top of page

ধনপতির কথাপালা । মধুময় পাল

8b1d4e_558638ba091447b596d6135f028341c8~mv2.jpeg

বিষয় : গল্প

প্রচ্ছদ: শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

মূল্য : ₹ ৪০০

মণিকর্ণিকা প্রকাশনী

যোগাযোগ (কল ও হোয়াটস্অ্যা‌প) : 8240333741

Amazon Button PNG.png
Our Store Button PNG.png
আগ্রহী পাঠকদের জন্য বইটির একটি গল্প এখানে দেওয়া হল।

বেজি

এখানে রাত যখন গভীর হয়, সূর্য না উঠলেও পাতলা আলোর অ্যাসিডে অন্ধকার গলে যেতে থাকে। অন্ধকারের যে চ্যাটচেটে ভাব আছে, সেটা সহজে ছাড়ে না, চারপাশ তেতে একটু একটু করে পুড়ে যেতে থাকলে তখন পূর্ণ গভীর রাত। সেই চ্যাটচেটে ভাবের মধ্যেই মানুষজন ঘুমোতে ঘুমোতে ক্ষুদ্র হয়ে যায়, যেন জেগে ওঠার ইচ্ছে তাদের নেই, প্রয়োজন নেই, বরং অন্ধকারের বাইরে তাদের হাত বা পা বা মাথা চলে গেলে অবচেতনের তীব্র বিরক্তিতে গাঢ়তর অন্ধকারের আশায় পাশ ফেরে। এখানে ভোরের পাখি নেই, অভ্যাসবশত এসে-পড়া দু-চারটে কাকের ডাকারও স্পৃহা নেই, শুধু জল আসে ছরছরিয়ে, ভোরের ধার্মিকতা নেই, কেন না এখানে ধর্মপ্রচারকরা বাস্তবিক অন্ধকারে কাজ করে, শ্রম-ধান্দা-ফিকিরের শেষে শরীর যখন অবসন্ন, বুকে পরাজয়, চোখে-মুখে জীবনযাপনের ক্লেদ, মানুষ সে-সময় ধর্ম খুব ভালো খায়, পাঁকাল মাছও ছুটে আসে ধর্মের মদির চারে।

      এখানে ইঁদুররাই শুধু ভোর দ্যাখে। অসংখ্য ইঁদুর, বেড়ালের অধিক গতর তাদের, ভয়হীন ভ্রান্তিহীন চলনে রাস্তাপাট জুড়ে থাকা তন্দুরির টুকরো, মাংসের হাড়, ন্যাতানো বেগুনি, আলুর পিণ্ড, পাঁউরুটির মোড়ক, বোতলের ছিপি, পানমশালার পাউচ, ডেইলি লটারির কাগজ, নায়িকার শরীর, নষ্ট টেপের ফিতে অন্তহীন গর্তে টেনে নিয়ে যায়। গায়ে-মাখা সূর্যের তাপ বারবার গর্তে রেখে আসে উষ্ণ বসবাসের আশায়।

আজ আরও দুজন ভোর হতে দেখেছে।

       ছেদিলালের তক্তপোশের ওপর চিৎ শুয়ে গান গাইছিল গুলে: ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।

        দেশপ্রেমাত্মক অনুষ্ঠান বা দেশপ্রেমের প্রহসনে এইসব গান যে কুশলী অর্থময়তায় গায়, গুলের গলায় তা ছিল না, কারণ সুরের অভাব, শিক্ষার অভাব। তবে একটা মগ্নতা ছিল, যা এতদঞ্চলের পূর্ণ গভীর রাত ও তক্তপোশের নীচে জেগে-থাকা বেজির চোখে ভোরের আলোয় মাত্র দুটি লাইনে হাত-লাট্টুর মতো পাক খায়। গতকাল, দেশ-নাকি-ভেঙে-যাচ্ছে এরকম একটা হুঁশিয়ারিমূলক ও মেরামতিমূলক সভায় গানটা শুনেছে গুলে।

      ফাঁড়ির ভবা সিপাই কাল চুষিয়ে বেজিকে টাকা দেয়নি। উল্টে ধমকি দিয়েছে, মার্ডার কেসে ফাঁসাবে। চোষা বা চোষানোটা ক্রাইম নয়, আইনের হাতে পড়ে না, এই কাজে বেজি মাঝে-মধ্যেই ঠকে, বিশেষ করে কাজটা যদি পুলিশের হয়। ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছে, কিন্তু কী করবে, ভালো কাজ কই? ভারত কী গো, গুলেদা?

        আমাদের দেশ।

        তালে ইন্ডিয়া?

        একই হল।

        মিস ইন্ডিয়া?

        ওটা ভালো না। টনির বউ যেমন। মাই দেখায়, উরুত দেখায়।

        ইন্ডিয়া ভালো?

        ওরা তো বলে। মায়ের মতো।

        এত ভালো?

        ভালো, তবে...

