বাঘমামার ভ্রমণ। সুদেষ্ণা মৈত্র
বিষয় : গল্প
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : কৌশিক দাস
পক্ষীরাজ প্রকাশনী
মূল্য : ₹১৮০
যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যাপ) : 8240333741
আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি গল্প এখানে দেওয়া
হল।
প্রথম অধ্যায়
খসখস খসখস। মুনির একটু তন্দ্রা লেগেছে। ‘কে কে?’ বলতেই চোখে পড়ল হলুদ-কালোয় চাকা চাকা দাগ কাটা কী যেন দরজার বাইরে আটকে গেছে। বাঘটা নাকি? আবার এসেছে! ভয় নেই, ছিল তো একটা এইটুকুনি ইঁদুর; কাকুতি-মিনতি করল তাই সেখান থেকে মন্ত্র পড়ে কুকুর করলাম, তারপর আবার মন্ত্র পড়ে কুকুর থেকে বাঘ, তাতেও সন্তুষ্টি নেই! বারবার আমায় খাবে বলে! এখন কি খেতে এল নাকি আবার অন্য মতলব!
কমন্ডলু হাতে নিয়ে মুনি উঠে এলেন। বাঘ লাফিয়ে পড়তে গেল মুনির ওপর, পারল না। লেজ আটকে গেছে ! মুনি বেজায় রেগে গেলেন, বললেন, কী হল! আবার দুষ্টুবুদ্ধি!
বাঘ: আমার খিদে পেয়েছিল খুব, কিন্তু যেখানেই খেতে যাচ্ছি, কেউ বলছে ওই নেংটি ইঁদুরটা না! কেউ বলছে কুকুরটা না! সকলের কথা শুনতে গিয়ে আর খাওয়াই জোটে না। তাই রেগেমেগে তোমাকে খাব ভাবলাম।
বাহ, কী চমৎকার কথা! লেজ আটকে গেছে বেশ হয়েছে। এইবারে ওইভাবে থাকো দরজায় আটকে।
ঘাট হয়েছে বলছি তো! লেজটার যেন কী হল। দ্যাখো না মুনিবাবা।
মুনি বলল, লেজ ঠিক করে দিচ্ছি, তোকে বাঘেদের দরবারের সদস্য করে দেব। তবে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে। কাজটা করতে পারলে আর কেউ কখনও তোকে ঠাট্টা করবে না। ব্যাঘ্রকুলে বেশ নামডাকও হবে।
করব গো করব। লেজটা ঠিক করো তো। আগে। প্রাণে বাঁচি! ভয় নেই, তোমায় আর খেতে আসব না পমিস (প্রমিস)।
তিনসত্যি বল। নইলে আবার ইঁদুর!
বলতেই বাঘ কেঁদে ফেলল। বলল, ইঁদুরদের রাজা বলে দিয়েছে আর ইঁদুরদের ওখানে ঠাঁই হবে না। কুকুররা তো বলেছে, নেংটি ইঁদুরের কুকুর হওয়ার শখ! দেব এক রদ্দা। বাঘই থাকতে চাই। পমিস। তোমায় খাব না, তোমায় কামড়াতে আসব না।
হুম বুঝলাম। তবে ভাবতে সময় দে।
বাঘ চোখ ভরতি জল নিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল, মুনিবাবা¾ সত্যি সত্যি সত্যি। এই তিনসত্যি করলাম। লেজ সারিয়ে দাও আর বলো কী করতে হবে। তুমি যা বলবে তাই করব।
মুনি জপের মালা হাতে নিয়ে মন্ত্র পড়ে লেজটা দরজার ফাঁক দিয়ে বার করে আনল। কিন্তু তবু লেজের কিছুটা দরজার কঞ্চির সঙ্গে আটকে রইল। মুনি তখন বললেন, বুঝলি বাঘুসোনা, আমি ধ্যানে দেখলাম তোকে পান্ডার কাছ থেকে চায়ের পাতা আনতে হবে। তবেই তোর মুক্তি। ওদের ওখানে যে চা-পাতা পাওয়া যায় তার মতো ভালো চা পৃথিবীর আর কোথাও মেলে না। কোথায় বল তো? সেই দার্জিলিং! চা-পাতা হাতে এলেই মন্ত্র পড়ে দেব, তুই পুরোপুরি রয়েল বেঙ্গল টাইগার হয়ে যাবি। জাতীয় পশুর ফোটক যখন তুলবে তুই থাকবি। আর কেউ কিছু বলবে না। বাঘ হয়ে ভালো ভাবে থাকতে পারবি।
আজ্ঞে যা বলবে মুনি বাবা। তবে এখন লেজটা খুলে দাও।¾ কাতরকণ্ঠে বাঘ বলে উঠল।
হুম! তাই তো! দাঁড়া আগে ছুতোরকে ডাকি। মুনিবাবা চেলাদের হাক দিলেন। ছুতোর আসার আগে মুনি বাঘকে বলে দিলেন কোন পথে গিয়ে কীভাবে পান্ডার কাছ থেকে চা-পাতা আনতে হবে। সবশেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন, সময় কিন্তু মাত্র চারদিন, মনে থাকে যেন।