বিষয় : উপন্যাস
এই ওঠো, সুবোধ, উঠে ঘরেই বসো বাইরে বসা ঠিক নয় - আব্বার নির্দেশ। চা আনছি।- বলে কুসুম ভেতরের ঘরে চলে গেল।
না কুসুম, আমি কোনো সমাধান জানি না। আমি হাঁটতে জানি শুধু। আমাকে হাঁটতেই শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। এক পা, দু পা করে।
হাঁটতে হাঁটতেই আমি ছড়িয়ে পড়ছি সংহত হওয়ার বদলে। এ ও এক ইচ্ছা নিরপেক্ষ ঘটনা। আমাদের অপেক্ষা করার নিদান নেই কুসুম, শুধু অতিক্রম করা ছাড়া।
কী হল চা নাও-
ও হ্যাঁ, এই দাও - কটা বাজে বলো তো - শামীম এল না যে -
আসবে ঠিক সময়। তার আগে তুমি বলো তো তুমি এভাবে চলে গেলে কেন?
বাধ্যত-
কেন? কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে কি এখানে থাকা যেত না?
থাকছিলামই তো, কিন্তু একসময় গা-ঢাকা দিতে দিতেই তো ঢুকে পড়ি ওপারে-
যদি বলি ওপার সম্পর্কে তোমার একটা অবসেশন ছিলই।
আজ আর অস্বীকার করে লাভ নেই -
না, এভাবে বললে মানব না।
আসলে এপার-ওপার সম্বন্ধে তথাকথিত ইতিহাসের বানানো গল্পটাতে আস্থা রাখতে পারিনি। ফলে ঘুরতে ঘুরতে একসময় সেই সব মানুষজনের মতো যারা ভোররাতের নক্ষত্র মাথায় নিয়ে একের পর এক আলপথ ডিঙ্গিয়ে চলে গিয়েছিল এক পার থেকে অন্য পারে, তাদের পায়ের ছাপে পা রাখার ভীষণ একটা চাপ তৈরি হয়েছিল মনে মনে। আর তুমি তো জানো আমার অন্তত বহুশ্রুত সেই তথাকথিত সুখ সন্ধান থাকার কথা নয় ওদিকে।
এত গভীর করে ফেললে উত্তরটা প্রশ্নটা কিন্তু তা ছিল না। - এই চা ঠান্ডা হচ্ছে।
হ্যাঁ -
উপায়হীনতার চোখ সুবোধ দেখেছে। সাদা ও নির্মম। জেনেছে রাষ্ট্রশক্তির কাছে নির্দিষ্ট হয়ে যাওয়ার পরিণতি। তার সশস্ত্র ব্যাপকতার মুখে খড়-কুটোর মতো ভেসে যাওয়া।
শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত, নিষিদ্ধ করে দেওয়া সংগঠনের সংগঠক সুবোধ কক্ষচ্যুত এক গ্রহাণুর মতো আজ ঢুকে পড়েছে কুসুম-শামীমের বাসায়। তাই প্রতি-রাতেই গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের কথাবার্তা পরামর্শ। মূল কথক সুবোধ সহজে ছাড়া পায় না। তাকে সব কথাই বলতে হয়। তার এই অভিযাত্রার সঙ্গী না হয়েও কুসুম শামীম এই অভিযাত্রার স্পর্শ পেতে গিয়ে সুবোধকে প্রশ্নের ভেতর ডুবিয়ে রাখে।
সুবোধ ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে একসময়। টের পায় ঠোঁটে করে মশারি গুজে দিচ্ছে কুসুম। আলো নিভিয়ে কপালে একটু হাত বুলিয়ে বলে যায় - ‘বাকিটা কালকে’।
বর্গমাইলের পদাতিক । রাজা সরকার
Within Chandannagar : 20 rs
Out of Chandannagar : 65 rs
Out of West Bengal : 85 rs