        তক্তপোশের নীচে বেজি গুলের থেমে যাওয়া কথার ভেতর সন্দেহ টের পায়। তবে কী, গুলেদা?

বেজি, তোর মাকে দেখতে ইচ্ছে করে?

       বেজির মা হয়ত এখন পালবাবুর গুদাম ঝাড় দিয়ে ফিরছে। গুদামে ইঁদুরের গর্ত থেকে চাল টেনে বের করতে হয়। মা একবার আংটি পেয়েছিল গর্তে। বাবা বিশ্বাস করেনি। মা-র ডান হাতের তিনটে আঙুল ইঁদুরের পেটে গেছে। বাবা বিশ্বাস করেনি। বাবা বলে, সব পালবাবুর খেল! লুকোও কেনে? আংটি দেয়, শরীল খায়। বেজির মা কাঁকড়ার দাঁড়ার মতো দু-আঙুলওলা হাত নেড়ে বলে, বাজে কথা কোয়ো না। জিভ খসি যাবে। শঅরে চুল্লু ছাপ্লাই করিনি বলে যার-তার নামে বাজে কথা, ভগমান সবেনি। বেজির বাবার একটাই কথা, গাঁয়ের চার-পাঁচটা বউ কেরিয়ারি করে সুখে আছে। হাতে পয়সা এলে ভদ্দরলোকের মতো বাঁচা যায়। পয়সা এলে সরমান হয়। শহর তক্‌ গাড্ দে নে যাবে। কোনো ঝামেলি নেই। ফিরতেই হাতে হাতে পয়সা। বেজির বাবার দুঃখ, কত লোক তার বুদ্ধি নেয়, আর ঘরের মেয়েমানুষটা স্বামীকে গেরাহ্যি করে না।

        গুলে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, মা-র কাছে যাবি, বেজি?

      ভয় করে। সত্যিই ভয় করে বেজির। শিয়ালদা থেকে দু-ঘন্টা রেল। তারপর দুটো নদী। পথে যেখানে পাবে, খপ্‌ করে ধরবে পুলিশ। রিয়াজুলের বাপ বঁটি নিয়ে তেড়ে আসবে। আর, রিয়াজুলের লাশটা, পাথরে থেঁতলে দেওয়া মুখটা এখনও ঘুমের মধ্যে বেজিকে তাড়া করে।

গুলে গান ধরেছে: বলো বলো বলো সবে, শত বীণা বেণুরবে।

        মায়ের কথায় বেজি বাবাকে পাবেই। এত অবিচ্ছেদ দুজনের। কত লোক দিনভর ঘুসুর-ফুসুর করে পাড়াপড়শির সর্বনাশ ভাঁজে। তার চেয়ে ঢের ভালো বেজির বাবা। কোনো সাতসকালে গলা অব্দি চড়িয়ে এসে হাঁক পাড়বে, তোদের বাড়ির জামাই এলাম রে, আদর-যত্ন কর, দাওয়ায় মাদুর বিছিয়ে তাকিয়া দে। ও বেজির মা, বরের সঙ্গে দু-হাত দাবায় বোসো না! বা, কোনো সন্ধেয় বর্ডার থেকে ফিরছে বলে উঠোনে দাঁড়িয়ে স্টেনগান-মেশিনগানের ট্যা-ট্যা-ট্যা-ট্যা শব্দে, যা সে দেশপ্রেমিক সিনেমায় দেখেছে, নিজেরই গলায় শত্রুর আর্তনাদের মধ্যে চিৎকার করে ওঠে, আউর চার দুশমন খতম হো গয়া। বা, সাইকেল ভ্যানে দাঁড়িয়ে সীতা-চোর রাবণের অট্টহাসি ও বক্তৃতায় চারপাশে লোক জমিয়ে দেয় বেজির বাবা।

        কোনোদিন যাবি না?

        জানি না।

        তুইও আমার মতো।

      গুলে কীরকম বেজি জানে না। বেজি এ তল্লাটে প্রথম যখন হাজির হল, পালাতে পালাতে; রিয়াজুলের থেঁতলানো মুখ থেকে, রিয়াজুলের বাপের বঁটির কোপ থেকে, মা-র কান্না থেকে, থানার ভয় থেকে আর সেই সাধুবাবার খপ্পর থেকে, গুলেকে সে বলে ফেলেছিল তার পাপের কথা, মনে হয়েছিল, গুলে তাকে বাঁচাতে পারে। বছরখানেকেই বেজি পাল্টে গেছে। বোঝে, মা-বাবা একটা লতলতে ব্যাপার। ভেন্ডি সেদ্ধর মতো, মাখামাখি করে হড়কে যায়। বেশি চটকালে গা ঘিনঘিন করে। তার মা খালপাড়ে থাকে, এর একটি বেশি কথা গুলে এতদিনেও বলেনি।

