top of page

হরিহরের হাত ধরে কাশীর পথে যাত্রা করেছিল বিভূতিভূষণের যে ছোট্ট অপু, উলুখড়ের মাঠ পেরিয়ে সে-ই যেন ফিরে আসে আবার দুর্গাপুজোর নতুন জামা গায়ে। ম্লানমুখে দাঁড়িয়ে রেলগাড়ির দিকে চেয়ে থাকা দুর্গার হাত ধরে।
বসিরহাটে নির্বাসনের রুক্ষ দিনগুলো ভরে ওঠে ভোরের আশ্চর্য শিশিরবিন্দু দ্বারা। ভালোবাসার গোলাপী মাছ, ঝুঁটি বাঁধা মোরগ আর একজোড়া কাদামাটির টাট্টু ঘোড়া, বেড়ালের নরম পায়ের মতো ছাপ ফেলে যায় যাযাবর জীবনের অলিতে গলিতে, পায়ে হাঁটা রাস্তায়।
বৃষ্টি থামা সকালে একদিন জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় দুটোতে। যেন লার্ভা থেকে সদ্য ডানামেলা প্রজাপতি। মধু আরোহণ করবে শৈশবের দুটো নিঃষ্পাপ শুঁড় দিয়ে।
ভাই জিজ্ঞেস করে, আঙ্কেল তোমার ল্যাপটপে পোগো দেখা যায়! আমি বলি, না বাবা। পোগো, ওগো, হ্যাঁ গো, কিছুই দেখা যায় না। দিদি চোখ কপালে তোলে। ওল্টানো ঘটি হয়ে গড়িয়ে যায় হেসে।
এভাবেই নিশ্চিন্দিপুর সেজে উঠছিল বুকের মাঝে। পুকুর জলের শ্যাওলা গন্ধ। মাছরাঙার আসা যাওয়া। অমাবস্যা পূর্ণিমায় বাগদা চিংড়ির পিন ছাড়া।
টাট্টু ঘোড়াদুটো বুনোফুলের অবাধ্য গন্ধ ছড়িয়ে ক্রমশ ঢুকে পড়ছিল আমাদের মধ্যে। অনাস্বাদিত এক ঘ্রাণ যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল এক বালকের সেই নিশ্চিন্দিপুরের পোড়ো ভিটেয় ফিরে আসার কথা। সেই পোড়ো দেওয়াল, কুলুঙ্গি, আঁকিবুঁকি গ্রাফিতি। ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া একটা গল্প যেন একটু একটু করে গড়ে উঠছিল সময়ের রাক্ষুসে পেটের মধ্যে থেকে।

