সমাজ ও রাজনীতি থেকে দুর্নীতি, অপরাধ দূর করা হবে, নাকি সেই অপরাধ, দুর্নীতিকেই লালন পালন করা হবে?— বর্তমানে দেশের বৃহত্তর অংশের মানুষের মনের ভেতরকার সামগ্রিক এইসব ভাবনাচিন্তা এবং বহু প্রশ্নই— এই বইয়ের সমস্ত গল্পগুলোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ₹ ৩০০ ছোটোদের জন্য (পক্ষীরাজ প্রকাশনী- গল্প)... চলো যাই লঞ্জেসের দেশে সুদেষ্ণা মৈত্র আটটি ছোট গল্পের সংকলন ₹ ১৮০ বিন্তির গল্প সুদেষ্ণা মৈত্র দশটি ছোট গল্পের সংকলন ₹ ১৮০ আকুলপুরের পথ বাসুদেব মালাকর ভিন্ন স্বাদের দশটি ছোটোগল্পের সংকলন। ₹ ২২০ নন-ফিকশন্ নমো তস্স কৌশিক সরকার বারানসীতে যশ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন। এমনিতেই সম্পন্ন পরিবার নিয়ে আলোচনা হয়, তার উপর হঠাৎ সন্ন্যাস গ্রহণ সকলকে কৌতূহলী করে তুলল। দাসদাসীদের মাধ্যমে প্রায় প্রত্যেক গৃহে যশ ও তথাগতকে নিয়ে আলোচনা শুরু হল। বারানসীর মানুষের ধারণা হল যে, ঋষিপত্তনে কে এক শ্রমণ গৌতম এসেছে, সে কী এক জাদু করে যশকে বশীভূত করেছে। ₹ ৩৫০ বুদ্ধজীবনকথা… ছায়াতরুগাথা ঋভু চৌধুরী বুদ্ধজীবনে তাৎপর্যময়ী বিশেষ কজন নারী আর ছায়া দেওয়া মহাপ্রাণ গাছেদের কথা নিয়ে এই বই। মূল তথ্যসমূহকে কেন্দ্র করে প্রায় পুরোটাই লেখক-কল্পনা। প্রথম গল্পে রয়েছে যে শালগাছের গায়ে হেলান দিয়ে পূর্ণগর্ভা মায়াদেবী জন্ম দিয়েছিলেন ভগবান বুদ্ধের সেই মহাবৃক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা বুদ্ধজন্মের গাথা। একেবারে শেষ গল্পে আবার ফিরে আসে গাছেদের গুঞ্জন। যে দুটি শালগাছের নীচে বুদ্ধদেব ছেড়ে গেলেন তাঁর নশ্বর দেহ, সেই গাছেরা প্রণাম রাখছে মহাজাতকের পায়ে। ফিরে দেখছে বুদ্ধজীবন। বাকি দুটো গল্পে রইলেন সুজাতা আর আম্রপালি¾ তাদের একাকীত্ব, ধুলোমাটির সংসার, রাজকীয় সংগ্রাম, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব, বুদ্ধপদের অভিলাষ নিয়ে। একা একা কথার ভেতর। ₹ ৩০০ ব্যাক্তিগত গদ্য পথ দেখাবে সূর্যোদয়ের ঘ্রাণ ঋভু চৌধুরী পশ্চিমের বাগানে কখনও পোকা খেতে আসে ঝিঝিম পাখি। রংদিদির মুখে শুনেছি তার কথা - সে উড়ে গেলে নাকি বৃষ্টির শব্দে ছেয়ে যায় আশপাশ, বাড়ির কোনো কুমারী মেয়ে অকারণে পোয়াতি হয়ে ওঠে। অরণ্যপ্রাণেদের মতো আমাদেরও নিঃসঙ্গ বিচরণ - কয়েকটি রিপুর তাড়না জ্যান্ত করে রাখে। কেবল বাগানে গেলে, শান্ত হয়ে আসে সমস্ত স্নায়ু। মনে হয়এই বুঝি বৃষ্টির শব্দে উড়ে গেল সেই পাখি - এই বুঝি এক প্রাণ ঝরে পড়ল আমার জরায়ুডাঙায়। ₹ ১৫০ Heading 5 বিভাবকবিতা অর্ণব পণ্ডা বড়ো হতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই মাঝে মাঝে নিচু হয়ে আসে পিঠ মায়ের শাড়ির