আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী । আবীর ভট্টাচার্য্য
- manikarnikapub
- Aug 26, 2022
- 4 min read

বাকুল পাশের সর্ষেখেতের আলে একা একাই বসেছিল মধ্যবয়সিনী সুরবালা। এমন সব উত্তুরে হাওয়ায় শীতের রোদ কেমন যেন মনকেমনিয়া; কবেকার কী যেন সব ভুলে যাওয়া কথা থেকে থেকেই মনে পড়ায়। আশপাশ থেকে নতুন ধান তোলার গন্ধ উঠছে। অন্যান্য বছরে এইসময় ও নিজে যায় গাঁয়ের আরও পাঁচটা মেয়ের সাথে ধান পাছড়ানোর কাজে। সকাল সকাল রান্নাবান্না, ঘরকন্না সেরে যেতে হয়। এবছর এখনও যায়নি।
বিয়ে হয়েছিল সেই কবে! বিয়ের বছর খানেকের মধ্যেই বর ছেড়ে গেছে। ছোটো থেকেই নাকি মানুষটি স্বভাব-বাউল। সুরবালার ঢলোঢলো লাবণ্য বছরখানেকের বেশি তাই বাঁধতে পারেনি তাকে।
ওদিকে বাপের ঘরের অবস্থা ছিলো তথৈবচ। এ পোড়া দেশে মেয়েরা তো দায়। বর ছেড়ে গেলেও তাই বাপের ঘরে জায়গা হয় না তার।
শাউড়ীর গঞ্জনা সয়েও অগত্যা থাকতে হয়েছিল এখানেই। এর-ওর ঘরে সময়ে-অসময়ে ঠিকেকাজ করে, হাঁসমুরগি পুষে যেমন তেমন করে কেটে যেত দুজনের জীবন। শুধু মাঝেমধ্যে রাতবিরেতে যখন আচমকা ঘুম ভেঙে যেত, কী যেন এক অদ্ভুত শৈত্য সারা শরীরে নেমে আসত। কাকে যেন মনে পড়ত তার। তবু দিন কেটে যেত অভাবে, দৈন্যে। আর অর্থ বা স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে আত্মীয়স্বজন কেউই থাকে না। একথা কে না জানে!
যাহোক, এভাবেই সকাল আসত, রাত পেরোত, দিনগত পাপক্ষয়। অবশ্য তা নিয়ে তাদের শাউড়ী-বৌয়ের খেদও ছিল না তেমন। পাশাপাশি থাকতে থাকতে তারা দুজনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল সে জীবনে। তবে কয়দিন আগে শাউড়ীকে তুলে নিল ঠাকুর। তারপর থেকেই ভীষণ একা হয়ে পড়েছে ও। কাজে আগ্রহ নেই। বাইরেও বের হয় না।
রাতে পাশের বাড়ির বুড়িমাসি এসে শোয়। ও ডাকেনি, বুড়ি নিজেই এসেছে। প্রতিদিনই কিছু চিঁড়ে, মুড়ি নিয়ে এসে খাওয়ায়। পুরোনো দিনের গল্প বলে। খানিক ভালো লাগে বইকি!
আজ কী মনে হতে সকালবেলা বেশ কয়েকদিন পরে, উনুনে গোবর লেপে কাঠকুটি জুটিয়ে ভাঁড়ার হাতড়ে কিছু পড়ে থাকা ক্ষুদচাল আর ডাল হাঁড়িতে বসিয়ে দিয়েছে সুরবালা। পুকুরধারের গাছ থেকে একমুঠো গন্ধপাতা তুলে এনে নুন, হলুদ আর বেশি করে জল দিয়ে উনুনে আগুন দিতেই কেন যেন শাউড়ীর জন্য বড্ড কান্না পেল তার। গাল দিত বুড়ি দিনরাত, তবু আগলে তো রেখেছে এতোদিন। তাড়িয়ে তো দেয়নি!
তা নাহলে হয়তো শেয়াল-কুকুরে ছিঁড়ে খেত স্বামী ছেড়ে যাওয়া সোমত্ত বয়সী বউকে! আহা! বিনে চিকিৎসায় বড়ো কষ্টে মরল বুড়ি। একবিন্দু ওষুধও মুখে দিতে পারেনি সে।
একখানি অসহায়, কৃতজ্ঞ দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক চিরে। সঙ্গে এলোমেলো আরও কতো কী চিন্তা! এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে বেড়ার পাশে এসে বসেছে, মনে নেই তার। হুঁশ ফিরল খঞ্জনী সহ গানের আওয়াজে। কে এক অচিন বৈরাগী ভিক্ষে নিতে এসেছে তার দুয়ারে। এ অঞ্চলে সবাই জানে তাদের অবস্থা। ভিখারি, বৈরাগী কেউ আসে না এই বাকুলে।
এ কেমন মানুষ, এই অবেলায় যে এল তার দুয়ারে!
অবাক হয়ে পরনের ছেঁড়া শাড়িটির আঁচল মাথায় টেনে সেকথাই বলতে এগিয়ে এল সুরবালা।
সামনে আসতেই গান বন্ধ করে বৈরাগী বললে, বড়ো খিদে পেয়েছে,অন্নভিক্ষা চাই।
ভীষণ লজ্জা পেয়ে সুরবালা বলে উঠল, দোষ নিও না ঠাকুর, বড়ো গরীব আমরা! কী যে দিই তোমায়!