          গুলে গানে ফিরেছে: ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।

        মানেটা বেজির বুদ্ধিতে খুব পরিষ্কার নয়। তবে গানটা ভালো, বেজি ধরতে পারে। লালপাড় হলুদ শাড়ি-পরা, গাঁয়ের মাঠে জোছনার মতো মেয়েরা এবং বকের মতো সাদা জামা-পরা ছেলেরা গলা মিলিয়ে গাইছিল, তারা নিশ্চয় লেখাপড়া জানে, তাদের বড়ো ঘরবাড়ি আছে। বিল্লে একবার ‘চুরালিয়া’ বলে চেঁচিয়ে উঠল। ওরা কানে তোলেনি।

          কাল গুলের কাজ হয়নি। কেষ্টপুর থানার মেজবাবু নিমাই সাঁতরার খুলির পেছন দিকটা কারা যেন কুপিয়ে নামিয়ে দিয়েছে। তার জন্যে চুল্ল-গাঁজা-হেরোইন পাচার, জুয়া-সাট্টা, প্রোমোটারের হিস্‌সা, রেশনের মালঝাড়ি, হোটেলের হপ্তা, ভাড়াবাড়ির দালালি, ভাড়া-গাড়ির কমিশন সব বন্ধ। থানার ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেনি গুলে। গা-চকচকে সব ঘ্যামা গাড়ি। রাতে লরি ধরার কাজও হবে না। বিকেলেই খবর পায়। এ পাড়ায় দু-বেলা শোক এই প্রথম।

       আমদানিহীন সেই সন্ধেয় বড়ো রাস্তার মোড়ে রঙিন কাপড় বাঁধা মাচার পাশেই বসে পড়ে গুলে। দানু সিংয়ের ঝক্কড় গাড়িটা যেখানে মামলার কু্ষ্ঠে তিন বছর পড়ে থেকে থেকে হাত-পা-মাথা-ইঞ্জিন সর্বাঙ্গ খসাচ্ছিল, সেটা সরিয়ে যে গলতা বেরিয়েছে, তা নিয়ে কাস্তে-হাতুড়ি আর বাঘ ঝান্ডার ঘোর লড়াই, সেখানে ‘দেশ ভাঙার চক্রান্ত রুখছি রুখব’ হল। খারাপ পাড়ার সন্ধের মতো একটা ভীতু লোভী ও মাগনার ভিড় প্রথমে লাট খাচ্ছিল, বিশেষত বক্তৃতা যখন চলে, পরে রাত্রি হলে জমে যায় গানে এবং বিশেষত সুন্দর সুন্দর বন্‌রুটির মতো নরম বুকের মেয়েমানুষে। নিজের মুখে বসন্তের দাগের চেয়েও গুলে বেশি ভালো চেনে এই ভিড়। বেজিকে খুঁজেছিল। ছেলেটা জলসা ভালোবাসে। হয়তো কাজে গেছে কাঁটাপুকুর বা মালিপাড়া। দুটো বুড়ো খদ্দের আছে, কাজ না হলেও দু-পাঁচ টাকা দিয়ে দেয়। পুলিশ লাইনে আজ কড়াক্কড়ি। কাঁটাপুকুর বা মালিপাড়া গেলে বেজির ফিরতে দেরি হয়। বড়োরাস্তায় তখন বাড়ি-গাড়ি সব গুটিয়ে যায়।

          জমে-ওঠা গানবাজনার মধ্যেই বেজি ফেরে। গুলের পাশে বসে।

          কোত্থেকে এলি?

          বেজি জবাব দেয় না।

          কোথায় গেসলি?

          বেজি জবাব দেয় না।

          কী হল?

          ওই শালার ভবা সিপাইটা ধরল।

          কিছু বলল?

          শ্মশানে নিয়ে গেল।

          শ্মশানে কেন?

          ছেত্রীদের ভাঙা বাড়িতে।

          ওখানে কে থাকে?

        কেউ না। কাজ হবে বলে নিয়ে গেল। থানা আজ ভারি গরম। যখন-তখন তোলতাই হতে পারে। ভড়কি দিয়ে কাজ করিয়ে নিল। পুরো মাল খালাস করলাম। শালা, টাকা চাইতেই বলে, একবার তুললে মার্ডার কেস।

           মাচায় গান হচ্ছে: ধর্মে মহান হবে, কর্মে মহান হবে।

           গুলে বেজিকে ভরসা দেওয়ার মতো কথা খুঁজে পায় না। শুধু ওর গায়ে হাত রাখে।

         গান চলতে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুধের সর পড়ার মতো ভিড় আরও আঁট হয়। প্রতিটি গানের শেষে এক খামচা ভিড় হাততালি দেয়। প্রতিটি গানের শেষে একটা লোক খানিক বক্তৃতা করে। প্রতিটি গানের শেষে ছেলেরা-মেয়েরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, হাসি দেওয়া-নেওয়া করে।