ঘ্রাণ যত নিতে চাই মনে হয়, দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার কাশফুল দুলে ওঠে ট্রেনের বাতাসে যেভাবে বাংলামাস একটু আড়ালে আমি তার মতো বাবার প্রয়াণদিনে একা থাকি নিজের চোখের জলে নিজেকে গড়িয়ে নিই উঠে আসি, দেখি ঈশ্বর তাঁর খড়ি-ফোটা হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছেন আমার মায়ের কাছে। ₹ ১৭৫ ঈশ্বর দিনলিপি ভ্রমণকাহিনি ধর্মীয় প্রবন্ধ দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিছক উত্তেজনা জারিত চিৎকার নয়, লেখক তাঁর আহ্বানকে জোরালো করার লক্ষ্যে গড়ে দিয়েছেন জ্ঞান-যুক্তি-দর্শনের বলিষ্ঠ কাঠামো। সাবলীল ভাষায় এমনতর স্বচ্ছ বক্তব্য এবং নিষ্ঠ প্রকাশভঙ্গিমার জন্যই ‘দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম্ম’ বইটি লাভ করে এক স্থায়ী তাৎপর্য। ₹২৫০ মানবপুত্র অপ্রতিম চক্রবর্তী বহু শতাব্দী আগে জর্ডন নদীর পুণ্যবারি প্রত্যক্ষ করেছিল এক হিরণ্যগর্ভ মুহূর্ত¾ এক মর্ত্যমানবের উন্মোচন ঘটেছিল ঈশ্বরপুত্ররূপে। তারপর জর্ডন থেকে জলাঙ্গীতে বয়ে গেছে অবিরাম কালস্রোত। যে অমৃতবাণীর প্রথম উদ্ভাস ঘটেছিল গ্যালিলির পথে পথে- আজ তার প্রতিভাষ এসে পৌঁছেছে সুদূর বাংলার মাটিতে। বড়োদিন তাই আমাদের সকলেরই ‘বড়ো’ হয়ে ওঠার- আমাদের অন্তর্নিহিত দেবত্বের আহ্বানকে অনুভব করার পবিত্রদিন। এই সংকলনের লেখাগুচ্ছে অপ্রতিম চক্রবর্তী সন্ধান করেছেন সেই অমৃতযাত্রার পদচিহ্ন- মহামানবকে খুঁজে ফিরেছেন তাঁর ঐতিহাসিক এবং আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপটে। ‘মানবপুত্র’ সেই দৈবকথার প্রসারের কাহিনি- আমাদের দেশে। ₹২৫০ বুদ্ধদেব (বুদ্ধ বিষয়ক প্রবন্ধ ও কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক মহামানবকে নিয়ে নানাসময় বড়ো যত্ন-শ্রদ্ধা-আশা ভরে লিখেছিলেন আর-এক মহামানব। দুজনের মাঝখানে আড়াই হাজার বৎসরকাল উর্মিময় সমুদ্র হয়ে আছে। এই অকূল পাথার পার করে তথাগতের দিকে আয়ত চোখ মেলে চেয়েছেন কবি রবীন্দ্রনাথ। সেই দৃষ্টি মাখানো রয়েছে এই বইয়ের সর্বাঙ্গে। ₹২৫০ আধ্যাত্ম স্মৃতিকথা মণিকর্ণিকা প্রকাশনী । পুস্তক তালিকা কাশীধামে স্বামী বিবেকানন্দ মহেন্দ্রনাথ দত্ত “৺কাশীধামে শ্রীমৎস্বামী বিবেকানন্দ” পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইল। বাঙলার বাহিরে বাঙ্গালীর যে কয়টি শ্রেষ্ঠ কীর্ত্তি আছে তাহার মধ্যে ৺কাশীধামে রামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রম ও রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম বাঙলার গৌরব বৃদ্ধি করিয়াছে, শুধু গৌরব বৃদ্ধি নয়, বর্ত্তমান ভারতের সেবা-ধর্ম্মের প্রত্যক্ষ শ্রেষ্ঠ শিক্ষাস্থল। ₹২৫০
