top of page

অস্তহীন পথ আমাকে ডাকে । সর্বজিৎ সরকার

Updated: Aug 10, 2022


 

শীতকাল এলে বিষণ্ণতা এসে জমা হয় বাড়ির নয়নতারাদের পাতায় পাতায়। ছুটির দুপুরবেলা কাজ থাকে না কোনো। চারদিকের কোলাহল কমে আসে। খাওয়া-দাওয়া সেরে নিশ্চিন্তে ভাতঘুম দেয় সবাই। সেসময় একা একা ছাদে গিয়ে দাঁড়াই। ভেঙে যাওয়া আলো গায়ে এসে লাগে। সে আলোয় জোর নেই- কোমল স্পর্শ শুধু- আদরের মায়া এঁকে যায় একটার পর একটা ছাদে। চলে যাওয়ার আগে তীব্রতা মরে আসে, ম্রিয়মাণ হয় আলো। মাঝে মাঝে হাওয়া এসে লাগে বাড়ি-ঘেঁষা সুপুরিগাছের পাতায়। খসখস শব্দ হয়। দূর থেকে ভেসে আসে ফেরিওলার হাঁক- মনে হয় সে আমার খুব কাছেই আছে। কিন্তু সে দেখাটি দেয় না। আবার দূরে কোথাও মিলিয়ে যায়।

এই হাঁক যেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন। স্মৃতির ভিতর আসে- মনে হয় এই বুঝি দাঁড়াবে সামনে এসে। কথা কইবে। জড়িয়ে ধরবে একবার। কিন্তু নাহ। আসে না… সময়ের স্রোতে কোথায় হারিয়ে যায়। এইসব ভাবছি… কানে আসে ট্রেনের হুইস্‌ল। শীতকালে অনেক দূরের আওয়াজও স্পষ্ট হয়ে আসে, ঠিক যেমনভাবে প্রখর হয়ে ওঠে শোক। চিরতরে চলে যায় কত মানুষ…বুকের ভিতর এক শূন্যস্থান ওঠে গড়ে।

হরিধ্বনির আওয়াজ শুনতে পাই। চোখে ভাসে প্রিয়জনের কান্না। গেল-হপ্তায় আমাদের ঠিক দুটো বাড়ি পরেই উঠেছিল কান্নার রোল। দশ দিনের লড়াই শেষ করে মা ফিরে যাচ্ছেন তারার দেশে। বয়স হয়েছিল পঁয়ষট্টি। নিথর শরীরটাকে জড়িয়ে চার মেয়ের বিলাপ ছড়িয়ে পড়ছিল পাড়ায়। অনেকক্ষণ। কান্নাতেও ক্লান্তি আসে। আস্তে আস্তে থেমে এল রোল। স্বর্গরথে রওনা হওয়ার আগে মায়ের বুকে অপরাজিতা ফুল রেখে দিয়েছিল তার আদরের ছোটো মেয়ে। মনে হচ্ছিল মায়ের বুকে নেমে এসেছে একখানা আস্ত আকাশ! এতটা পথ যেতে আর তার কষ্ট হবে না!

আজ সেই বাড়িটাও শান্ত। অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলাম তার দিকে। নাহ! কেমন প্রাণহীন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শীতের দুপুরের সকল বাড়িঘর কেমন উদাসীন হয়ে তাকিয়ে থাকে আকাশের উদ্দেশে। ধীরে ধীরে মরে আসছে আলো। মাথার ওপর দিয়ে পাখির দল ফিরছে বাসায়। ওরাও সবাই ছন্নছাড়া। কেউ কেউ দল ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও, কেউ আবার আগেই ফিরে আসছে ঘরে। এত তাড়াহুড়ো, হুটোপাটি ঘরে ফেরার সময় বুঝি হয়! অথচ ভোরবেলা ওরাই কেমন শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে পড়ে কাজে। অন্ধকার নেমে আসার আগেই যে ফিরতে হবে ঘরে। পথ হারিয়ে গেলে বাসাহীন হওয়ার ভয় এসে ভারী করে তোলে ওদের পাখা। তাই এত ছন্নছাড়া। অন্ধকারের বড্ড ভয় ওদের- ঠিক আমাদের মতো! মনে পড়ে ‘রাজা’ নাটক- আলোর জন্য সুদর্শনার ব্যাকুলতা।- ‘আলো, আলো কই। এ ঘরে কি একদিনও আলো জ্বলবে না।’ অথচ অন্ধকার না থাকলে আলোকেই বা চিনব কেমন করে!