           গুলে বেজিকে বলে, তুই এখান থেকে পালা।

ব্যাপারটা অনেকবার ভেবেছে গুলে। বেজি এভাবে বাঁচতে পারে না। বেজিকে বাঁচানো যাবে না। যে ছেলেটা খুনের ঘটনার জন্য কষ্ট পায়, যে ছেলেটা খুনি হয়ে উঠতে পারবে না, বরং ভালোভাবে বাঁচতে চায়, পুলিশ তার রক্ত চুষে আধমরা করে বাঁচিয়ে রাখবে।

        বেজি যতই বলুক, রিয়াজুল হঠাৎই মরে গেল, যতই বলুক, তারা তিনজন গরমের দুপুরে পুকুরে খেলছিল, গুলেদা, অত বড়ো পুকুর তুমি দ্যাখোনি, ওলাবিবির পুকুর, ঠান্ডা জল, নিমগাছ জামগাছ ঝুলে আছে, একটা টগর আর একটা কাঁঠালিচাপা, কত ফুল জলে ভাসে, ওলাবিবির থানের দিকে জলটা কেমন সবুজ, ওষুধের গাছ সব ফুটে আছে, জানো গুলেদা, বলাই এক দমে পুকুর পার করে দেয়, তলা থেকে মাটি তুলে আনে, বলাই বলেছে, পুকুরের নীচে তিনটে কুয়ো আছে, তাই চোত-বোশেখেও জল শুকায় না, ওলাবিবির থানের নীচে লুকোনো সিঁড়ি কুয়ো থেকে উঠে এসেছে, পুকুরে যেসব ফড়িং উড়ে বেড়ায় তারা ওলাবিবির ঘোড়া হরিণ, জোছনার রাতে মাঠে তাদের দেখা যায়। বিশ্বাস করো গুলেদা, বলাই আর আমি জামগাছ থেকে ঝাঁপাচ্ছিলাম, রিয়াজুল একটা হেলে ধরে ছুঁড়ে দিল আমাদের দিকে, বলাইয়ের মুখে লেগেছিল সাপটা, রিয়াজুল খুব হাসল, তেড়ে গিয়ে বলাই রিয়ালের এক ঘুসিতে ছিটকে পড়ে, মায়া হলের সিনেমার মতো রিয়াজুল ঘাড় বেঁকিয়ে ঘুসি পাকিয়ে এক পা এক পা এগিয়ে আসে আমার দিকে, আমি চিন্টুদার মতো লাফিয়ে ক্যারাটে ঝাড়লাম, রিয়াজুল ঘাটে মাথা ঠুকে ডিগবাজি খেয়ে জলে পড়ল, বলাই আর আমি টেনে তুললাম, মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পড়ছিল, শরীরে সাড় নেই, নেতিয়ে পড়ে আছে। বলাই ওর মুখে ফুঁ দিয়ে, বুকে-পিঠে চাপ দিয়ে সাড় আনার চেষ্টা করল। তারপর বলল, বেজি, রিয়াজুল মরে গেছে। বিশ্বাস করো গুলেদা, আমি লোকজন ডাকতে বললাম। বলাই ভয় দেখাল। বলল যে আমার ফাঁসি হবে। আমি রিয়াজুলকে মেরে ফেলেছি। তারপর একটা ঝোপে বডি টেনে নিয়ে রিয়াজুলের মুখ ইট মেরে থেঁতলে দিলাম। বলাই বলল, লোকে বুঝবে অ্যাকসিডেন্টে মরেছে। আমরা বেঁচে যাব।

         দু-দিন রিয়াজুলের আতিপাঁতি খোঁজ চলল গ্রামে, পাশাপাশি গ্রামে। বেজি কিছু বলেনি। বলে দিল বলাই। বন্ধু বলাই পাত্র সাক্ষ্য দিয়াছে যে পুকুরে কলহ করিতে করিতে বেজি রিয়াজুলকে ধাক্কা মারে। রিয়াজুল ঘাটে মাথা ঠুকিয়া পতিত হয়। বলাই রিয়াজুলকে বাঁচাইতে চেষ্টা করে। কিন্তু, বেজি তাহাকে ভয় দেখাইয়া রিয়াজুলকে টানিতে টানিতে ঝোপে লইয়া যায়। তত্রস্থ পাথর দিয়া উপর্যুপরি ঘা মারিতে মারিতে মৃতের মুখশ্রী ভয়ঙ্কর নষ্ট করে ও তাহাকে হত্যা করে। সাক্ষীর বয়ানে জানা গেছে, আসামী বেজির ভয়ে সে দুইদিন ঘটনা কাহাকেও বলে নাই। অবশেষে মনস্তাপজনিত কারণে সাক্ষী তাহার পিতা ও মাতার কাছে খুলিয়া ব্যক্ত করে। সাক্ষীর পিতা সুধাকর পাত্র ও মাতা শিউলি পাত্রর বয়ানে প্রকাশ যে তাহারা তাহাদিগের পুত্রকে আসামী বেজি ওরফে বিজয় লোধের সঙ্গে মিশ্রিত হইতে পুনঃপুনঃ নিষেধ করিয়াছে। তাহাদিগের পুত্রকেও আসামী খুনের চেষ্টা করিয়াছিল।