- বাঘমামার ভ্রমণ । সুদেষ্ণা মৈত্র | Manikarnika.Pub
বাঘমামার ভ্রমণ। সুদেষ্ণা মৈত্র বিষয় : গল্প প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : কৌশিক দাস পক্ষীরাজ প্রকাশনী মূল্য : ₹১৮০ যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি গল্প এখানে দেওয়া হল। প্রথম অধ্যায় খসখস খসখস। মুনির একটু তন্দ্রা লেগেছে। ‘কে কে?’ বলতেই চোখে পড়ল হলুদ-কালোয় চাকা চাকা দাগ কাটা কী যেন দরজার বাইরে আটকে গেছে। বাঘটা নাকি? আবার এসেছে! ভয় নেই, ছিল তো একটা এইটুকুনি ইঁদুর; কাকুতি-মিনতি করল তাই সেখান থেকে মন্ত্র পড়ে কুকুর করলাম, তারপর আবার মন্ত্র পড়ে কুকুর থেকে বাঘ, তাতেও সন্তুষ্টি নেই! বারবার আমায় খাবে বলে! এখন কি খেতে এল নাকি আবার অন্য মতলব! কমন্ডলু হাতে নিয়ে মুনি উঠে এলেন। বাঘ লাফিয়ে পড়তে গেল মুনির ওপর, পারল না। লেজ আটকে গেছে ! মুনি বেজায় রেগে গেলেন, বললেন, কী হল! আবার দুষ্টুবুদ্ধি! বাঘ: আমার খিদে পেয়েছিল খুব, কিন্তু যেখানেই খেতে যাচ্ছি, কেউ বলছে ওই নেংটি ইঁদুরটা না! কেউ বলছে কুকুরটা না! সকলের কথা শুনতে গিয়ে আর খাওয়াই জোটে না। তাই রেগেমেগে তোমাকে খাব ভাবলাম। বাহ, কী চমৎকার কথা! লেজ আটকে গেছে বেশ হয়েছে। এইবারে ওইভাবে থাকো দরজায় আটকে। ঘাট হয়েছে বলছি তো! লেজটার যেন কী হল। দ্যাখো না মুনিবাবা। মুনি বলল, লেজ ঠিক করে দিচ্ছি, তোকে বাঘেদের দরবারের সদস্য করে দেব। তবে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে। কাজটা করতে পারলে আর কেউ কখনও তোকে ঠাট্টা করবে না। ব্যাঘ্রকুলে বেশ নামডাকও হবে। করব গো করব। লেজটা ঠিক করো তো। আগে। প্রাণে বাঁচি! ভয় নেই, তোমায় আর খেতে আসব না পমিস (প্রমিস)। তিনসত্যি বল। নইলে আবার ইঁদুর! বলতেই বাঘ কেঁদে ফেলল। বলল, ইঁদুরদের রাজা বলে দিয়েছে আর ইঁদুরদের ওখানে ঠাঁই হবে না। কুকুররা তো বলেছে, নেংটি ইঁদুরের কুকুর হওয়ার শখ! দেব এক রদ্দা। বাঘই থাকতে চাই। পমিস। তোমায় খাব না, তোমায় কামড়াতে আসব না। হুম বুঝলাম। তবে ভাবতে সময় দে। বাঘ চোখ ভরতি জল নিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল, মুনিবাবা¾ সত্যি সত্যি সত্যি। এই তিনসত্যি করলাম। লেজ সারিয়ে দাও আর বলো কী করতে হবে। তুমি যা বলবে তাই করব। মুনি জপের মালা হাতে নিয়ে মন্ত্র পড়ে লেজটা দরজার ফাঁক দিয়ে বার করে আনল। কিন্তু তবু লেজের কিছুটা দরজার কঞ্চির সঙ্গে আটকে রইল। মুনি তখন বললেন, বুঝলি বাঘুসোনা, আমি ধ্যানে দেখলাম তোকে পান্ডার কাছ থেকে চায়ের পাতা আনতে হবে। তবেই তোর মুক্তি। ওদের ওখানে যে চা-পাতা পাওয়া যায় তার মতো ভালো চা পৃথিবীর আর কোথাও মেলে না। কোথায় বল তো? সেই দার্জিলিং! চা-পাতা হাতে এলেই মন্ত্র পড়ে দেব, তুই পুরোপুরি রয়েল বেঙ্গল টাইগার হয়ে যাবি। জাতীয় পশুর ফোটক যখন তুলবে তুই থাকবি। আর কেউ কিছু বলবে না। বাঘ হয়ে ভালো ভাবে থাকতে পারবি। আজ্ঞে যা বলবে মুনি বাবা। তবে এখন লেজটা খুলে দাও।