পরমান্নের গন্ধে চারিদিক ম-ম করছে, আর তুমি বলছো…
মনে পড়ল, ভাগ্যিস আজ দুটি বসিয়েছিলো উনুনে, তা নইলে এ অবেলায় কেউ খেতে চাইলেও কিছুই দিতে পারত না। পাপ হতো তার! অতিথি নারায়ণ…
তাড়াতাড়ি শতছিন্ন তালপাতার চাটুইখানি পেতে দিল মাটির দাওয়ায়। ধূলিপায়ে বসল বৈরাগী। বিব্রত, সঙ্কুচিত সুরবালা রান্নাশালে গিয়ে খুঁজতে লাগল আর কিছু আছে কিনা! এমন বিপদে ও বোধহয় জীবনে প্রথমবার! কেউ কখনও কিছু খেতে চায়নি তার হাতে, কখনও না…
কে এক অচিন বৈরাগী এসে এই ভরদুপুরে চাইল অন্নভোগ! কী দেবে সে তাকে! আতিপাতি করে খুঁজেও পেল না কিছু। এমনকী তেলের শিশিতে একফোঁটা তেলও নেই।
অগত্যা কি আর করা যায়, বহুদিন আগে তুলে রাখা শাউড়ীর ব্যাটার কাঁসার থালাখান বার করল খাটের তলা থেকে। শত অভাবেও বিক্কিরি করেনি এটি। তার বিধবা মা বিয়ের সময় এটুকুই দিয়েছিল তাকে। যতদিন মানুষটা ঘরে ছিল; ওর ছিল। ও এতেই বেড়ে দিত গরম ভাত। হাপুস হুপুস খেত মানুষটা, এখনও মনে আছে।
আজ অনেক দিন পরে থালাটি মেজে আনল পুকুরঘাট থেকে। ঢেলে দিল তাতে গরম খিচুড়ি। মাথায় ঘোমটা তুলে নিয়ে এল বৈরাগীর সামনে।
থালা নামিয়ে একছুটে প্লাস্টিকের শিশি ভরে জল এনে দিল হাত-মুখ ধোওয়ার জন্য। হাত ধুয়ে খেতে বসল অতিথি। একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল সুরবালা। অবিকল এক ভঙ্গিতে হুসহাস করে খাচ্ছে মানুষটা। নাকি খিদে পেলে পুরুষ মানুষেরা সবাই এভাবেই খায়!
ভাবতে ভাবতে আরও বাকি যেটুকু ছিল হাঁড়িতে, এনে দিল পাতে। আপত্তি করল না বৈরাগী।
চেটেপুটে খেয়ে একখানি তৃপ্তির ঢেকুর দিল মানুষটি, এগিয়ে গেলে হাত ধুতে।
এবার আর সঙ্কোচ না করে, আঁচাবার জলটুকু নিজে হাতেই ঢেলে দিল সুরবালা। হোক না খুদকুটি অন্ন, তবু ক্ষুধার্তকে তৃপ্তি দিয়েছে তার অন্নভোগ। কী এক অপরিমেয় সম্ভ্রান্তি ঘিরে ধরেছে তাকে।
এঁটোকুটি তুলে ছাঁচতলায় লাগানো পানলতার একটি নধর পাতা তুলে শাউড়ীর বহুসাধে তুলে রাখা জনকপুরী খয়ের আর চন্দনীগুয়া দিয়ে একখিলি পান সেজে ধরল হাতের পাতায়। তাই মেলে ধরল বৈরাগীর পানে। একবারও তার দিকে না তাকিয়ে তুলে নিল পান, হাত তুলে আশীর্বাদের ভঙ্গিতে ওর শিয়রে একটুখানি স্পর্শ দিয়ে ঝোলা তুলে বেরিয়ে গেল বৈরাগী!
একটু, একটুই স্পর্শ; নির্ভেজাল সামান্য সাধারণ স্পর্শ। আর তাতেই এতদিন পরেও শিউরে উঠল প্রোষিতভর্তিকার শরীর! অবশ ও চলচ্ছক্তিহীন নারী ভাবতে লাগল, কবে ওকে ছেড়ে গিয়েছে ওর মানুষটা। এরমধ্যে কারণে, অকারণে কতবার কত পুরুষ ছুঁয়েছে তাকে। কখনও এমনটা হয়নি তো! কী এক অনাস্বাদিত সুখবোধ অথবা পাপবোধে ও চলল পুকুরঘাটে, স্নান করতে।
ভরাদুপুরের রোদ তেজি মরদটির মতো বাঁশপাতার ফাঁক গলে অযুতখন্ডে ভেঙে ভেঙে সঙ্গমপূর্ব রতিক্রিয়ায় রত। কী যেন এক অসীম তৃষায় নারীও নেমে এল জল-আলিঙ্গনে। দুচোখের নোনতা দাহ ততক্ষণে আগুন ধরিয়েছে বুকে। এই শীতল জল ছাড়া শান্তি দেবে কে!
ক্রমে দাহ নিবৃত্তি হয়, ভেসে আসে দূর থেকে গান।
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়…
শতছিন্ন কস্তাপেড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দুই ভরন্ত স্তনপুষ্পের অতলে জাগরূক কোকনদটি ফুটে উঠতে থাকে পরম পরিতৃপ্তির বৈভবে। কী এক অপরূপ মিলনতৃষা অথবা বিরহ-অভিসারে কানে বাজে- ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি…’
ছবি : হেমেন মজুমদার
Mounjaro Side Effects: What You Need to Know
Mounjaro, a weight loss injection containing tirzepatide, can be effective for managing obesity and type 2 diabetes. However, it may cause side effects, particularly when treatment begins. Common side effects include nausea, vomiting, diarrhoea, constipation, decreased appetite, and stomach pain. Some people may also experience fatigue or indigestion. These symptoms usually improve as the body adjusts. Rare but serious side effects can include pancreatitis, allergic reactions, or low blood sugar, especially when combined with other diabetes medications. Always consult your healthcare provider before starting Mounjaro side effects and report any severe or persistent symptoms for proper medical guidance.