আমমুকুলের গন্ধ । অনুরাধা মহাপাত্র | Manikarnika.Pub
top of page

আমমুকুলের গন্ধ । অনুরাধা মহাপাত্র

1.PNG

বিষয় : গদ্য

প্রচ্ছদ : শাশ্বত বন্দোপাধ্যায়

প্রকাশনা : মণিকর্ণিকা প্রকাশনী

মূল্য : ₹ ২০০

যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্‌অ্যাপ) : 8240333741

Amazon Button PNG.png
Our Store Button PNG.png
আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির কিছু অংশ এখানে দেওয়া হল।
16.tif.jpg

একসময় ভোরে ওঠা খুব ভালো লাগত। খুব ভোরে ভিজে ঘাসে পা ডুবিয়ে দূর আল দিয়ে চোখ না যাওয়া ধানক্ষেত ঘুরে আসতাম আমি ও দাদা। কেমন শির্‌শির্‌ করে অকারণে চোখে জল আসত আর কার্তিকের হিমে ধানক্ষেতের ওপর দিয়ে উড়ে যেত হলদী নদীর সাদা বক। এক ভোরে আমার ছোটোবোনের জন্ম হল পুবের চালাঘরে। আমি তখন সদ্য স্নান সেরে, আলতা পাড় শাড়ি পরে উঠোনে পা দিয়েছি। আমার বোনের নাম রাখা হল স্বাতী। আজ ভাবি, কেন যে বাবা আমাদের দুবোনের নাম রেখেছিল নক্ষত্রের নামে। নক্ষত্র নামের মেয়ের চিরদুঃখিনী হয়। তবু ভোরের সঙ্গে নক্ষত্রের গভীর যোগাযোগ আছে। আজ ভোর হয়ে আছে আমারই ভিতরে খুব সামান্য, খুব ব্যক্তিগত দুঃখের ঋণ।

16.tif.jpg

ইচ্ছে হয় নিজে কালী পুজো করব। ইচ্ছে করে, কালীকে আনগ্ন মিশিয়ে ফেলি সমগ্র ইন্দ্রিয়ে, বঞ্চনা ও ব্যথায়। অন্য কোনো বাসনা জাগে না কালীর সমুখে। একবার কেউ বলেছিলেন, তিনি ইষ্টকে স্মরণ করেন তাঁর প্রয়োজনের দাবিতে এবং মানুষের জীবনে ঈশ্বরের মূল্য তততটাই। আমি ইষ্টকে প্রত্যক্ষ দেখতে চাই, কিন্তু এই মহাজনি চিন্তা মেনে নিতে পারিনি। আমি তাঁকে ভালোবাসতে চাই তাঁর জন্যই। আমি মুমুক্ষু, আমি অশ্রুতপ্ত, আমি আক্রোশী- শুধু ভালোবাসার জন্যই। তাই মাঝে মাঝে আমার মুখের যে অংশ বাজারের দিকে চেয়ে বাঁচবার ফান্দা খুঁজেছে, সেই অংশ আমি লাথি মেরে গুঁড়িয়ে ফেলতে চেয়েছি। কিন্তু এতে সৃষ্টি হয় না, চণ্ডালের ধর্ম পালন করা হয়। হে ইষ্ট, তবে আত্মহননের বিপরীতে কী আছে? ভালোবাসা? তাহলে কতটা এগিয়ে?

16.tif.jpg

শরকলমে খুব সুন্দর লিখতেন আমার ছেলেবেলার মাস্টারমশাই এবং লিখতে বলতেন আমাদের। কারণ, শরকলমে লেখা প্রকৃতির মতো হবে। আমি কখনো-সখনো দুপুরে ও সন্ধ্যায় শরকলমের সন্ধানে শরবনে চলে যেতাম। আর কুবোপাখির কুব কুব ডাক শুনতে শুনতে অন্ধকার হয়ে যেত। মাথায় সাদা কাশের মতো চুল নিয়ে মাষ্টারমশাই এখনও বেঁচে আছেন। ইচ্ছে করে জিজ্ঞেস করি, মাষ্টারমশাই, আপনি কি জীবনভর প্রকৃতির শান্তি পেয়েছেন?

16.tif.jpg

মাঝি-মাল্লার গান অনেকদূর। পিরের ‘মুশকিল আসান কর’ আছে। কিন্তু এই দোয়া কার কাছে? শহুরে বুদ্ধিজীবি আর গ্রামের ফকির - কে আজ আমার চালক? ঈশ্বরকে চাই অথচ নিরীশ্বরবাদীর কাছে নিষিদ্ধ কাহিনি এবং রাজনৈতিক মুনাফা লাভের গল্প শুনতে চেয়েছি। ‘হুতোম প্যাঁচার নক্সা’ আর ‘ছেলেবেলা’-কে মেলাতে চেয়েছি। কোজাগরির দিন অলক্ষ্মীর ব্রত উদ্‌যাপন করেছি। মাথাভাঙা নদী ও অষ্টমণীষা গ্রামের কথা মনে হয়। আমি কি কোনোদিন জন্মাব সেখানে! পীরের কুঁড়ে আর পুত্রহীনার কোল পাব? বৃষ্টি নামবে সেদিন। সব অশ্রু ও আধো হলুদ শরীর ডুবে যাবে। আজ মত্ততা নেই। মাত্রাহীন শান্তি আছে।

 

(নির্বাচিত অংশ)

bottom of page