            মৃত (নিহত) রিয়াজুল ইসলাম, বয়স আন্দাজ ১৪

            পিতা হাজি রফিকুল ইসলাম, বয়স আন্দাজ ৫৮

            আসামী বিজয় লোধ ওরফে বেজি, বয়স ১৩

            পিতা গগন লোধ ওরফে বোতল, বয়স আন্দাজ ৩৩

            সাক্ষী বলাই পাত্র, বয়স ১৩

            পিতা সুধাকর পাত্র, বয়স ৪১

            তদন্তকারী অফিসার মেলেটি থানার সেকেন্ড অফিসার শ্রী শক্তি ঢ্যাং।

        তক্তপোশের ওপর নীরবতা। তক্তপোশের নীচে বেজি বিড়ি ধরায়। গুলে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। এসময় একটা ঘুম শরীর অবশ করে দেয়, কিছুতেই ঠেকানো যায় না। মাথার ভেতর ফোঁটায় ফোঁটায় ঘুমের মধু ভারী হতে থাকে। বেজিরও ঘুম পাচ্ছে। সে দেখে, ইঁদুরগুলো নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় ঢুকে পড়েছে। ঝগড়া করছে। তাড়া করছে। পালাচ্ছে। তারই মধ্যে দাঁতে খুটছে গোটানো কাগজ, সিগারেটের খোল, প্লাস্টিকের কাপ, শুকনো ফুল। লালজানের কুচো বাঁদরটা যে দড়িতে বাঁধা থাকে, সেই দড়ি বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছে একটা ইঁদুর। লালজানের দোকানের বন্ধ পাল্লায় সাঁটা মেয়েমানুষটা ইঁদুরের খেলা দেখে হাসছে। গন্ধেশ্বরী ভান্ডারের সামনে ছড়ানো-ছিটানো ডাল-জিরে-ধনে কবেই সাফ হয়ে গেছে। রসুনের খোসা নিয়ে খেলছে একটা সরু ইঁদুর। লালার রেশন থেকে ক্যাশমেমোর বান্ডিল টেনে বের করেছে দুটো ইঁদুর। এখনও কুটিকুটি করছে। দত্তবাবুর ডাক্তারখানায় আরও একটা গর্ত করে ফেলেছে। লালবাড়ির নর্দমার ভাঙা নলের বাইরে ঝুলছে একটা লেজ। রফিকের সোনারুপোর দোকানের সামনে নালায় ইঁদুররা সাধারণত যায় না। পেচ্ছাপের গলির মাটি দাপিয়ে বেরিয়ে এল এক গাড়ি ইঁদুর। তাদের স্যাঁতসেঁতে গা রোদে র‍্যাফের উর্দির মতো লাগে। সেইসব খাম্বাজ ইঁদুরের কাছে বাকিদের নেংটি মনে হয়। ছেদিলালের তক্তপোশের নীচে অন্ধকারে শুয়ে বেজি দেখে, চ্যাটচেটে রোদ্দুরে ভারী ইঁদুররা কুচকাওয়াজ করছে। তাদের মাথায় টুপি, কোমরে বেল্ট, পায়ে শাসন। কোনো গোলমাল তারা বরদাস্ত করবে না। তাদের প্রথম কথা শান্তি, শেষ কথা শান্তি। তারা সবাই একরকম দেখতে, একরকম কথা বলে। মহিম মুদির দোকান থেকে লালুর সস্তা সাবান-সেন্টের গুমটি পর্যন্ত, তারপরই বড়োরাস্তা, ইঁদুরের দল কুচকাওয়াজ করে। দলছুট কোনো খাম্বাজ এক ফাঁকে শাঁখা-পরা একটা হাত পেচ্ছাপের গলিতে টেনে নিয়ে যায়। লালবাড়ির নর্দমার ভাঙা নল থেকে খসে পড়ে রক্তাক্ত ইঁদুর।

       কাঁকড়ার মতো দু-আঙুলওলা হাতটা ছেলের মাথায় মুখে পাগলের মতো বোলাতে বোলাতে বেজির মা কাঁদছিল আর বলছিল, তুই পালা। এখান থেকে পালা। সোনা আমার, ঠাকুর আমার। অনেক অনেক দূরে পালিয়ে যা। ওগো, তোমার দুটো পায়ে পড়ি, ছেলেটাকে নদী পার করে দাও। ও যে পথ চেনে না। কোন পথ ধরে রিয়াজুলের বাপের হাতে পড়বে! ঘাটের মাঝিগুলো ধরিয়ে দেবে! অনেক দূরে যা মানিক আমার, ধন আমার। মায়ের রক্ত থেকে দূরে যা। বলবি না তোর মা আছে, বাপ আছে, ঘর আছে। শেষরাতে স্টেশনে পৌঁছে বেজির বাবা বলে, যাও তবে পুত্র মোর যুদ্ধের তরে। সম্মুখে দ্যাখো ওই শক্রর পতাকা উড়িতেছে সমুদ্রবাতাসে। বীর পুত্র মম, সাহসে স্থির হও, অস্ত্রে দাও মন, তব সমরকৌশলে মুক্ত হোক মাতৃভূমি, নিজের শোণিত রক্তে আনো স্বাধীনতা। রত্নগর্ভা জননীর হে বীর সন্তান, পামর এ পিতার লহ আশীর্বাদ।