আমরা সব জানি। কিন্তু বুঝতে চাই না। অন্ধকারের কাছে যেতে চাই না কিছুতেই। সবসময় থাকতে হবে আলোর বৃত্তে। কেন না অন্ধকার এলে মানুষও পথ হারায়। দিগ্‌ভ্রষ্ট হয়। পাখিরাও তাই। মৃত্যুর পর মানুষই কি তবে পাখি হয়ে যায়?

এইসব ভাবতে ভাবতে অন্ধকার নেমে আসে। উঁচু উঁচু বাড়িগুলোয় আলো জ্বলে ওঠে। রাস্তায় আলো ফোটে। গাড়ির শব্দ কানে এসে লাগে। রিক্সা-টোটো-অটো পথে নামে। রাস্তাজুড়ে আলোর মিছিল বেরোয়। শুরু হয় মেকি আলোয় অন্ধকার ঢেকে দেওয়ার তুমুল লড়াই।

হঠাৎ টের পাই পরিচিত নাম ধরে কেউ ডাকছে। ভেঙে যায় অদ্ভুত ঘোর! মা অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে- বুঝতে পারি। ছাদ থেকে নেমে আসি।

শীতের এই উদাসীন দুপুরগুলোয় কাজ করতে মন লাগে না। কিচ্ছু করতে ইচ্ছে হয় না। কিচ্ছুটি না। সে আমায় সম্পূর্ণ অধিকার করে রাখে। গাঢ় হয়ে নেমে আসে স্মৃতিভার। মুখোমুখি বসতে চায়। একদণ্ড থাকতে চায় কাছে। এখন কি কাজ করবার সময়? ভাবি… ভাবতে ভাবতে অন্ধকার… পাখি হয়ে যাই… তাড়াহুড়ো, হুটোপাটি করে বেরিয়ে পড়ি… বাড়ি ফিরি…

তবু পথ ভুল হয়! রোজ ভুল হয়।

 

ছবি : রূপম কুমার পাল

 
 
 

1 opmerking


এমনি করেই বুঝি আমাদের রোজনামচা কারো কারো হাতে বিশেষ অনুভূতি থেকে সাধারণ অনুভূতিতে উন্নীত হয় শুধুমাত্র ধৈর্য আর অনুভবের স্পর্শ পেয়ে।

আর, সেই অনুভবই যখন উচ্চতম সত্য হয়ে ওঠে সেই মুহূর্তেই বোধ হয় অরূপ সত্য রূপ পায় শব্দে, লেখা হয় " কান্নাতেও ক্লান্তি আসে"

Like
1111-removebg-preview.png

গল্পের বই উপহার পেতে কে না চায়!
এখনই Subscribe  করুন,
আর পেয়ে যান আপনার প্রথম বইটির মূদ্রিত মূল্যের ওপর ২৫% ছাড় 

Thanks for being our family!

  • Youtube
  • pngwing.com
  • 1111
  • tumblr
  • Instagram LOGO PNG2

+91 8240333741

Magic Seeds Books LLP

119 Abhay Patuli Lane, Shuksanatantala, Chandannagar 712136

Email us at: manikarnika.pub@gmail.com

For any other queries feel free to reach us at: 8240333741(Call/Whatsapp)

©2022 by Manikarnika Prakashani.

bottom of page