6:52

ক্যাম্বিস বলের মতো গল্পও কখনও কখনও জানালার গ্রিল গলে ঢুকে পরে ঘরের ভেতর। নতুন পাতা দাম্পত্যের হাসিতে খুশিতে, মাতাল করা দক্ষিণা বাতাসে।
হরিহরের হাত ধরে কাশীর পথে যাত্রা করেছিল বিভূতিভূষণের যে ছোট্ট অপু, উলুখড়ের মাঠ পেরিয়ে সে-ই যেন ফিরে আসে আবার দুর্গাপুজোর নতুন জামা গায়ে। ম্লানমুখে দাঁড়িয়ে রেলগাড়ির দিকে চেয়ে থাকা দুর্গার হাত ধরে।
বসিরহাটে নির্বাসনের রুক্ষ দিনগুলো ভরে ওঠে ভোরের আশ্চর্য শিশিরবিন্দু দ্বারা। ভালোবাসার গোলাপী মাছ, ঝুঁটি বাঁধা মোরগ আর একজোড়া কাদামাটির টাট্টু ঘোড়া, বেড়ালের নরম পায়ের মতো ছাপ ফেলে যায় যাযাবর জীবনের অলিতে গলিতে, পায়ে হাঁটা রাস্তায়।
বৃষ্টি থামা সকালে বেলজিয়াম কাঁচের আষাঢ়ে আলোয় একদিন জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় দুটোতে। যেন লার্ভা থেকে সদ্য ডানামেলা প্রজাপতি। মধু আরোহণ করবে শৈশবের দুটো নিঃষ্পাপ শুঁড় দিয়ে। অর্ধাঙ্গিনী বলে, তোমার মাথা। অপেক্ষা করে আছে, কখন অফিস বেরোবে। তারপরই ডাক পরবে আমার। দিদি বলবে বাড়িতে কী সাংঘাতিক ঘটনা ঘটিয়েছে ভাই! আরশোলা ধরে দিয়ে দিয়েছে থাম্মুর গায়ে। ভাই বলবে মিথ্যে কথা। আরশোলাটা ভুল করে উঠে পড়েছিল, সে নামিয়ে দিয়েছে বীরত্ব করে। তারপর দুটোতে লেগে যাবে ঝগড়া। এ বলবে তুই মিথ্যুক, ও বলবে তুই। আমি ইশারায় আঙুল ছোঁয়াব ঠোঁটে। চাপা গলায় বলব, থাম। ঝগড়া করলে পৃথিবীর সমস্ত আরশোলা হেসে উলটে পড়বে একসঙ্গে। ছোটটা চুপিচুপি পিছন থেকে বের করে আনবে তার জাদুহাত। হাতে কাগজের নৌকা। আমি বিষ্ময়ে ফেটে পড়ব আতসবাজির মতো। বড়টা অভিমানভরে দাঁড়িয়ে থাকবে। মান ভাঙাতে আমি বলব, এই নৌকায় করে আমরা যাত্রা করব যেখানে দিনেরবেলায় চাঁদ ওঠে, রাতেরবেলা সূর্য। গোণে গোণে জলকরে যাব, মাছেদের সঙ্গে কুমীরডাঙা খেলতে। দুজনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে।
ফ্লিপকার্টের ডেলিভারি আসে। একটা এক্সারসাইজ বল। দিদি চেপে পড়ে বলটার ঘাড়ে। ভাই লাথি মারে ফুটবলের মতো। আমি দাঁড়িয়ে দেখি অসহায়। অপমানিত কাকের মতো ফিরে যাই পাশের ঘরে। ল্যাপটপের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। খানিক বাদেই বলের দাপাদাপি বন্ধ। ওঘর থেকে হাজির হয় দুই মূর্তিমান। ভাই জিজ্ঞেস করে, আঙ্কেল তোমার ল্যাপটপে পোগো দেখা যায়! আমি বলি, না বাবা। পোগো, ওগো, হ্যাঁ গো, কি গো, কিছুই দেখা যায় না। দিদি চোখ কপালে তোলে। ওল্টানো ঘটি হয়ে গড়িয়ে যায় হেসে।
এভাবেই নিশ্চিন্দিপুর সেজে উঠছিল বুকের মাঝে। সংগ্রামপুর সেতুতে ইছামতীর নীলসাদা বৃষ্টি, ইটিন্ডাঘাটে বড় বড় বাজরার পেটে মাঠকোটা ইঁটের চালান। সকালের ল্যাদ খাওয়া রাস্তায় ঘোজাডাঙা সীমান্তের দিকে হেঁটে যাওয়া। পুকুর জলের শ্যাওলা গন্ধ। মাছরাঙার আসা যাওয়া। অমাবস্যা পূর্ণিমায় বাগদা চিংড়ির পিন ছাড়া।
টাট্টু ঘোড়াদুটো বুনোফুলের অবাধ্য গন্ধ ছড়িয়ে ক্রমশ ঢুকে পড়ছিল আমাদের মধ্যে। অনাস্বাদিত এক ঘ্রাণ যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল এক বালকের সেই নিশ্চিন্দিপুরের পোড়ো ভিটেয় ফিরে আসার কথা। সেই পোড়ো দেওয়াল, কুলুঙ্গি, আঁকিবুঁকি গ্রাফিতি। ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া একটা গল্প যেন একটু একটু করে গড়ে উঠছিল সময়ের রাক্ষুসে পেটের মধ্যে থেকে।
ওদের দিন যাপনের খেলায় আমি হয়ে উঠছিলাম অংশীদার। কখনও ভুলে যাওয়া কোন মেমারি গেম, কখনও লুডোর না পড়া ছক্কা, আবার কখনও বা ক্রিকেটের ব্যাট রেখে শূন্যহাতে উঠোন থেকে হাসতে হাসতে ঘরে ফেরা। নির্বাসিত জীবনের কারাগারে এসবই যেন হয়ে উঠছিল আমাদের জীবন ধারণের প্রধান ভাষা।
কিছুদিন পর, চিঠি এল সরকারি। পাঠ উঠল বসিরহাটের। পাঠ উঠল আমার সেই নিশ্চিন্দিপুরের। মনে মনে ঠিক করলাম, একদিন নিজের সব ছবি মুছে ফেলব। সামাজিক মাধ্যমে সাজিয়ে রাখব একটা পুরোনো চশমা, বইয়ের ভাঁজে রেখে হলুদ হয়ে যাওয়া বট কিম্বা অশ্বত্থের পাতা। আর পোড়ামাটির দুটো টাট্টু ঘোড়া।
সারাদিন বসে ভাবব, এক হারিয়ে যাওয়া নিশ্চিন্দিপুরের কথা।

জলের খোঁজে ভেসে । রাজেশ কুমার

₹200.00 Regular Price
₹160.00Sale Price
    No Reviews YetShare your thoughts. Be the first to leave a review.

    সম্পূর্ন ছবি দেখার জন্য বইয়ের ওপরে ক্লিক করুন

    1111-removebg-preview.png

    গল্পের বই উপহার পেতে কে না চায়!
    এখনই Subscribe  করুন,
    আর পেয়ে যান আপনার প্রথম বইটির মূদ্রিত মূল্যের ওপর ২৫% ছাড় 

    Thanks for being our family!

    • Youtube
    • pngwing.com
    • 1111
    • tumblr
    • Instagram LOGO PNG2

    +91 8240333741

    Magic Seeds Books LLP

    119 Abhay Patuli Lane, Shuksanatantala, Chandannagar 712136

    Email us at: manikarnika.pub@gmail.com

    For any other queries feel free to reach us at: 8240333741(Call/Whatsapp)

    ©2022 by Manikarnika Prakashani.

    bottom of page