¾ কাতরকণ্ঠে বাঘ বলে উঠল। হুম! তাই তো! দাঁড়া আগে ছুতোরকে ডাকি। মুনিবাবা চেলাদের হাক দিলেন। ছুতোর আসার আগে মুনি বাঘকে বলে দিলেন কোন পথে গিয়ে কীভাবে পান্ডার কাছ থেকে চা-পাতা আনতে হবে। সবশেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন, সময় কিন্তু মাত্র চারদিন, মনে থাকে যেন।
- নদীর জলে আকাশ প্রদীপ ভাসে । SB | Manikarnika.Pub
নদীর জলে আকাশপ্রদীপ ভাসে । শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয় : গল্প প্রচ্ছদ: শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় মূল্য : ₹ ২৫০ পরিবেশক : মণিকর্ণিকা প্রকাশনী যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741 আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির কিছু অংশ এখানে দেওয়া হল।
- নিঃশব্দ পাহাড় (২ য় খণ্ড । শুভদীপ বড়ুয়া | Manikarnika.Pub
নিঃশব্দ পাহাড় (দ্বিতীয় খণ্ড) । শুভদীপ বড়ুয়া বিষয় : আফগানিস্তানভিত্তিক উপন্যাস প্রচ্ছদ : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় মণিকর্ণিকা প্রকাশনী মূল্য : ₹ ৮০০ যোগাযোগ (Call or WhatsApp) : 8240333741 তথ্যসুত্র আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি অংশ এখানে দেওয়া হল। শাওর বিপ্লবের ঘূর্ণিপাকে দ্রুত বদলে যাওয়া আফঘানিস্তানে পা রাখে দাবা সাংবাদিক স্যামুয়েল পিটার্স। রাশিয়ার সরাসরি হস্তক্ষেপে ইসলামী দেশটিতে তখন শুরু হচ্ছে কম্যুনিস্ট শাসন। স্যামের সঙ্গে আলাপ হল মাহিলের। মাহিল! সমস্ত ঘূর্ণির মধ্যেও একাকিত্ব ও অনন্ত বিষাদভারে স্থবির এক মোহময়ী। রাশিয়ায় ডাক্তারি পড়তে গিয়ে ফেরেনি তার মা। পিতা মহসিন খান অভিযোগহীন, স্ত্রীর জন্য অপেক্ষারত। এবং, তিনি অপেক্ষা করেন এক নিঃশব্দ মৃত্যুর; যে নৈঃশব্দ্য বিরাজ করে রুক্ষ আফঘানিস্তানকে ঘিরে থাকা পাহাড়ে পাহাড়ে। নতুন জামানায় তার গায়ে ফুটে ওঠে রক্তাভ ছোপ- আফঘানিস্তানের নতুন পতাকা! একবার আফঘানিস্তান ত্যাগ করেও আবার ফিরে আসে স্যাম। মাহিল তাকে ডাকছে। মার্কিনি চর সন্দেহে গ্রেপ্তার হয় স্যাম। বহু চেষ্টার পর সে পালায়। কিন্তু তারপর? তিন খণ্ডে সমাপ্য এই সুদীর্ঘ উপন্যাসের প্রতিটি খণ্ডই স্বতন্ত্র, আশ্চর্য, ও অদ্বিতীয়।
- Testimonials | Manikarnika Prakashani
Testimonials of our customers and colleagues আপনার অভিমত জানান
- চিঠি দিয়ো লাল তারা । শাশ্বত ব্যানার্জী | Manikarnika.Pub