        ঘুরঘুট অন্ধকারে কপাল-চোখো ট্রেন এল। তার অন্ধকার শরীরে মিলিয়ে গেল বেজি। অন্ধকারে কি বাতাস থাকে না? শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। দম বন্ধ হয়ে আসে। নদীর জলে বাতাস থাকে না? ছইয়ের ভেতর বাতাস থাকে না? তারার আকাশে বাতাস থাকে না? তবু বাবা সঙ্গে ছিল। ঝোপঝাড়ের ফাঁকে ফাঁকে পালাতে পালাতে বাবা বলে, ফাঁসি দিলে দম আটকে যায়। জিভটা বেরিয়ে ঝুলতে থাকে। গর্ত থেকে চোখ বেরিয়ে যায়। অ্যা-অ্যা-অ্যা-অ্যা। গলার ভেতরে কফের ঘর্ঘরে সেই আর্তনাদ বেজিকে কুঁকড়ে দেয়।

      অন্ধকারে একটা হাত বেজিকে টেনে নেয়। খোকা, কোথায় যাচ্ছ? বাড়ি কোথা? কী নাম? মা বকেছে? বাবা বকেছে? বাবা-মা নাই? আহা, এটুকু ছেলের মা-বাবা নাই। তুমি আমার কাছে থাকো। রাজা-রানির গল্প বলব, ভূতের গল্প বলব, চোর-ডাকাতের গল্প বলব। চিকেন রোল দোব, আঙ্কল চিপস্‌ দোব, কোকাকোলা দোব। এখন এটা খাও। খাও। আমি সাধুবাবা। আমাকে সবাই ডরায়। তোমার কোনো ভয় নাই। আমার কাছে থাকবে। তোমার জিভ আছে। খেলা করো। চুষে চুষে খেলা করো। লোকটা বেজির মাথা খাবলে ধরে টেনে নামিয়ে মুখে পুরে দিতে চাইছে নিজের পেচ্ছাপের নলটা। বমির ধাক্কায় বেজির পেট থেকে সব কিছু বেরিয়ে আসতে চায়। বেজি গোঙায়।

তক্তপোশের ওপর থেকে গুলে জিজ্ঞেস করে, কী হল? ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?

বেজি জবাব দেয় না। সেই সাধুবাবাটা আবার এসেছে, যে তাকে ঘরে আটকে রাখে, ঠোঙায় ভাঁড়ে নানারকম খাবার নিয়ে আসে, চোর-ডাকাতের গল্প বলে নিজের সাহস ফাটায়, আর... বেজির তখন আর বমি হয় না। তবু সে পালায়।

       ভবাসিপাই তোকে নিমাইবাবুর কথা বলল?

       না।

      পোস্টার মেরেছে। আজ বটতলায় মিটিন। নিমাইবাবুর বউকে আনবে। নিজেরাই শালা ঝেড়ে দিল। এখন কালপিট খুঁজছে। দুটো দিন সামলে থাকিস। ওদিকে ডাকলে যাবি না।

তোর বাড়ি কুসুমপুর? বিজয় লোধকে চিনিস? তোর মতো বয়স। তোর মতো দেখতে। বাপের নাম গগন। সাধুবাবা হয়তো জানতে পেরেছিল। ছেলেটা যে ভয়ে সিঁটিয়ে যায় হয়তো টের পেত। সাধুবাবা বলত, তোর কোনো ভয় নাই। আমার কাছে থাক। আমি থাকতে তোর গায়ে হাত দেয় কে?

বেজিকে কটা দিন কোথাও পাঠানোর কথা ভাবছিল গুলে। কিন্তু কোথায় পাঠাবে? তাছাড়া, বেজি হাওয়া হলে পুলিশ গুলেকে তুলতে পারে। গুলে জানে না, পুলিশ কাকে টার্গেট করেছে। সেরকম হলে বেজিকে ফাঁসিয়ে দেবে গুলে। বেজির খুনের রেকর্ড আছে। আর কিচ্ছু লাগবে না। নিমাইবাবুর মার্ডার কেসের খুনি ৪৮ ঘন্টায় গ্রেপ্তার। রিয়াজুলের কেস সঙ্গে লাগিয়ে এক টিলে দু-পাখি মারার পুলিশি বাতেলা চলবে কিছুদিন। বেজি, তুই কোথায় যাবি? গুলের মাথাটা মাঝে-মধ্যে ম্যানহোলের মতো জ্যাম খেয়ে যায়।

ওপরে শুবি? আয়।

      গুলের ডাক বেজির বুকের ভেতর ঠাকুর-দেবতার গলার মতো সাউন্ড করতে থাকে। ডাকলে, গুলেদা?

