top of page

বিষয় : গল্প

 

বর্ডার

 

চৈত্যা ওরফে চৈতন ওরফে চৈতন্য যিশুখ্রিস্টের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। যিশুখ্রিস্টের পেছনে একটা ক্রুশ কাঠ ছিল। চৈতন্যর পেছনে কিছু নেই, শুধু হাওয়ায় ভাসা একটা প্রান্তর। এই প্রান্তরটা ইন্ডিয়া। সামনে দুইতলা বাড়ির সমান উঁচু কাঁটাতারের বেড়া যা সীমান্ত বলে চিহ্নিত। আগেকার খর্বকায় সীমান্তের

চিহ্নস্বরূপ পাকা পিলারগুলো কোথায় আছে চৈতন্য জানে না। জানার দরকারও হয় না। কারণ এই উঁচু কাঁটাতারই এখন সীমান্তের চিহ্ন, যা ডাইনে বাঁয়ে যে কত দূর চলে গেছে চৈতন্য জানে না। কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকফোকর দিয়ে দেখা যায় এদিকের মতোই কিছুটা প্রান্তর ওদিকেও, বা ভালো করে তাকালে দূরে কিছু গ্রাম বা চাষবাসের খেত বা একটু ভালো করে তাকালে দু-একজন মানুষও দেখা যায়।

ওটা এখন বাংলাদেশ।

চৈতন্য এইভাবে যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ততক্ষণ সামনের এই উঁচু কাঁটাতারের বেড়াটি থাকে না, সরে যায় অথবা মিলিয়ে যায়। চৈতন্য তখন পরিষ্কার দেখতে পায় একটি গ্রাম, পলাশপু্‌র, একটি বাড়ি, দুটি নুয়ে পড়া টিনের ঘর, কিছু গাছপালা কিংবা কোনো ঘরের চওড়া বারান্দায় সেই কবেকার ঘোলাটে আলপনা, তার মধ্যে একটি নাম না জানা গাছের চারা দাঁড়িয়ে। চারাটি বড়ো হয় না। সেই কবে থেকে যে সে দেখছে। ঘরের চালের উপর অদৃশ্য এক পাটাতনে তার বাবা শ্রী বিষ্ণুচরণ বণিকও ঠিক ওইরকম, কতদিন যাবৎ যে দেখছে। কোনোদিন চিৎ হয়ে শুয়ে থাকেন, কোনোদিন সাধুদের মতো বসে থাকেন, কোনোদিন পায়চারি করতে থাকেন আর নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে হাওয়ায় ওড়াতে থাকেন। হাওয়ার অদৃশ্য আগুনে সেই চুল পুড়তে থাকে।

এইরকম এলোমেলো অনেক দৃশ্যপটে চৈতন্য চিনে নেয় এটাই তার দেশ, তার দিদির দেশ, তার বাবার দেশ, তার মায়ের দেশ।

কখনও এমনও হয় যে চৈতন্য ক্রমে ছোটো হয়ে যায়, বলা ভালো, বালক হয়ে যায়। তখন সে দেখতে পায় খেলার মাঠ, ইস্কুল ঘর, হেডমাস্টার, পিয়ারা খাতুন, আব্দুল, কমল, ননী ও আরও অনেক বালক-বালিকা, সবই চলমান, কিংবা নুয়ে পড়া ঘরের আঙিনায় আধ-ঘোমটা দেয়া একজন মহিলা, তার চলমান অবয়ব। যার ঘোমটা সরালে হয়তো দেখা যাবে এই মহিলা তার মা। কিন্তু কোনোদিনই এই সন্দেহের নিরসন সে করতে পারে না। বেলা ঢলে যায়। সন্ধে হয়ে আসে। অন্ধকার ধেয়ে আসে।

ভাঙা-গলায় চৈতন্য ডাকে - মা, ওমা কোথায় তুমি? কবে আসবা? চৈতন্যর কথা কেউ শুনতে পায় না। চৈতন্য নিজেও কি শোনে? হয়তো শোনে না। তার ভাঙা-গলায় ফ্যাস ফ্যাস করে বলে চলে - কবে আসবা, কবে আসবা, কবে আসবা…

কিন্তু বাস্তবে এই সময় কাছাকাছি গাছের ছায়ায় দাঁড়ানো দুজন সশস্ত্র বিএসএফ দৃশ্যটা দেখে আর মনে মনে ভাবে - পাগল যে কত কিসিমের হয় কে জানে! যদিও তারা এজন্য বিশেষ কিছু করে না। কারণ তাদের ঠিক করে দেয়া নির্দিষ্ট লাইনের এপারেই থাকে চৈতন্য। ওপারে যায় না বা যাওয়ার চেষ্টা করে না। লাইন পার না হলে অফিসারের নির্দেশ আছে ওকে ডিস্টার্ব না করার। ফলে তারা কিছু করে না। শুধু নজর রাখে।

এই কাজটা চৈতন্য কবে থেকে শুরু করল, কতদিন যাবৎ করে যাচ্ছে, এই বিষয়ে কাছাকাছি বিএসএফ ক্যাম্পে একটা ধারণা সঞ্চিত আছে। এক ব্যাচ বদলি হয়ে চলে গেলে অন্য ব্যাচ এই কাহিনিটা হাত-বদল করে নিয়ে নেয়।

প্রথম প্রথম চৈতন্যকে ধরা হত। ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে জেরা করা হত, দু-একটা চড়-থাপ্পড়ও দেয়া হত। অবশ্য খবর পেয়ে চৈতন্যর বাবা বিষ্ণুচরণ এসে কর্তাদের হাতে-পায়ে ধরে, পরিচয়পত্র দেখিয়ে ছাড়িয়ে আনতেন। বলতেন, আমার ছেলেটার মাথার দোষ আছে। তখন চৈতন্যের বাবা বেঁচে।

 

দেশভাগের ভাঙা আয়না ও শচীন চক্কোত্তি । রাজা সরকার

SKU: DVAOSC-1
₹300.00 Regular Price
₹240.00Sale Price
  • Within Chandannagar : 20 rs
    Out of Chandannagar : 65 rs
    Out of West Bengal      : 85 rs

No Reviews YetShare your thoughts. Be the first to leave a review.

সম্পূর্ন ছবি দেখার জন্য বইয়ের ওপরে ক্লিক করুন

bottom of page