top of page

তুমি সেই চোখ দুটি নাও । শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

Writer's picture: manikarnikapubmanikarnikapub

 

মাঝে মাঝে খুব আনন্দ হয়। অকারণেই। দূরান্তরের হু হু বাতাসের মতো সে প্রবেশ করে অস্তিত্বে, দিনে দিনে জমে ওঠা ধুলোবালি সরিয়ে নিয়ে যায়। ক্রমশ ক্ষীয়মাণ সুগন্ধের মতো তার রেশ ধরে বসে থাকি বহুক্ষণ। শরীরে সন্ধ্যা নামে, বুড়ু পরিপূর্ণ করে তিনবার শাঁখ বাজায়। চারধারে কত খেলা শেষ হয়ে আসে।

আমার বড়ো আনন্দে থাকতে ইচ্ছে করে। সুখে নয়, সম্পন্নতায় নয়, আনন্দে। নিঃশব্দ শান্ত আনন্দে, যেন এক অগাধ সমুদ্রে ভেসে থাকা। ঈষৎ দুর্বল শরীরের এই নির্জন পৃথিবীবাসে বেশ সাড়া দিয়ে আঘাত আসে, আসে অপমান। আর প্রাথমিক অভিঘাত থিতিয়ে গেলে চেয়ে দেখি তাকিয়ে থাকার মতো সে এক দুঃখ ক্রমশ খোলস ছাড়ছে। সে দুঃখের গলায় প্রাচীন ধাতুর মতো শীতল ও জাগ্রত ললন্তিকা। আকস্মিকই নিজেকে নির্জিত মনে হয়। Alone থেকে মনে হয় Left alone. কিন্তু দোষ দেব কাকে?

সদ্য পড়লাম নিছক এক্সপেরিমেন্টেশনের জন্য তিনটি ডলফিনের সঙ্গে নিবিড় মেলামেশা শুরু করেছিলেন এক তরুণী। উদ্দেশ্য ছিল যৌথতার মধ্যে এসে পড়া ডলফিনদের স্বভাব নথিবদ্ধ করা। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তিনজনকে ত্যাগ করেন তিনি। তার কিছুদিন পরেই দেখা যায় পিটার নামের সবচেয়ে ছটফটে আর মিশুকে ডলফিনের দেহটা ভেসে আছে জলে। এই বিচ্ছেদ সে সহ্য করতে পারেনি।

খবরটা পড়া ইস্তক অদ্ভুত এক সাড়া ছড়িয়ে পড়ছে শরীরময়। ওই একদা ছটফটে ডলফিন পিটার প্রবেশ করছে আমার মধ্যে। ত্বক ভিজে যাচ্ছে, ঠিক যেন অবিরাম জলে ভিজে ভিজে ফুটে থাকা একাকী নয়নতারা ফুল, আকাশ জোড়া ঢেউয়ের মতো এক ব্যথা অধিকার করছে আমার সমস্ত বোধ; অসামান্য এক অর্থহীনতার ভেতর দিয়ে পার হয়ে চলেছে সকাল-অপরাহ্ন-সন্ধ্যা-রাত্রি। কখনও সখনও খুঁজে খুঁজে পড়ে নিচ্ছি ডলফিনদের কথা। তারা এমনিতে বেশ গপ্পোবাজ হলেও, সমুদ্রতলে অত্যধিক শব্দ হলে ওদের কষ্ট হয়। নৌচলাচল, বা ভূত্বকবিদ্যার পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে জীবনপ্রবাহ ব্যাহত হয় ওদের। ঘুমের মধ্যে টের পাচ্ছি আমার গা রবারের মতো, মুখটা অনেক বড়ো, দুটি পা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অখণ্ড পাখনা। আর রাত্রির গাঢ় আলোয়ান ভেঙে এগিয়ে আসছে এক মূর্তি, নিজের পড়াশোনার জন্য কিছুকাল আমার সঙ্গে যৌথ দিন কাটাবে সে।

তাকে কি প্রত্যাখ্যান করব?

এইসবই কি খুব বিষণ্ণ কথা হয়ে উঠল অজান্তেই? তবে যে বলেছিলাম আনন্দে থাকতে বড়ো ইচ্ছে করে। স্ববিরোধ?

আসলে এই সমস্ত দূরত্বের মধ্যে, অবহেলার মধ্যে এসে দাঁড়ান এক দেবতা। তাঁর পা মাটি স্পর্শ করে না। তার উত্তরীয়ে কশিদা করা রয়েছে গোধূলি আকাশের এলোমেলো মেঘরেখা। তাঁর দুটি চোখ ভিক্ষারহিত। তিনি পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন আমার দিকে। শুধুই চেয়ে থাকেন স্মিতমুখ। তিনি কৃতজ্ঞতা। জীবনের প্রতি সকৃতজ্ঞ ওই চাহনি দিয়ে সিঞ্চিত করেন আমাকে, এক বোধহীন ডলফিনকে। তিনি শব্দহীন হয়েই বলে যান, জীবনের প্রতি চেয়ে দেখবার যতকটি চোখ, তাদের ভেতর কৃতজ্ঞতার চোখ দুটি সবচেয়ে সুন্দর। তুমি সেই চোখ দুটি নাও।

আমি নিতে চাই। অকৃপণ আনন্দে ভরে ওঠে চারধার। আমার হাত কাঁপে। আমার বীর্যাধার স্পন্দিত হয়। আমার শ্বাস পুলকে রুদ্ধ হয়ে আসে। আমি মানুষ থেকে মাছ, মাছ থেকে মাটি, মাটি থেকে আকাশের মেঘ, মেঘ থেকে ভাঙা কাঠচাপা ডাল হয়ে ঘুরি। একসময় হাঁটু গেড়ে বসে হাত দুটি বাড়াই।

নিজেকে নিঃস্ব করে তিনি কখন যে চলে যান…

 

ছবি : শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়

18 views0 comments

ความคิดเห็น


1111-removebg-preview.png

গল্পের বই উপহার পেতে কে না চায়!
এখনই Subscribe  করুন,
আর পেয়ে যান আপনার প্রথম বইটির মূদ্রিত মূল্যের ওপর ২৫% ছাড় 

Thanks for being our family!

  • Youtube
  • pngwing.com
  • 1111
  • tumblr
  • Instagram LOGO PNG2

+91 8240333741

Magic Seeds Books LLP

119 Abhay Patuli Lane, Shuksanatantala, Chandannagar 712136

Email us at: manikarnika.pub@gmail.com

For any other queries feel free to reach us at: 8240333741(Call/Whatsapp)

©2022 by Manikarnika Prakashani.

bottom of page