ওপরে আয়।

      বেজি তো রোজ ওপরে গুলের পাশটিতে এট্টুকুন জায়গায় শুতে চায়। তক্তপোশের নীচে ভয়ের গন্ধ। ছেদিলালের উনুনের পোড়া কয়লার ডাঁই, ময়লা ন্যাতাকানি, নর্দমার জলে ভেজা ঠান্ডা মাটিতে, বেজির মনে হয়, ইঁদুরের গর্তে শুয়ে আছে। মা-র তিনটে আঙুল খেয়েছিল। বেজিকে কোনদিন পুরোটা খেয়ে ফেলবে। তোমার ঘেন্না করবে না?

        না।

      বেজি যে কাজটা করে তা ঘেন্নারই কাজ। ঘেন্নায় বেজি নিজে অনেক রাতে গলা দিয়ে খাবার নামাতে পারে না। গুলে একপাশে সরে জায়গা করে দেয়। বেজি প্যান্ট গেঞ্জি ভালো করে ঝেড়ে নেয়।

        ভবা তোকে নিমাইবাবুর মার্ডারের কথা বলল?

        বলেনি তো!

        তুই যে বললি, ভয় দেখাল।

        ৩০২ করে দেবে বলেছে। শালা এক নম্বর হারামি।

        চেপে যা। পুলিশ এখন যা বলবে, তাই করবি।

        গুলেদা!

        বল - গুলে পাশ ফিরে বেজির গায়ে হাত রাখে।

        তুমি কত ভালো।

        নিমাইবাবু একবার তোকে লালী সিংয়ের ঘর থেকে তুলল মনে আছে?

        খুব মারল নোংরা কাজ করি বলে। তা আমি বললাম, ভালো কাজ দাও।

        তোকে দৌলত মিস্ত্রির প্যাকিনের কাজে লাগাল। খাটনির চোটে পালিয়ে এলি।

        খাটনি না, গুলেদা। দৌলত মিস্ত্রি পেরেক লাগানো চেলা কাঠ দিয়ে মারে।

      দৌলত বলেছে, এসব মিছে কথা। যে ছেলে চুষে রোজগার শিখেছে, সে খেটে খাবে কেন? নিমাইবাবু তোর কথা বিশ্বাস করেনি।

         সন্দ করত।

         এখানে সেখানে খোঁজখবর নিত।

         তালে নিমাইবাবু খুন হল ভালোই হল, কী বলো গুলেদা?

         সাতাশ নম্বর বাড়ির মাথা ডিঙিয়ে ছেদিলালের চালায় রোদ পড়েছে। এরপর আস্তে আস্তে নেমে আসবে তক্তপোশে। বড়োরাস্তায় গাড়ির শব্দে মানুষের গন্ধ লেগেছে। নিশিডাকের মতো হাওয়ায় হারিয়ে যায় না। গঙ্গা থেকে যে বাতাস ঠান্ডা নিয়ে আসছিল, সেটা তেতে উঠছে। মরা ইঁদুরটার জন্যে দু-দশটা কাক আজ বেশি এসেছিল পাড়ায়। অন্যদিন অভ্যাসবশত যারা ডেকে উড়ে যায়, ইঁদুরদের জন্য যারা এ পাড়ায় পাত পায় না, আজ তারা প্রতিশোধ খুঁজে পেয়ে আরও কয়েকজনকে ডেকে এনেছিল।

        গুলেদা, গানটা আর-একবার ধরো না। ভারত আবার...

        সেই ফাংশানটার কথা মনে আছে তোর? ‘সরসতী’ পুজোর পর বড়োরাস্তায় হোলনাইট হল।

        থাকবে না! মিস লায়লা নাইট।

        একটা মেয়েই জমিয়ে দিল।

        পিঠটা পুরো খালি। গলা আর মাজায় ফটকামতন গেরো।

        গাণ্ডুরিয়াদের ছেলেটা টাকা দিল।

        দিল কী গো, নিজে হাতে মেয়েটার বুকে সেপ্টিপিন দিয়ে একশো টাকার নোটগুলো ইচ্ছেমতন আটকে দিচ্ছিল।

        গাণ্ডুরিয়াদের অনেক টাকা।

        চোলি কে পিছে কা হ্যায়। সায়া তুলে ন্যাংটো দেখানো কি নোংরা নয়?

        তুই দেখলি, তিনটে শুয়োর স্টেজে উঠল।

        তিনটে নয়, পাঁচটা।

        ওরা ড্যান্স করল।

        শুধু ড্যান্স! হিঁকি হিঁকি আওয়াজ!