চিঠি দিয়ো লাল তারা। শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় Our Store Amazon দুচোখে সমুদ্র চষার স্বপ্ন নিয়ে চুপিচুপি বাড়ি ছেড়ে চলে যায় বিজন। বহুবছর পর এক বিশেষ কারণে ফিরে এসে দ্যাখে তার দাদার ছেলে রুকু বড়ো সুন্দর হয়েছে। বিজনকে বড্ড ভালোবেসে ফেলে রুকু। আর অমনি আশ্চর্য কত কিছু ঘটতে থাকে ওদের জীবনে। কোন জাদুবলে সমুদ্রের মতোই অপার হয়ে যায় রোজকার বেঁচে থাকবার আনন্দ। কিন্তু এত আনন্দ এত ভালোবাসা তো সহ্য করে না সংসার। ক্রমাগত ভাঙনেই তার আনন্দ। পরিবারে জন্ম নেয় তীব্র টানাপোড়েন। বিজু কি তাহলে চলে যাবে? আর রুকু, সে-ই বা কেমন করে থাকবে তার কাকুমণিকে ছাড়া? বড়ো হওয়ার পথে কোত্থেকে শক্তি পাবে সে? মূল্য : ₹ ২৫০ শিপিং : ₹ 0 প্রচ্ছদ : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায় মণিকর্ণিকা প্রকাশনী Call & WhatsApp : 8240333741 Our Store Amazon ❛ মাওফ্লাং অরণ্যের গান _________________________ শিলং থেকে পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মাওফ্লাং অরণ্য। সে এক পবিত্র বন। ওখানকার খাসি উপজাতির লোকজনেরা বুক দিয়ে আগলে রাখে এই অরণ্যের প্রত্যেক প্রাণী, প্রত্যেক গাছকে। এই গায়ক কল্পনা করেছে ওই পবিত্র অরণ্যের গাছগুলো যদি শব্দ করে গাইতে পারত তাহলে এই গানটা গাইতঃ যে গান আমি ভালোবাসি যে গান আমি ভালোবাসি যে গান আমাকে গভীরভাবে ভাবায় যে আমাকে ডাকে, আমাকে দেখিয়ে নিয়ে চলে পথ কাল যেমন প্রাচীন সে ঠিক ততখানিই বুড়ো চারটে ঋতুর পরেও সে বেঁচে থাকে পৃথিবীর গভীর থেকে ফুটে ওঠে সে দোতারার বুক থেকে উঠে সে বয়ে যায় প্রকৃতির ভেতর তার প্রতিধ্বনি পাবে দ্যাখো, কেমনভাবে উঠছে সে দোতারা থেকে সে মিশে যাচ্ছে শিরায় শিরায় সে চলে যাচ্ছে আত্মার গহনে নিঃসাড়ে, বড়ো নিঃসাড়ে সে মেলে ধরবে ডানা আর শান্ত হয়ে বসবে জলের ওপর, ডাঙার ওপর, বাতাসের পরে। মাত্র চারখানা মিহিন রেশমতন্তু থেকে জেগে ওঠা সুর আমার মাথার ভেতর খেলা করে। বেজে ওঠে বুকের মধ্যে সে আমায় ভেতর জাগিয়ে তোলে আশা। ঠিক যেন জলের প্রবাহ এক অনন্ত ঘূর্ণন। নিশিদিন সে বয়ে যায় আপন খেয়ালে। যে গান আমি ভালোবাসি যে গান আমি ভালোবাসি ছেঁড়া ছেঁড়া বাক্যে গানটা বাংলায় দাদাকে বলে দিল বিজু। একটা বাংলা কবিতার মতো করে। সুজনের ভেতর কবিত্ব জিনিসটা নেই। ওর পছন্দ বেশ যুক্তিগ্রাহ্য কাঠখোট্টা বিজ্ঞান। তবু আজ এই গানটা যেন খানিক স্পর্শ করল সুজনকে। একটা সুর কেমনভাবে ডানা মেলে জলে স্থলে বাতাসে শান্ত হয়ে বসে সেটা ও দেখতে পেল এই মাঠের ওপর। বিজুর শোনানো গানটাকে দেখা যাচ্ছে - সে কাছে, আবার সে দূরেও, এইভাবে একাকার হয়ে আছে। ❜






