ধুলোপথ বারুদপথ । শাশ্বত ব্যানার্জী | Manikarnika.Pub
top of page

ধুলোপথ বারুদপথ। শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

Dhulopath Barudpath.jpg

বিষয় : কবিতা

প্রচ্ছদ : শাশ্বত বন্দোপাধ্যায়

পরিবেশক : মণিকর্ণিকা প্রকাশনী

মূল্য : ₹ ১০০

যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যা‌প) : 8240333741

 

 

আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির দুটি কবিতা এখানে দেওয়া হল।
Our Store Button PNG.png

নির্ঘোষ

 

শব্দের পাশে শব্দ বসে আগুন জ্বালায়, জ্বালায় রোষ

তাদের মধ্যে শান্ত সেতু, ওই যে নীরব শঙ্খ ঘোষ

 

দাঁড়-পাঁজরের ভীষণ আওয়াজ, জল-বাতাসের কী আক্রোশ

আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঢেউ ভেঙে যান শঙ্খ ঘোষ

 

মধ্যরাত্রি, বর্বরতা – ফুরিয়ে আসছে অস্ত্রকোষ

নিজের হাড়ে বজ্র গড়ে যুদ্ধে দিলেন শঙ্খ ঘোষ

 

অবাক মুণ্ড হেঁট হয় না – রাজদ্রোহীর এই তো দোষ

দ্রোহ যখন শরীর পেল, আমরা পেলাম শঙ্খ ঘোষ

 

আসন যতই হোক না উঁচু, আসন তবু – আকাশ নোস্‌

সেই আসনেও ঘেরাও হবে, রাত জাগবেন শঙ্খ ঘোষ

 

কবজাগুলোর কবজি ভাঙে তাই তো তাদের অসন্তোষ

পোস্টারে ওই পঙ্‌ক্তিগুলোয় তাকিয়ে আছেন শঙ্খ ঘোষ

 

চুল্লিগুলো উঠবে জ্বলে যতই পুলিশ, গুন্ডা পোষ

তোমার দেহেই ফুঁ দিয়েছি, লড়াই শুরু – শঙ্খ ঘোষ!

 

 

প্রসব

(ঋণঃ উৎপলেন্দু চক্রবর্তী)

 

শ্রাবণ শেষ হয়ে এল। কোথাও সানাই বাজছে খুব।

 

বনের ধারে জনপদ, আর দু’চোখভরা ঘুম নিয়ে

ঘন অন্ধকার বন।

ভিজে গাছপালা, জোনাকিমহল্লার ভেতর দিয়ে

এঁকেবেঁকে ঘুরে ফিরছে নববিবাহের সুর

 

সেই সুর এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে চোখ

নীরক্ত উনুনের পাশে ভাসানপ্রতিমার মতো শ্বাসহীন নারী,

তড়িৎহাতে কাঁধের ঝোলাখানা টেনে

খিড়কিদুয়ার দিয়ে ঝোপেঝাড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে অগ্নিশলাকা

 

গাছপালা ছুঁয়ে ছুঁয়ে ওই সে হাঁটছে।

শ্রাবণঅরণ্যের ছোঁয়া লেগে

তার রুক্ষ হাতের পাতা যদিও কিছুটা নরম

তবু, ভোল্‌গার তীর থেকে এক ডাক এসে

সব ঘুম ভেঙে দিচ্ছে ওর

 

দ্রুত, আরও দ্রুত –

দিগন্তে ফুটে উঠছে আলো, আততায়ীর মতো এক ভোর

 

সে এসে থামছে শহরকিনারে।

এদিক ওদিক দুস্থ বাড়িঘর,

উঠোনেই ঘুমিয়ে পড়েছে ধুলোয় ঢাকা ছেলে।

শুধু এই ভোরবেলা বুঝি তাকেই আতিথ্য দেবে বলে

হাজার পাতার মরকতচোখ মেলে ধরেছে এক ঝাঁকড়া বকুল

 

তরুছায়ায় সে বসছে হাঁটু গেড়ে।

 

বন্ধুর শহীদবেদীর পাশে তখন

প্রতিশ্রুতির মতো কেঁপে উঠছে শিশিরসিক্ত ফুল!

 

 

ধুলোপথ বারুদপথ

 

তুমি কি ভিজে গেছ খুব? আজ কি হেঁটেছ মিছিলে?

তুমিই কি দূর-থেকে-আসা কিশোরকে পথ বলে দিলে?

 

এই প্রথম মিছিলে আসা। একাই। নন্দন চেনে না ও ছেলে

তুমি কি যাওনি আজ, ভোর থেকে জল হল বলে?

 

সেদিনও জলের মতো মাঝরাতে ঝরেছিল শতধারা খুন

চিনতে পারোনি ঠিক, শোনো বলি – জল আজ আসলে আগুন

 

দেখে নিল সঙ্গে কে কে আছে কার আছে বুকফাটা রাগ

আর কে কাঁপে বৃষ্টিভয়ে, লুকোয় উল্কি আঁকা ক্রীতদাস-দাগ

 

তুমি কি বসেছ ধুলোয়, বলেছ হোক হোক কলরব হোক

অদূরে নিথর ক্ষমতাসীমা টানা – ত্রিস্তরে কাঁপছে শাসক

 

এভাবে কি রোখা যায় আর, হে আদিম বুরবক সেনা

শব্দ রুখতে পারো? রোখো তবে মেঘে মেঘে ক্রুদ্ধ চেতনা

 

সে মেঘ বার্তা নিয়ে পৌঁছল দূরদেশে, সেই জলে বন্ধুরা বুঁদ

আসতে পারেনি তবু রাত-জাগা – মনে মনে সবাই বারুদ!

 

এসেছে গঞ্জ গ্রাম, এসেছে মফস্বল, ‘আছি’ বলে এসেছে সবাই

যে আজ আসেনি সে-ও আগামীর রণে ভাববে একবার যাই

 

তুমি কি রাজপথ, ছেলেরা বসবে শুনে ধুলোমাখা বুক পেতে দিলে?

আজকে বর্ষা ঘোর, তবু জল নয় – গোটা দেশ ভিজেছে মিছিলে ...

আসন

ও-মেয়ে মাঠগ্রস্ত, ও-মেয়ে শুধুই ধুলােধর্ম বােঝে!
নামাও। ভাঙো। ঘাের চুরমার করাে—তবে না সহজে
থামাতে পারবে ওকে। বলবে, সেই ছেলেকালে
আমরাও ছুটেছি অমন। সব জাড় ভেঙে দিকচক্রবালে
ও কেন একাই ছুটতে ছুটতে উঠে যাবে?
                              কেন এক অলীক পরশ
ঊষালােক হয়ে রােজ ছুঁয়ে দেবে মুখ?
                             খড়ের গাদায় একটিও দোষ
খুঁজে পাও যদি, তােমার আমার পাশে ওরও হবে সমান আসন

বুকের ভেতর ধিকিধিকি জ্বলে শুধু খড়
তােমাকে আমাকে আজ নাচায়-ঘােরায়—আসলে তাে আসনের মন!
bottom of page