        ফাংশান জমে রাবড়ি।

        ধাঙড়পট্টির লোকজন ডান্ডা নিয়ে ছুটে এল। শুয়োর চোট গেলে হেভি লস। চারটা ধাড়ি, একটা বাচ্চা। বাচ্চা শুয়োরটা একবার হেলেন, একবার প্রভুদেবা।

        হাঙ্গামা হল।

       ওরাও ডান্ডা ড্যান্স লাগাল। মাল খেয়ে চুর। শরীর হড়কে হড়কে যায়। তবু কী নাচ শালাদের যেন মরণ লেগেছে!

        গুলে বেজির মাথায় হাত বোলায়। তোর কথা কেউ বিশ্বাস করে না।

        না করুক। তুমি তো করো।

        তুই রিয়াজুলকে খুন করিসনি। সাধুবাবা তোকে নোংরা কাজ শিখিয়েছে। কাঁটাপুকুর মালিপাড়ার         লোকগুলো তোকে টেনে নিয়ে যায়। দৌলত তোকে পেরেক লাগানো কাঠ দিয়ে মারে। ভবা সিপাই ছেত্রীদের ভাঙা বাড়িতে নিয়ে যায়। তোর দোষ নেই। এ কথা কেউ বিশ্বাস করে না।

        তুমি করো না গুলেদা?

      গুলের জানাতে অসুবিধা হয় না যে তার করা না-করায় কিছু যায় আসে না। বেজিকে পাশ ফিরিয়ে দেয়। ঘুমোতে বলে। গুলে গান ধরে।

      বেজি দেখে, ভবা সিপাই তাকে ডাকছে। পকেট থেকে বড়ো পাত্তি বের করে দোলাচ্ছে। মনোহরের দোকানে আঙুরের রস খাচ্ছে ভবা। রস পেষাইয়ের মেশিনের গায়ে মোটা মতন ধূপ জ্বালায় মনোহর। বোঁটকা গন্ধ ছাড়ে। ভবার পকেটে সবসময় মুঠো মুঠো খুচরো থাকে। হাঁটলে শব্দ হয়। হাসলে শব্দ হয়। বসলে শব্দ হয়। পাশ ফিরলে শব্দ হয়। ভবা বলল, তুই শালা মুসলমানের ঘর করেছিস। তোর জাত গেছে, ধম্মো গেছে। তবু আমি তোকে ঘরে তুলেছি। তোকে ভালোবাসি বলেই তো। বেজির চুলের ভেতর ভবার আঙুল খেলা করে। ভবার ভুঁড়ির এক বেঘৎ নীচে নেমে গেছে বেল্ট। চাকতি লাগানো টুপি আটকে আছে কাঁধের আংটায়। গেঞ্জিটা খুলে ফেল। কাঁচা পাইখানার গন্ধ ছাড়ছে। কাল দুটো সিঙ্গাপুরের মাল দেব। জায়গাটা ভালো না। পাঁচিলের ধারে চল। শ্মশানে কতরকম বডি আসে। বেজিকে চুমু খায় ভবা। ঠোঁট আলতো কামড়ে দেয়। শিরদাঁড়ার দু-পাশ দু-হাত দিয়ে ঘষতে থাকে। বেজির ভয় করে। ভবা সিপাই শক্ত হচ্ছে। ওর হাত-পায়ে জোর বাড়ছে। ছেত্রীদের ভাঙা বাড়ির মেঝেয় সাপের বাসা। দেওয়ালে হাঁটে চন্দ্রবোড়া। বেজি পালাতে চায়। ভবা বেজির বুকে চুমু খেতে খেতে লালা মাখিয়ে দেয়। ভবার ঠোঁট বেজির শরীরে হাঁটে। বেজির প্যান্ট খুলে দু-হাতে পাছা টিপে ধরে। একটা হাত লিঙ্গ নেড়ে বেজির মাথায় উঠে আসে। মার্ডার কেসে ফাঁসলে জীবন বরবাদ, বলে ভবা আঙুলের চাপে বেল্ট খুলে দিলে ঝমঝমিয়ে প্যান্ট নেমে যায়। ঘাড় ধরে বেজির মুখ নামিয়ে ভাঙা পাঁচিলে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, নে, তাড়াতাড়ি কর। বেজি দ্যাখে, চন্দ্রবোড়া ফণা তুলেছে। ভবার হাত সাঁড়াশির মতো বেজির ঘাড় আটকে রেখেছে। নিজের শরীর বেঁকিয়ে ভবা সাপ ও বেজির দূরত্ব ঘুচিয়ে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে। তোর কোনো ভয় নেই। তুই আমার ঘর করিস। কোনো হারামির কাছে তুমি যাবে না। বেজি খপ্‌ করে সাপটাকে মুখে পুরে নেয়। যত জোরে পারে কামড়ে ধরে। সে সাপটাকে গর্ত থেকে বের করতে হ্যাঁচকা টান মারতে থাকে। সাপের হাত-পা লাফায়।

        ছাড়, বেজি। চিৎকার করে গুলে বেজির মাথা তক্তপোশে ঠুকে দেয়। বেজির দাঁত থেকে খসে যায় গুলের শরীর।

bottom of page